বলেশ্বর নদীর ভাঙনে ১০ গ্রামের মানুষ হুমকির মুখে এমপি এ্যাড. মিলণের পরিদর্শন
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের শরণখোলা মৌসুমের অতিরিক্ত বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই বলেশ্বর নদীর ভাঙনে ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ১০ গ্রামের মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।স্থানীয়রা বলছে, ওই স্থানে দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হলে শরণখোলা উপজেলার গাবতলা ও বগী দুই গ্রামের অনেক অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।খবর পেয়ে রবিবার দুপুরে বাগেরহাট-৪, আসনের সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য এ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন ওই বেড়িবাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বাঁধের অংশে আপতত রিং বাঁধ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন । বাগেরহাটের শরণখোলায় নির্মাণাধীন ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে বলেশ্বর নদী সংলগ্ন প্রায় ১০ গ্রামের বসতিসহ স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, ভাঙন কবলিত এলাকা শাসন করা না হলে শরণখোলা উপজেলার গাবতলা ও বগী, বকুলতলা এবং চালিতাবুনিয়া উত্তর সাউথখালী, দক্ষিকন সাউথখালী, চাল রায়েন্দা সোনাতলা, শরণখোলা এবং বলেশ্বর নদী লাগোয়া ১০ গ্রামসহ পুরো সাউথখালী ইউপির বাসিন্দারা ছাড়াও তাদের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও গৃহপালিত প্রাণী চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। নদী ভাঙন ঠেকানো না গেলে ওই ইউপি প্রায় গিলে ফেলবে বলেশ্বর।
স্থানীয়রা জানান, গত দুই দিনের আকস্মিক ভাঙনের ফলে ওই ইউপির গাবতলা ও বগী গ্রাম সংলগ্ন বাঁধের প্রায় ৫বিঘা জমি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় কাজের মান তেমন ভালো হচ্ছে না। বালুর উপর ব্লক বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। বৃষ্টি মৌসুমে জোয়ারের পানি ব্যাপকভাবে চাপ দেবে। ওই সময় বাঁধের মধ্যে পানি ঢুকে বালু সরে গিয়ে বাঁধ টিকবে না। বর্তমানে ভাঙনের মুখে রয়েছে ২০০৭ সালে গাবতলাবাসীর জন্য নির্মিত উন্নত মানের আশার আলো মসজিদ, বাবলাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেক ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাদের হাওলাদার বলেন, শুক্রবার দেখি হঠাৎ করে প্রায় তিন বিঘা জমি নিয়ে বাঁধটি নদীতে দেবে যায়। গত দুই দিনে ৫-৬ বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে।
এছাড়া বহু বছর ধরে ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি বলেশ্বর নদীতে ভাঙতে ভাঙতে (আমরা) এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। বেড়ি বাঁধের অনেক জায়গায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত বাঁধ নির্মিত না হলে আর বাঁচার উপায় থাকবে না। তবে, বাঁধের দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্লক ফেলতে পারলে এ ভাঙন সাময়িক বন্ধ হতে পারে। নদী শাসন করে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি করেন তিনি।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভাঙনের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আকস্মিক ভাঙনে প্রায় ৫০ মিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব ওই স্থানে একটি রিং বেড়িবাঁধ দেয়া হবে।
জানা গেছে, ২০০৭ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের অনেক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলায় জানমালের ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি। এ কারণে দুই উপজেলার বাসিন্দারা ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। জমি অধিগ্রহণের পর ২০১৬ সালে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ৬৭ কিলোমিটার বাঁধের প্রায় ৫০ কিলোমিটারের নির্মাণ কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রিয়াদুল পঞ্চায়েত বলেন, ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর উপকুলবাসীর দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ। তবে,বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়েছে কিন্তু তা টেকসই নয়। প্রতি বছর বৃষ্টির মৌসুমে ভাঙলেও, এবার একটু আগেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে স্থানীয়দের ঘরবাড়িসহ কৃষি জমি বলেশ্বর নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিদুজ্জামান খাঁন বলেন, ৩৫/১ পোল্ডারের অধিকাংশ কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। বগী ও গাবতলা এলাকার দুই কিলোমিটার অংশে নদী শাসন ও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি ওই স্থানের কাজ দ্রুত শেষ করার।