রেড জোন থেকে ইয়োলো জোনে যাতায়াত, বাড়ছে করোনার ‘দাপট’

অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ম্যাপের কথা বলে স্থানীয় প্রশাসনের ঘোষিত রেড জোনের বাসিন্দারা কোন বাধা ছাড়াই অবাধে ইয়োলো জোনে যাতায়াত করায় ক্রমেই করোনা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে সড়কপথে বরিশাল জেলার প্রবেশদ্বার গৌরনদী উপজেলা।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির গৌরনদী উপজেলার সদস্য সচিব ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাইয়্যেদ মো. আমরুল্লাহ জানান, গত ১৮ জুন থেকে স্থানীয় প্রশাসনের ঘোষিত ইয়োলো জোন গৌরনদীতে শনিবার রাত পর্যন্ত প্রায় পাঁচশ’ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে সর্বমোট ৫৬ জন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন ১৯ জন ও মারা গেছেন দুইজন।

সূত্রমতে, ইয়োলো জোন গৌরনদীর পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলাকে ওই এলাকার প্রশাসন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ম্যাপের কথা বলে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যুগের পর যুগ ধরে কালকিনি উপজেলার বৃহত একটি জনগোষ্ঠির প্রতিদিনের হাট-বাজার ও ব্যবসা বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন গৌরনদী কেন্দ্রিক। সে মতে তারা প্রতিদিন গৌরনদীতে যাতায়াত করে থাকেন। সম্প্রতি সময়ে মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার পর পুরো দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম লকডাউন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয় প্রবাসী অধ্যুষিত পুরো মাদারীপুর জেলাকে। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে যায় মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার পার্শ্ববর্তী বরিশাল জেলার প্রবেশদ্বার গৌরনদী উপজেলায়।

সূত্রে আরও জানায়, মাদারীপুর জেলাকে লকডাউন ঘোষণার পর পরই বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের নির্দেশে গৌরনদী ও কালকিনি উপজেলার প্রতিটি যোগাযোগ পথ বন্ধ করে পুলিশি পাহারা বসানো হয়। দুই উপজেলাবাসীর সহজ যোগাযোগের মাধ্যম পালরদী নদীর উপর একমাত্র টরকী বন্দর ব্রিজ দিয়ে যানবাহন ও জনসাধারণ এবং নদীর আটটি পয়েন্টের খেয়া নৌকা চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। একইসাথে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর প্রবেশদ্বার ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ড ব্রিজের ওপর ব্যারিকেট দিয়ে দিন-রাত পুলিশের চেক পোস্ট বসানো হয়েছিলো। সে সময় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কাউকেই চলাচল করতে দেয়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফলে বেশ কিছুদিন বরিশালে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিলো।

কিন্তু গত ঈদের আগে সারা দেশের লকডাউন শিথিল করার পর পুলিশ প্রশাসন তাদের চেকপোস্ট তুলে নেয়। এ ঘটনার কয়েকদিন পরেই বরিশালে হু হু করে বাড়তে থাকে করোনায় আক্রান্ত রোগির সংখ্যা। তারই ধারাবাহিকতায় গৌরনদীতে একদিনেই ১৫জন করোনা রোগি শনাক্ত হয়।

এরইমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ম্যাপ অনুযায়ী মাদারীপুর জেলা ও বরিশাল নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে করোনায় আক্রান্তের দিক বিবেচনায় বরিশালের প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা গৌরনদী উপজেলাকে ইয়োলো জোন হিসেবে চিহ্নিত করে। এরপর জেলা প্রশাসনের নির্দেশে গত ১৮ জুন গৌরনদী উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির নেতারা জরুরি বৈঠক করেন। ওইদিনই পূর্ণরায় দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী টরকী বন্দর ব্রিজ ও পালরদী নদীর আটটি পয়েন্টের খেয়া নৌকা চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে মাত্র পাঁচদিন পুলিশি পাহার বসিয়ে দুই উপজেলার সাথে যানবাহন ও জন সাধারণের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো।

রবিবার সকাল পর্যন্ত দেখা গেছে, দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী যেসবস্থানে পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছিলো তার কোথাও এখন আর পাহারা নেই। ফলে রেড জোন কালকিনির বৃহত অংশের জনগোষ্ঠি টরকী ব্রিজ দিয়ে ও খেয়া নৌকায় ইয়োলো জোন গৌরনদী এবং টরকী বন্দরে অবাধে যাতায়াত করছেন। যে কারণে আবারো করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পরার আশঙ্কা করছেন গৌরনদীবাসী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গৌরনদী উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় প্রশাসনের ঘোষিত ইয়োলো জোন গৌরনদী উপজেলার জনসাধারণের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পার্শ্ববর্তী রেড জোন মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার সীমান্তবর্তী সকল রুট বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু গৌরনদী ও টরকী বন্দরের বৃহত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও শ্রমিকের বাড়ি কালকিনির সীমান্তবর্তী এলাকায় হওয়ায় বেশ সমস্যার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুই উপজেলার সাথে যোগাযোগের বিষয়টি কৌশলে কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন বিকেল চারটার মধ্যে জরুরি সেবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যতিত সকল দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

সূত্রটি আরও জানিয়েছেন, সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো মনিটরিংয়ের জন্য জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট সর্বদা মাঠে কাজ করছেন।

প্রশাসনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ম্যাপ অনুযায়ী রেড জোন ঘোষণা করার পর করোনায় আক্রান্তর দিক বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসন ইয়োলো জোনের বিষয়টি নির্ধারণ করেছেন।

সচেতন নাগরিকদের মতে, কোন জোন ভাগ করে করোনার সংক্রমন ঠেকানো সম্ভব নয়; এ জন্য সর্বপ্রথম জনগনকে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দোকানপাট বন্ধ রাখার বিষয়টিও ভুল সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে সচেতন নাগরিক কমিটির জেলা সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, সময় নির্ধারণ করে দিলে দোকানপাটে লোকজনের ভির বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে স্বাস্থবিধি মেনে চলানো সম্ভব হবেনা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *