করোনা:কিস্তি আদায় বন্ধ হয়নি আদায় করতে এসে জনরোষের শিকার কর্মকর্তা
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির.সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার,বাগেরহাট: করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সরকারি নির্দেশ অমান্য করে বাগেরহাটের চিতলমারীতে করোনার ক্রান্তিকালে কিস্তি আদায় করতে এসে ‘প্রদীপন’ নামে এক এনজিও’র কর্মকর্তা জনরোষের শিকার হয়েছেন। সোমবার (৩০ মার্চ) বেলা ১২ টায় উপজেলায় কুরমনি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।বাগেরহাটের ৯ উপজেলায় গ্রামীণ ব্যাংক কিস্তি আদায় বন্ধ করেনি। গত ২৫ মার্চও প্রতিষ্ঠানটি নির্বিঘ্নে কিস্তি উঠানোর কার্যক্রম চালিয়েছে।শুধু পৌর এলাকা নয় সারা বাগেরহাটে তারা কিস্তি আদায়ে নামেন।
ফিল্ড সুপার স্বীকার করেন যে, অফিস থেকে তাদেরকে কিস্তি আদায় না করার জন্য কোনো আদেশ দেয়নি। তাই বাধ্য হয়েই তারা কিস্তি আদায়ে নেমেছেন।এক গ্রাহক বলেন, আমরা এ দুর্যোগের সময় কিস্তি দিতে চাইনি। কিন্তু তারা বারবার বাড়িতে এসে কিস্তি আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে এবং খেলাপির জন্য মামলার ভয় দেখিয়ে কিস্তি আদায়ের চেষ্টা করে।
এ সময় করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু হওয়া উত্তেজিত জনতা ইন্দ্রজিত রায় নামে ওই শাখা ব্যবস্থাপককে আটকে রেখে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন দেন। সরকার কিস্তি আদায় বন্ধ ঘোষণা করলেও ওই এনজিও কর্মকর্তার এ রকম ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছেন।
লোন গ্রহীতা ইতি বিশ্বাস জানান, তিনি এ বছরের ২৬ জানুয়ারী প্রদীপন চিতলমারী শাখা থেকে ৮০ হাজার টাকা লোন গ্রহন করেছিলেন। যার সার্ভিস চার্জ ১০ হাজার ৪৮০ টাকা এবং মাসিক কিস্তি ৮ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত যথারীতি কিস্তির টাকা পরিশোধও করেছেন। কিন্তু গত কয়েকদিন করোনার কারণে ঘর থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ থাকায় তার স্বামী কোন আয় করতে পারেননি।
এরপরও বেশ কিছুদিন ধরে ওই এনজিওর মাঠকর্মী আশ্বাব আলী কিস্তির টাকার জন্য হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। কিন্তু টাকা না দিলে সোমবার বেলা ১২ টার দিকে প্রদীপন চিতলমারী শাখার ম্যানেজার ইন্দ্রজিত রায় কিস্তির টাকার জন্য চড়াও হন। এ খবর পেয়ে করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু হওয়া এলাকার উত্তেজিত জনতা ওই শাখা ব্যবস্থাপককে আটকে রেখে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন দেন।
একই এনজিও’র অপর লোন গ্রহীতা শিপ্রা মন্ডল ও ডলি রাণী বিশ্বাস জানান, ওই এনজিওর সুরশাইল নামে একটি সমিতি রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে মাঠ কর্মী আশ্বাব আলী ও ম্যানেজার ইন্দ্রজিত রায় কিস্তির টাকার জন্য নানা ধরণের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল।
কুরমনি গ্রামের কৃষক অনুপ বিশ্বাস, রেজাউল দাড়িয়া, রাজু বিশ্বাস, অশোক বসু, সজল বসু, আকাশ মন্ডল, বৈদ্য নাথ বসুসহ অনেকে জানান, এ উপজেলায় সাতটি ব্যাংক, ২০-২৫ এনজিও এবং ১০০ টির কাছাকাছি সমবায় সমিতি রয়েছে। গ্রামের প্রতিটি কৃষক পরিবার কমপক্ষে ৪-৬টি এনজিও’র ঋণের জালে জড়িত। সরকারি ভাবে কিস্তি আদায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও অনেক এনজিও এভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে লোন আদায় করছে। সরকারের এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলেও তারা দাবী করেন।
এ ব্যাপারে তরুণ সমাজ সেবক অনুকুল বসু জানান, অমানবিক এই ঘটনাটি শুনে তিনি সাথে সাথে ঘটনাস্থলে যান। বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে অবহিত করেন বলেও উল্লেখ করেন।
প্রদীপন চিতলমারী শাখার ম্যানেজার ইন্দ্রজিত রায় জানান, সরকারি ভাবে কিস্তি আদায় বন্ধ এটা তিনি জানেন না। এছাড়া তার উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তাকে চিঠি দিয়ে বা ফোন করে কোন কিছু জানায়নি।
চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মারুফুল আলম জানান, সরকারি ভাবে আগামী জুন মাস পর্যন্ত সকল ঋণ আদায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে