পাপিয়ার ‘পাপে’ ১৫ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নজরদারিতে

অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স : গ্রেফতারেরর পর থেকেই চাঞ্চল্যকার তথ্য দিচ্ছেন যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। জোর করে তরুণীদের দিয়ে দেহব্যবসা, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, জাল নোট সরবরাহ, রাজস্ব ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ পাপিয়ার নানা পাপের সঙ্গে জড়িতে অনেক গডফাদার-গডমাদার। পাপিয়ার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্তত ১৫ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে রাখা হয়েছে নজরদারিতে। তারা কোথায় যাতায়াত করেন, কাদের সঙ্গে সময় কাটান এসব বিষয়ের ওপর তীক্ষ্ম নজর রাখছেন গোয়েন্দারা। পরবর্তী সময়ে তাদের প্রত্যেকের আমলনামা পাঠানো হবে শীর্ষ মহলে। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অনেক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে উঠেছিল। এ ছাড়া পাপিয়ার কললিস্টে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, শিল্পপতি, অভিনেতা, অভিনেত্রী ও প্রশাসনের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তার নাম পাওয়া যাওয়ায় অনেকটাই বিব্রত বোধ করছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। সুত্র জানিয়েছে, পাপিয়ার মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানতে পেরেছেন, পাপিয়ার ইন্দিরা রোডের ফ্ল্যাটে প্রায় রাতেই ককটেল পার্টি বসত। সেখানেও আনাগোনা ছিল বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তির। পরে সেখান থেকে পছন্দ অনুযায়ী সুন্দরী যুবতীদের নিয়ে যেতেন তারা। সুন্দরীদের ব্যবহৃত ভ্যানেটি ব্যাগ কিংবা অন্যান্য সামগ্রীতে পাপিয়া কৌশলে লাগিয়ে দিতেন অত্যাধুনিক ডিভাইস। সেই সব ডিভাইসে ধারণকৃত মনোরঞ্জনের দৃশ্যগুলো পরবর্তী সময়ে কাজে লাগাতেন লেডি মাফিয়া পাপিয়া। এ ছাড়া হাই সোসাইটির খদ্দেরদের চাহিদা অনুযায়ী পাপিয়া তার সংগ্রহে রাখতেন রুশ ও থাই সুন্দরী নারী। চাহিদা ও রেট মিলে গেলে পাপিয়া তাদের বাংলাদেশে নিয়ে আসতেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. আবদুল বাতেন গণমাধ্যমে বলেন, ‘দেখুন, প্রতিটি বিষয় আমরা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। তবে আমরা বুঝতে পারছি, পাপিয়া অনেক কিছুই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে কাদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল, ইন্ধনদাতার তালিকায় কারা, তার অর্থের উৎস কী, একই সঙ্গে তার অপরাধ কর্মকাণ্ডের তালিকা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা থাকবে।’ উল্লেখ্য, দেশত্যাগের সময় গত শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিমানবন্দর থেকে তিন সহযোগীসহ নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের এই সাধারণ সম্পাদক ও তাঁর স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১। পরে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর গুলশানের পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিন থেকে চার নারীকে আটক করা হয়। মোটা অঙ্কের টাকায় তাদের দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসামাজিক কাজ করিয়ে আসছিলেন পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন।
রাজধানীর গুলশানের অভিজাত হোটেল ওয়েস্টিনে প্রেসিডেন্ট স্যুট নিজের নামে সবসময় বুকড করে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছিলেন শামিমা নূর পাপিয়া। যিনি হোটেলটির বারে বিলবাবদ প্রতিদিন পরিশোধ করতেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা।
হোটেল ওয়েস্টিনের ২১ তলার প্রেসিডেন্ট কক্ষটি ভাড়া নিতেন পাপিয়া। গত তিন মাসে ওই কক্ষের ভাড়া পরিশোধ করেছেন প্রায় ৮৮ লাখ টাকা। ১৯ তলায় একটি বার রয়েছে, যেটি তিনি পুরোটাই বুক করে নিতেন। সেখানে প্রতিদিন তিনি আড়াই লাখ টাকা মদের বিল পরিশোধ করতেন। সব মিলিয়ে দেখা যায় ৩ মাসে হোটেল বিল প্রায় ৩ কোটি টাকা।
তাকে নিয়ে রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা ও নরসিংদীর বাসায় অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। ফার্মগেট এলাকায় ২৮ নম্বর ইন্দিরা রোডে রওশন’স ডমিরো রিলিভো নামক বিলাসবহুল ভবনে তাদের দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি পিস্তলের ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড জব্দ করে র‌্যাব সদস্যরা। এছাড়াও প্রাথমিক তদন্তে ফার্মগেটে পাপিয়ার ২টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদী শহরে ২টি ফ্ল্যাট, ২ কোটি টাকা মূল্যের দুটি প্লট, চারটি বিলাসবহুল গাড়ি এবং গাড়ি ব্যবসায় প্রায় দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া, বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে নামে-বেনামে অনেক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত থাকার তথ্য পেয়েছে র‌্যাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *