২০২০-২১ অর্থবছর, সরকারের মাথায় উঠছে পৌনে ২ লাখ কোটি টাকার রেকর্ড ঘাটতি বাজেট
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: আসছে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য প্রায় পৌনে ২ লাখ কোটি টাকার রেকর্ড পরিমাণ ঘাটতি বাজেট প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অংশ হিসেবে বাজেট ঘাটতি ছাড়িয়ে যাচ্ছে প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ। সবশেষ গত ১০ বছরেও এত বিশাল পরিমাণ ঘাটতি বাজেট প্রণয়ন হয়নি বাংলাদেশে। অতীতে বিভিন্ন সময় বাজেট ঘাটতি ‘পেস্টিজ নাম্বার’ হিসেবে বিবেচিত জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
আসন্ন নতুন অর্থবছরে সম্ভাব্য এই বিশাল অংকের ঘাটতি বাজেট কিভাবে পূরণ করা হবে- অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রণয়নকারী আমলাগণ তারও একটি হিসাব কষে রেখেছেন। এরমধ্যে খুব সহজ উপায়টি হচ্ছে, ব্যাংকিং খাতের ওপর হাত রেখেঞ বাজেট ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করা। তাতে করে শুধুমাত্র ব্যাংক থেকে ৭২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। যা ইতোমধ্যে চলতি অর্থবছরের ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যাংক থেকে নিয়ে নেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে ৪৭ হাজার কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাজেট ঘাটতি পূরণে এত বিশাল অংকের টাকা ব্যাংকিং খাত থেকে নেয়া হলে বেসরকারি খাত ঋণ থেকে বঞ্চিত হতে পারে। কিন্তু আপাতত ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারের সামনে এর চেয়ে সহজ কোনও উপায় কিংবা দ্বিতীয় কোনও পথও নেই। কেননা চলমান মহামারি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আয় কেমন হবে তার কোনও সুনির্দিষ্ট প্রক্ষেপণ এখনও পর্যন্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে অর্জনের পাল্লাটা এখন পর্যন্ত আশাব্যঞ্জক নয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া শঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, চলতি অর্থ বছর শেষে রাজস্ব ঘাটতি ১ লাখ কোটি টাকা ছুঁয়ে যেতে পারে। অথচ তিনিই চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাস রাজস্য আয়ের সবরকম চেষ্টা করেছিলেন।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, করোনার কারণে অর্থনীতির এখন বেসামাল অবস্থা। এ অবস্থা কতদিন চলবে তা আমরা কেউ জানি না। আগামী অর্থবছরে অর্থনীতিকে কাদা থেকে টেনে তোলাই হবে মূল কাজ। এক্ষেত্রে বাজেট ঘাটতি সাড়ে ৫ কিংবা ৬ যাই হোক- এ নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা নেই।
তিনি জানান, তবে ঘাটতি পূরণের জন্য আগামী অর্থবছরে ব্যাংক ঋণের লক্ষমাত্রা নিঃসন্দেহে বাড়বে। সঙ্গে ভালো অংকের বিদেশি সহায়তা পাওয়ার আশা দেখা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে কম করে হলেও ৪০০ কোটি টাকা মার্কিন টাকা মার্কিন ডলার বিদেশি ঋণ আসতে পারে।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ রয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রণালয় আগামী অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি প্রাক্কলন করেছে। সেই হিসাবে আসছে অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ চলতি অর্থবছরের চেয়ে ২৯ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বেশি হবে।
কোনও অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি পূরণ করতে সাধারণত একটি দেশের সরকারকে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক- এ দুটি খাতের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। অভ্যন্তরীণ খাত আবার দুই ভাগে বিভক্ত- প্রথমত ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়া আর দ্বিতীয়ত সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ নেয়া।
দেশীয় খাত: আসছে অর্থবছরে দেশীয় খাতে ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে বড় অংকের টাকাটা সরকার নিতে চায় ব্যাংকিং খাত থেকে। যেখানে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪০ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এখন পযন্ত ৭৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ নেয়া হয়ে গেছে। সে হিসাবে আগামী বাজেটে ব্যাংক ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ৩১ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা বাড়ছে।
পাশাপাশি ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজে সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষমাত্রা ছিল ৩০ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে আসছে নতুন অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ৫ হাজার কোটি টাকা।
বৈদেশিক খাত: আসন্ন অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি পূরণ করতে সরকার সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে বিদেশি উৎসের ওপর। আসছে বাজেটে বিদেশি উৎস থেকে সরকার ৭৫ হাজার কোটি টাকা সহায়তা পাওয়ার আশা করছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ প্রত্যাশা ছিল ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে নতুন অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ৬ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা।