নাসিম ভাই চলে যাওয়ায় খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে: প্রধানমন্ত্রী
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: জাতীয় ৪ নেতার একজন শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর সন্তান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য একটা বিরাট ক্ষতি এবং খুব বড় একটা ক্ষতি হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার (১৪ জুন) জাতীয় সংসদে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে আনীত শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক কষ্ট বুকে নিয়ে আজকে এখানে দাঁড়াতে হচ্ছে। গত ১০ তারিখে পার্লামেন্ট শুরুর পর একজন পার্লামেন্ট সদস্যসহ অনেকের শোক প্রস্তাব আমাদের নিতে হলো। ১৪ তারিখে আমরা হারালাম পার্লামেন্টের একজন বিশিষ্ট সদস্য মোহাম্মদ নাসিমকে। আর রাতে আমাদের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সাহেব চলে গেলেন। একই দিনে দুটো মৃত্যু আমাদের জন্য এতো কষ্টকর, এই পার্লামেন্টে বারবার আমাদের সেই শোকপ্রস্তাবই নিতে হচ্ছে।’
মোহাম্মদ নাসিম প্রসঙ্গে বলেন, ‘মোহাম্মদ নাসিম একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। ১৯৮১ সালে যখন দেশে ফিরে আসি তখন থেকেই আমার একটা প্রচেষ্টা ছিল- শহীদ পরিবারের ছেলে-মেয়েদের একসঙ্গে নিয়ে আসা এবং আওয়ামী লীগকে আবারও পুনরুজ্জীবিত করা ও শক্তিশালী করে গড়ে তোলা। সেই কাজটি করতে গিয়ে সবসময় নাসিম ভাইকে আমার পাশে পেয়েছি। এটা ঠিক যে, চলার পথ এত সহজ ছিল না। বারবার বাধা। কিন্তু যারা, যে কয়টা মানুষ বারবার আমার পাশে থেকেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে সমর্থন দিয়েছে, সেই দুইজন মানুষকেই একই দিনে হারালাম। এটাই সবচেয়ে কষ্ট।’
তিনি বলেন, ‘নাসিম ভাইয়ের ওপর যে অত্যাহার হয়েছে- একটা তো পঁচাত্তরের পরে অত্যাচার, আইয়ুব খানের আমল থেকেই সেই অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশেও তার (নাসিম) বাপ (শহীদ এম মনসুর আলী) তো হত্যা হলোই, পরবর্তীতে তিনি নিজে যখন রাজনীতি করতে আসলেন তখনও অত্যাচার সইতে হয়েছে। অত্যন্ত সাহসী ছিলেন। যে কারণে যেকোনও অবস্থা মোকাবিলা করতে যেতেন। আর এই মোকাবিলা করতে যেয়ে বারবার তার ওপর হামলা হয়। জিয়াউর রহমানের আমলেও যেমন অত্যাচার হয়েছে, জেনারেল এরশাদ সাহেব যখন ক্ষমতায় তখনও। খালেদা জিয়ার আমলে তো আরও অত্যাচার, সেই অত্যাচারের তো কোনও সীমা নেই। তারপর আসলো ওয়ান ইলেভেন। তখন গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হলো। তার ব্রেইন স্ট্রোক হলো।
‘বারবার কারাবরণ ও রাজপথে অত্যাচার-নির্যাতন তো সহ্য করতেই হয়েছে। খুব দুঃখজনক। আসলে আমার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে বলতে, এভাবে সবাইকে হারানো খুবই দুঃখজনক’- বলতে বলতে কণ্ঠ ভারি হয়ে উঠে প্রধানমন্ত্রীর। তিনি চশমার ফাঁকে চোখ মুছতে থাকেন।
একটু থেমে আবারও বলেন, ‘আমরা আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য সবসময়ই অনেকগুলো দল নিয়ে যখন আমরা সংগঠিত হয়েছি, শুধু এবারের ১৪ দল বলে না- এর আগেও আশির দশকেরও যখন আমরা ঐক্য গড়ে তুলেছি, আমি সবসময় ঐক্যের দায়িত্বটা মোহাম্মদ নাসিমকেই দিতাম। কারণ সবাইকে নিয়ে অন্যান্য দলের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক রেখে চলা বা কাজ করাটা উনি পছন্দ করতেন এবং করতেও পারতেন। সেজন্য আমি বলতাম যে, ‘ঐক্যের দায়িত্ব আপনাকেই দিলাম। আপনি ঐক্যটা ধরে রাখেন’। ঠিক সমন্বয় করে সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, কোনোকিছু হলে আমাকে জানানো এবং রাজনীতিটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার কাজ করার আকাঙ্ক্ষা ছিল। কাজ করতেন। শরীরের একটা সাইড প্যারালাইসিট হওয়ার পরও কিন্তু কখনও থেমে থাকেননি। প্রত্যেকটা কর্মসূচি পালন করা, বারবার সভা করা, সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসা এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা করা, কর্মসূচিগুলো ঠিক করা এবং সেগুলো নিয়ে যাওয়া- এগুলো তিনিই করতেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটা জিনিস দেখেছি যে, ঐক্যজোটের আমাদের যে শরিক দলগুলো তারাও কিন্তু তাকে পছন্দ করতেন এবং কাজ করতেন একসাথে। তার চলে যাওয়াটা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য একটা বিরাট ক্ষতি, এতে কোনও সন্দেহ নেই। খুবই বড় একটা ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি শুধু এটুকু বলবো- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার জন্য যথেষ্ট সময় দেয়ার কাজটি তিনি করে গেছেন।’
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুও বিশেষত গোপালগঞ্জবাসীর জন্য অপূরণীয় ক্ষতি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সাহেবকে প্রথম থেকেই পেয়েছি। আমার নির্বাচন পরিচালনাই শুধু না, নির্বাচনী এলাকা সম্পূর্ণ দেখাশোনা তার করতে হতো। কঠিন সময়ে গোপালগঞ্জবাসী মুখোমুখি হয়েছে রাজনীতিতে। জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া- যখনই যারা ক্ষমতায় এসেছে তাদের যেন একটা লক্ষ্যই ছিল গোপালগঞ্জের ওপর হাত দেয়ার চেষ্টা। আমাদের বহু নেতাকর্মী নির্যাতিত হয়েছে, তাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার হয়েছে। সেই দুঃসময়গুলোতে সংগঠনকে ধরে রাখা, সংগঠনের নেতাকর্মীদের দিকে নজর দেয়ার কাজগুলোও আব্দুল্লাহ সাহেব অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করে গেছেন।’