ফসলি জমিতে নিষিদ্ধ ডাম চিমনির ইট ভাটা

তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী মোহনপুর উপজেলার ঘাষিগ্রাম ইউপির বড়াল মাঠে ফসলি জমিতে (এইচএম২০০০) নামের নিষিদ্ধ ডাম চিমনির অবৈধ ইট ভাটা স্থাপনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি স্থানীয়রা অবৈধ ওই ইটভাটা বন্ধের দাবিতে ডাকযোগে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও আঞ্চলিক পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। নাম পরিচয় গোপণ রাখার স্বার্থে ভাটায় কর্মরত এক ব্যক্তি বলেন, রাজশাহী জেলা, মোহনপুর উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের অলিখিত অনুমতি নিয়ে তারা ভাটা পরিচালনা করেছেন এটাকে অবৈধ ইট ভাটা বলা ঠিক না। মোহনপুর উপজেলা কৃষি বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ এই ইট ভাটার কারণে বড়াল মাঠের প্রায় দেড় থেকে দুশ’ বিঘা আলুর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, দ্রুত এই ভাটা বন্ধ করা না হলে এই মাঠে সব ধরণের ফসলহানির আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, ফসলি জমিতে এই ইট ভাটা নির্মাণ করায় আশপাশের জমিতে পোকার আক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়েছে। সরকারের সব নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে জ্বালানী হিসেবে কয়লার পরিবর্তে কাঠ দিয়ে ইট ভাটায় প্রকাশ্যে ইট পোড়ানো হচ্ছে। আর ইট ভাটায় পোড়ানো জ্বালানী কাঠের প্রচন্ড কালো ধোয়ায় লোকালয়ের জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এছাড়াও ১২০ ফুট উচু চিমনি নির্মাণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এখানে মাত্র ২০ ফুট উচু টিনের চিমনি দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এলাকার ডাব, আম ও কাঠাল গাছের ব্যাপক ক্ষতির পাশপাশি কৃষিতে ফসলহানি হচ্ছে। এলাকার বৃষক রফিকুল ইসলাম ও বাবু বলেন, ইট ভাটার কালো ধোয়ার কারণে তাদের আলুখেতে রোগ ও ফলন হানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারা বলেন, ইট ভাটার কারণে আশপাশের প্রায় ১০০ বিঘা জমির আলুচাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কিšত্ত প্রভাবশালীরা তাদের বাধা-নিষেধ উপেক্ষা করেই ভাটায় কাঠ পোড়াচ্ছেন। প্রভাবশালীরা চার ফসলি প্রায় ৩০ বিঘা জমির ওপর অবৈধ ইট ভাটা স্থাপন করেছেন। স্থানীয়রা অবৈধ এই ইট ভাটা বন্ধের কথা বললেই তাদের মামলা-হামলার ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের জারি করা পরিপত্র (২০ অক্টোবর ২০০৩) অনুযায়ী ইট ভাটায় ১২০ ফুট উঁচু চিমনি স্থাপন বাধ্যতামুলক। এছাড়াও ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (৪ ধারার ৫ উপ-ধারা) অনুযায়ী আবাসিক এলাকা, উপজেলা সদর ও ফল বাগানের আশপাশের ৩ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ইট ভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ অবৈধ। স্থানীয়রা অবৈধ এই ইট ভাটা বন্ধের জন্য ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যম প্রশাসনের অভিযান পরিচালনার দাবি করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এব্যাপারে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানওয়ার হোসেন বলেন, এবিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এব্যাপারে রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তর-এর উপ-পরিচালক বলেন, পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো ইট ভাটা চালাতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, এ বিষয়ে খোজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এব্যাপারে (এইচএম ২০০০) ইট ভাটা মালিক হাজী আজিজুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার ইট ভাটা অবৈধ সেটা ঠিক তবে তারা অনুমোদন নেয়ার চেস্টা করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *