যে জেলা যত দরিদ্র সেখানে সরকারি ত্রাণ বরাদ্দ তত কম

অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: তুলনামূলকভাবে দেশের যেসকল জেলায় দরিদ্র মানুষের হার বেশি সেইসব জেলায় ত্রাণের চাল ও অর্থ বরাদ্দ ততো কম ব‌লে এক গ‌বেষণায় উঠে এসেছে।
বৃহস্প‌তিবার (৩০ এপ্রিল) দুর্যোগ সহায়তা মনিটরিং কমিটি গঠন করার প‌রে অলনাইনে সংবাদ স‌ম্মেল‌নে সরকারি ত্রাণ প্রতিবেদন প্রকাশ ক‌রে। বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ‌দের নি‌য়ে দুর্যোগ সহায়তা মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয় বলেও জানাননো হয়।
প্রাথমিকভাবে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সমন্বয়ক এবং লেখক রাখাল রাহা সদস্য সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। এই উদ্যোগের সাথে মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, হাসনাত কাইয়ূমসহ আরো অনেকে যুক্ত আছেন। যারা যুক্ত হয়েছেন তাদের বাইরেও সবার মতামতের ভিত্তিতে এই কমিটির সদস্যগণ যুক্ত হবেন।এই কমিটি করোনা দুর্যোগ অব্যাহত থাকা পর্যন্ত কাজ করবে। সংবাদ স‌ম্মেল‌নে জানান‌ো হয়, যে জেলায় দরিদ্র মানুষের হার যতো বেশী সেই জেলায় চাল ও অর্থ বরাদ্দ ততো কম যেমন বর্তমানে দরিদ্র মানুষের হার সবচেয়ে বেশি কুড়িগ্রাম জেলায় এবং সবচেয়ে কম নারায়ণগঞ্জ জেলায়। কিন্তু কুড়িগ্রামে মোট দরিদ্র জনসংখ্যার মাথাপিছু চাল বরাদ্দ ৮৭৪ গ্রাম এবং মাথাপিছু অর্থ বরাদ্দ ৩ টাকা ৮৫ পয়সা। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জে দরিদ্র জনসংখ্যার মাথাপিছু চাল বরাদ্দ ২২ কেজি ৫৫৫ গ্রাম এবং মাথাপিছু অর্থ বরাদ্দ ৮৮ টাকা ১৭ পয়সা। তারা জানান, জেলাভিত্তিক সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত যতটুকু চাল, নগদ অর্থ ও শিশুখাদ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার তথ্য বিশ্লেষণ করে কমিটি বলছে যে জেলায় দরিদ্র মানুষের হার যতো বেশি সেই জেলায় সরকারের চাল ও অর্থ বরাদ্দ ততো কম। তাদের এখন পর্যন্ত সরকারের বরাদ্দ আদেশ অনুযায়ী (২৩শে এপ্রিল ২০২০) সারাদেশের ৬৪টি জেলায় মোট ৯৪ হাজার ৬৬৭ মেট্রিক টন চাল, ৩৯ কোটি ৪১ লক্ষ ৭২ হাজার ২৬৪ নগদ টাকা এবং শিশুখাদ্য ক্রয় বাবদ ৭ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সরকারের চাল ক্রয় নীতিমালা অনুযায়ী ৩৬ টাকা কেজি ধরলে ২৩ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার জন্য সর্বমোট চাল, অর্থ ও শিশুখাদ্য বাবদ ত্রাণ বরাদ্দ মাত্র ৩৮৮ কোটি ১৫ লক্ষ ৮৪ হাজার ২ শো ৬৪ টাকা। তারা আরও জানান, ২০১৬ সালে কয়েক শত কোটি টাকা খরচ করে যে খানা জরিপ করা হয়েছিল তাতে যে জেলাওয়ারী দরিদ্র ও চরম দরিদ্র মানুষের হার পাওয়া গিয়েছিল তা ত্রাণ ও অর্থ বরাদ্দের সময় সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। যে জেলায় দরিদ্র মানুষের হার যতো বেশি সেই জেলায় চাল ও অর্থ বরাদ্দ ততো কম। যেমন বর্তমানে দরিদ্র মানুষের হার সবচেয়ে বেশী কুড়িগ্রাম জেলায় এবং সবচেয়ে কম নারায়ণগঞ্জ জেলায়। কিন্তু কুড়িগ্রামে মোট দরিদ্র জনসংখ্যার মাথাপিছু চাল বরাদ্দ ৮৭৪ গ্রাম এবং মাথাপিছু অর্থ বরাদ্দ ৩ টাকা ৮৫ পয়সা। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জে দরিদ্র জনসংখ্যার মাথাপিছু চাল বরাদ্দ ২২ কেজি ৫৫৫ গ্রাম এবং মাথাপিছু অর্থ বরাদ্দ ৮৮ টাকা ১৭ পয়সা। কুড়িগ্রামের পর দরিদ্র হার বেশি দিনাজপুর জেলায়। সেখানে দরিদ্রদের মাথাপিছু চাল ও টাকা বরাদ্দের পরিমাণ যথাক্রমে ৬৭২ গ্রাম ও ৩ টাক। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের পর দরিদ্রহারে কম হচ্ছে মুন্সীগঞ্জ জেলায়। সেখানে দরিদ্রদের মাথাপিছু চাল ওটাকা বরাদ্দের পরিমাণ যথাক্রমে ২১ কেজি ৫১৭ গ্রাম ও ৯৫ টাকা ৮৩ পয়সা।
রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রে যেসব অঞ্চলের মানুষের প্রাধান্য রয়েছে এর সাথে বাংলাদেশের জেলাগুলোর দরিদ্রহার কম-বেশি থাকার একটা সম্পর্ক অল্প-বিস্তর আছে। ত্রাণ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও এটার ছাপ স্পষ্ট, যা দুর্যোগকে আরো বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করতে পারে।
এসব অনুসিদ্ধান্তকে বিবেচনা করে কমিটি এই মুহূর্তে ৫টি সুপারিশ করছে। এগুলো হলো:

১. সকল বরাদ্দ হতে হবে প্রান্তিক জনসংখ্যার ভিত্তিতে। শারীরিক দূরত্ব, দুর্নীতিরোধ, প্রয়োজন ইত্যাদি মাথায় রেখে বিবিএস-এর খানা জরিপের ভিত্তিতে দরিদ্র এবং কর্মহীন প্রতিটি পরিবারকে একবারে ৩০ কেজি চাল এবং নগদ ১০ হাজার টাকা মোবাইলের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে হবে। যতদিন দুর্যোগ থাকবে প্রত্যেক মাসে এটা অব্যাহত রাখতে হবে। এর জন্য খাদ্য গুদামের চাল দ্রুত বণ্টন করে চলমান বোরো মৌসুমে ৫০ লাখ মেট্রিক টন ধান ও ২৫ লক্ষ মেট্রিক টন চাল ক্রয় করতে হবে। স্কুল-কলেজের মিলনায়তনগুলোকে গুদাম হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। বার্ষিক উন্নয়ন খাতে জরুরী নয় এমন সকল বরাদ্দ ও ছাড় স্থগিত করতে হবে।

২. প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, ভাসমান মানুষ, উপকূলীয় জনগোষ্ঠী, যাদের অনেকেরই জাতীয় পরিচয়পত্র নাই, যাদের তথ্য খানাজরিপেও নাই, তাদের কথা বিশেষভাবে ভাবতে হবে। লকডাউনের কারণে নতুন করে যারা দারিদ্র্যসীমার নীচে নেমে এসেছেন তাদের হিসাব করতে হবে।

৩. ত্রাণ সহায়তা বিতরণে সকল রকমের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি দূর করতে হবে। এর জন্য মিডিয়া ও সোসাল মিডিয়ার উপর থেকে অন্যায় খবরদারী প্রত্যাহার করতে হবে, যাতে করে যে কোনো ধরণের অনিয়মের চিত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত পেতে পারেন।

৪. এসময় ধান, সবজি ও ফলের মৌসুম। এগুলোর উত্তোলন ও সরবরাহ চ্যানেল সম্পূর্ণ নির্বিঘ্ন ও হয়রানি মুক্ত করতে হবে। দুধ-ডিম-পোলট্রির উৎপাদন ও সরবরাহ চ্যানেল স্বাভাবিক করতে হবে।

৫. মানুষের মর্যাদা ও সম্মান নিশ্চিত করতে হবে। তার মৌলিক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে যারা উপস্থিত ছিলেন হাসনাত কাইয়ূম,প্রফেসর সাঈদ ফেরদৌস, শহীদুল আলম, হাসিবউদ্দিন হোসেন, কাজী জাহেদ ইকবাল, প্রফেসর নাছির আহমেদ, জাকির হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, নঈম ওয়ারা, মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান, দীপক কুমার গোস্বামী, মাহা মির্জা, আর রাজী ও নুরুল হক নুর প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *