কবে খুলবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান? দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা

অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রায় সব কিছুই স্বাভাবিক হচ্ছে, কিন্তু এখন্ও পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। প্রায় ৫ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সব প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে অভিভাবকরা। করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময়সীমা বাড়িয়ে আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে ঈদের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে কবে তা নিয়ে দোটানায় রয়েছেন অভিভাবকেরা। অবশ্য কিছু প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ও সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরুর পর গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে এবং সংক্রমণ এড়াতে ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কয়েক দফায় ছুটি বাড়িয়ে তা করা হয়েছে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।
চলতি মাসের শুরু দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানিয়েছিলেন, বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে কি না তা ২৫ আগস্টের পর জানা যাবে।
আর গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের সূত্রে সংশ্লিষ্টরা ভেবেছিলেন সেপ্টম্বরেই হয়তো খুলে দেয়া হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে সেই আশাও প্রায় শেষ হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেনের ইঙ্গিতে।
তিনি জানিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রী কিন্তু বলেছেন যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে এখনও কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। আপনারা (সাংবাদিক) নিজেরাও বোঝেন আসলে পরিবেশ তৈরি হয়েছে কি হয়নি। সেপ্টেম্বরে খোলার মতো পরিবেশ হয়নি এখনও।
তিনি বলেন, এখনো ২০-২২ শতাংশ শনাক্ত হচ্ছে (নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার)। স্কুল খুললে অভিভাবকরা স্কুলে চলে আসবেন। তাদের আমরা ঝুঁঁকির মধ্যে ফেলব কেন? সেটা আমাদের চিন্তা করতে হবে। আমরা মনে করছি, আসলে তো এখনো পরিবেশ তৈরি হয়নি।
সচিব বলেন, পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় কিছু কিছু দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর আবার সেগুলো বন্ধ করে দিতে হয়েছে। সেজন্য আমরা মনে করছি আমাদের বাচ্চাদের ঝুঁঁকির মধ্যে না ফেলাটাই সমীচীন হবে। সেজন্য আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে দুই মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেব স্কুল কখন খোলা যায়।
জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার পর কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করা হবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সেই গাইডলাইন তৈরির কাজ শুরু করছে। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুসরণ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে দেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তের আগে সরকারকে মহামারী সংক্রমণ অনুযায়ী রেড-গ্রিন জোন ম্যাপিং করতে হবে। সারাদেশে একযোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খুলে গ্রিন জোনে আগে খোলা যেতে পারে।
দেশের বর্তমান করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পরিসংখ্যানের চিত্র বিবেচনা করে এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার আহবান জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদরা। সে আলোকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও একদফা বাড়তে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা ইঙ্গিত দিয়েছেন। খোদ শিক্ষামন্ত্রীও এ নিয়ে কথা বলেছেন। ফলে আটকে থাকা এইচএসসি পরীক্ষাও সহসাই হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহাবুব বলেন, করোনা সংক্রমণ হ্রাস না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আগের মতো ক্লাসে নেওয়া যাবে না। এখন টেলিভিশনে পাঠদান করা হচ্ছে, আমরা বাড়িতে পড়ালেখার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ার আগে কিছু নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার একটি গাইডলাইন করে দেওয়া হয়েছে। সরকারিগুলো নিজ নিজ কৌশল অবলম্বন করবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাথমিক স্তরের সাময়িক পরীক্ষা, একাদশ শ্রেণির প্রথম বর্ষ চূড়ান্ত পরীক্ষা, এইচএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনার্স, মাস্টার্সের বিভিন্ন সেমিস্টার এবং ফাইনাল পরীক্ষাও যথাসময়ে নেওয়া যায়নি। তবে সব স্তরে অনলাইন পাঠদান চলছে। স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য চালু হয়েছে রেডিও ও টেলিভিশনে পাঠদান, অনলাইন ক্লাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *