৬৮ বছরেও শহীদ মিনার নেই অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে

শেখ সাইফুল ইসলাম কবির.সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার,বাগেরহাট: ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর পার হতে চললেও কুড়িগ্রামের ৯৩ ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গড়ে উঠেনি গৌরবের শহীদ মিনার। অথচ ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়।সারাদেশের শহীদ মিনারগুলোর পাদদেশে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ। অথচ এই দিনে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো থেকে বঞ্চিত হবেন জেলার ৪ লক্ষাধিক শিশু শিক্ষার্থী।সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে আজও বাগেরহাট জেলার ৯ উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গড়ে উঠেনি শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য স্মৃতি সৌধ বা শহীদ মিনার। জেলার ১ হাজার ৬৮৯ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কতটি শহীদ মিনার আছে বা কতটিতে নেই সে তথ্যও নেই জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা দপ্তর গুলোতে ।তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভাষা শহীদদের স্মরন করতে পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরী করা হবে।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।সরকারের নির্দেশ রয়েছে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। নির্দেশনা মানছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে জানান যায়, জেলায় ১১‘শ৫২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩‘শ ২৩টি মাধ্যমিক ১‘শ ৬৫টি মাদরাসা ও ৪৯ কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে কলেজ গুলোতে শহীদ মিনার থাকলেও প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদরাসা গুলোতে শহীদ মিনার নেই। প্রতি বছর কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদেও স্মরণ করেন এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।মোরেলগঞ্জে১৬ ইউনিয়নে রয়েছে ১৪টি কলেজ, নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৫টি, দাখিল ও সিনিয়র পর্যায়ের মাদ্রাসা ৬৪টি এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা রয়েছে ৩০৮টি।মোরেলগঞ্জ সদরের এসএম কলেজ, রওশন আরা ডিগ্রি কলেজ,এসিলাহা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, দৈবজ্ঞহাটী সেলিমাবাদ কলেজসহ হাতে গোনা কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব অর্থায়নে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার প্রধানরা জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও তারা কলাগাছ ও কাঠ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে দিবসটি পালন করেছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা জানান, সরকারিভাবে বিষয়টি বাধ্যতামূলক এবং শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ করা হোক।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, কতটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে আমার জানা নেই। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে কিছু বিদ্যালয়ে শহীদ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মান করা হবে।
জেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, আপনাদের কাছ থেকে শুনলাম যে বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। তবে আমার কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত কোন তথ্য নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে আলোচনা করে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা করে শহীদ মিনার করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ শাহীনুজ্জামান জানান, আমাদের কাছে ও কোন তথ্য নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে সকল প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মানের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: কবির উদ্দিন জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণের সরকারি কোন বরাদ্দ নেই। তারপরও মুজিববর্ষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টগণকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *