ঘূর্ণিঝড় আম্পানে পিরোজপুরে ৩ জনের মৃত্যু, কাঁচা ঘরবাড়ি ফসল ও মাছের ব্যাপক ক্ষতি
মোঃ মনিরুল ইসলাম চৌধুরী, পিরোজপুর প্রতিনিধি: ঘূর্ণিঝড় আম্পানে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় দুইজন এবং ইন্দুরকানি উপজেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের এক জন দেয়াল চাপায় ও অপর দুই জন আতঙ্কীত হয়ে মারা যায়। নিহতদের মধ্যে একজন বয়স্ক নারী এবং দুইজন পুরষ। এছাড়া ধান ও বিভিন্ন প্রজাতির রবিশস্যসহ কমপক্ষে ৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অন্তত ১ কিলোমিটার বেড়িবাধ ভেঙে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আর ৬ হাজার ৭৫৫টি মাছের ঘের/পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কাঁচাপাকা ২৫ কিলোমিটার রাস্তা। আর কাঁচাপাকা মিলিয়ে ২৩৪৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. মোজাহারুল ইসলাম জানান, বুধবার সন্ধ্যার পরে মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নের গিলাবাদ গ্রামের মৃত মজিদ মোল্লার ছেলে শাহজাহান মোল্লা (৫৫) শহরের কলেজের পিছনে বাসায় যাওয়ার পথে দেয়াল ভেঙে তার ওপর পড়ে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। এছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের ধুপতি গ্রামের মৃত মুজাহার বেপারীর স্ত্রী বিধবা গোলেনুর বেগম (৭০) নামের এক বৃদ্ধা ঘূর্ণিঝড়ের ভয়ে বুধবার সন্ধ্যায় নিজের ঝুঁকিপূর্ণ ঘর থেকে পাশের হাসিবুর রহমানের ঘরে যাওয়ার পথে বাতাসের তীব্রতায় পা পিছলে পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যান।
অপরদিকে রাতে জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার উমিদপুর গ্রামে মৃত মতিউর রহমানের পুত্র শাহ আলম(৫০) বাড়িতে পানি প্রবেশ করলে ঘরেই আতঙ্কীত হয়ে তিনি ষ্ট্রোক করে মারা যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল থেকে পিরোজপুরের নদনদীগুলোতে জোয়ারের পানি বাড়তে থাকে। সকালে জোয়ারের পানির চাপে মঠবাড়িয়া উপজেলার মাঝের চরের বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় ও ফসলের ক্ষেত প্লাবিত হয়। সন্ধ্যায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে জেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। রাত নয়টার দিকে প্রবল বাতাসে জোয়ারের পানিতে মঠবাড়িয়া উপজেলার খেতাছিড়া গ্রামের বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থান ভেঙে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এতে গ্রামের শতাধিক কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জোয়েরের পানি পাকা সড়ক উপচে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় বেশ কিছু সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে বাতাসের তোড়ে অসংখ্য গাছপালা ভেঙে গেছে এবং কিছু গাছ ঘরের ওপর পড়ায় সেগুলো বিধ্বস্ত হয়েছে। মঠবাড়িয়া উপজেলার খেতাছিড়া গ্রামে গতকাল সন্ধ্যার পর বাতাস ও জোয়ারের পানি বাড়তে থাকে। রাত নয়টার পর থেকে খেতাছিড়া গ্রামের পাঁচ থেকে ছয়টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। বাড়ি ঘর চার থেকে পাঁচ ফুট পানিতে ডুবে যায়। উপজেলার মাঝের চরে রাতে সাত থেকে আট ফুট পানিতে প্লাবিত হয়। চরের বেশির ভাগ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েক শ হাঁসমুরগি ভেসে গেছে।
মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঊর্মি ভৌমিক আজ বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে কাঁচা ঘর, রবিশস্য, সড়ক ও বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পিরোজপুর সদর উপজেলার গাজীপুর, নামাজপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে বাতাসে ঘরের চালের টিন উড়িয়ে নিয়ে গেছে। গ্রামের অনেক কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছপালা ভেঙে গেছে। ইন্দুরকানি উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম মহসিন উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা, রবি শস্যের খেত, আউশের বীজতলা ও কলাবাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ভা-ারিয়া উপজেলায় দুই শতাধিক বাড়ি ঘর বিধ্বস্তসহ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জলোচ্ছাসে উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়। বাতাসে শত শত গাছ পালা উপড়ে পড়ে, পৌরশহরের লক্ষিপুরা মহল্লার মাকসুদা বেগমের বাড়ীসহ দুই শতাধিক বাড়ী বিধ্বস্ত হয়। জলোচ্ছাসে বেশ কয়েকটি মাছের ঘের পানিতে ভেসে যায়। ভান্ডারিয়া উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো. আওলাদ হোসেন জানান, ঘুর্ণিঝড়ে প্রায় ১৩ কি.মি গ্রামিন ও ইউপি সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, এছাড়া প্রায় দুই শতাধিক বাড়ি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, বিশটির মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্ষতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিরোজপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া, খেতাছিড়া, কচুবাড়িয়া, মিরুখালী ও রাজারহাটে বেড়িবাঁধ ও বাঁধের ঢালের কিছু ক্ষতি হয়েছে। খেতাছিড়া গ্রামে ৩৬ থেকে ৪০ মিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, ঘূর্ণীঝড় আম্পানে জেলায় ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি/অকৃষি জমি প্রায় ৬ কোটি টাকার ও ২৫ কিলোমিটার রাস্তা ও ২ হাজার ৩শত ৪৫টি কাচাঁপাকা বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে। নিহতদের পরিবারকে অর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।