রংপুরের ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি, তীব্র খাদ্য সংকট

অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে উত্তরের তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শনিবার (১১ জুলাই) দুপুরে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। এতে করে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ১০ ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গঙ্গাচড়ার কোলকোন্দ ইউনিয়নের একটি বাঁধের ১০০ ফুট ভেঙে গেছে।
ডালিয়া ব্যারেজ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার দিনভর ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে। শুক্রবার রাতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়ার লহ্মীটারী ইউনিয়নের চর ইচলী, শংকরদহ, বাগেরহাট, জয়রাম ওঝা, চর চল্লিশাসালের প্রায় আড়াই হাজার পরিবার, কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল, মটুকপুর, কুড়িবিশ্বা বিনবিনার চরের প্রায় ১৭’শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনার চরের হুমায়ুনের বাঁধের ১০০ ফুট ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে করে ২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গজঘন্টা ইউনিয়নের ছালাপাক, জয়দেব, রাজবল্লভের কিছু অংশ নদী পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে ইউনিয়নের ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মর্ণেয়া ইউনিয়নের চর মর্ণেয়া, নীলারপার এলাকার ১ হাজার পরিবার, নোহালী ইউনিয়নের চর বাগডোহরা, চর নোহালী, বৈরাতি’র প্রায় ২ হাজার পরিবার, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের হাগুড়িয়া হাশিম, শিবদেবসহ তাম্বুলপুর ইউনিয়নের ৮টি গ্রামের প্রায় ৫’শ পরিবার পানিবন্দি হয়েছে।

কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ঢুষমারার চর, পাঞ্জরভাঙ্গা, চরগদাই, গোপিডাঙ্গা, নিজপাড়া, হরিশ্বর, কালিরহাট ও তালুক শাহবাজপুরের কিছু এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। এতে করে বালাপাড়া ইউনিয়নের প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

এছাড়া টেপামধুপুর ইউনিয়নের চরগোনাই, হরিচরন শর্মা, বুড়িরহাট, বিশ্বনাথ চর, আজমখাঁ চর, টাপুর চর, হয়বৎ খাত চরের ২ হাজার পরিবার আকস্মিক বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যায় ফসলী ক্ষেত, ঘর-বাড়ি ডুবে গেছে। অনেকে তিস্তা নদীর বাঁধে গবাদীপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যায় ঘর-বাড়ি ডুবে যাওয়ায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

গঙ্গাচড়া লহ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ্ আল হাদী বলেন, শুক্রবার রাত থেকে তিস্তায় পানি বেড়েছে। ফলে আমার ইউনিয়নের নদীর বামতীরের প্রায় সব এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব মানুষের মাঝে খাদ্য সংকট তৈরী হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য দ্রুততার সাথে খাদ্য সরবরাহের জন্য সরকারের কাছে দাবী রাখছি।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাতে তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে তা বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিস্তার পানি এখন কমছে। তবে পানি আবার বাড়তে পারে।

টেপামধুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাত থেকে নদীর পানি বাড়ছে। বৃষ্টি আর উজানের জল বাড়তে থাকলে বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে। শনিবার তার ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ীতে বানের পানি ঢুকে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। অনেকেই উচুঁ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. উলফৎ আরা বেগম বলেন, আমি নিজে সকাল থেকে পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করেছি। পানিবন্দি কেউ যেন দুর্ভোগে না পড়ে সেজন্য জনপ্রতিনিধিরাও খোঁজ খবর নিচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারিভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *