পাইকগাছাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ কর্মসংস্থানের অভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছুটছে
প্রমথ সানা, পাইকগাছা: জঠের জ্বালা নিবারণের জন্য প্রতিদিন অসংখ্য লোক এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। পাইকগাছা, কয়রা ও দাকোপ উপজেলাসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে মানুষের কোন কাজ নেই। দেশের অন্যান্য জায়গায় শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলেও দক্ষিণ এলাকায় ঐ জাতীয় প্রতিষ্ঠান না থাকায় মূলত কর্মসংস্থানের অভাবে এলাকার শ্রমজীবী মানুষেরা অন্যত্র যেতে বাধ্য হচ্ছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের প্রধান ড. দিলীপ কুমার দত্ত জানান, ১৯৮৮ সালে ২৯ নভেম্বর সুন্দরবন উপকুলের প্রলংকারী ঘুর্ণিঝড়। ১৯৯১সালের ২৯ এপ্রিল খুলনা চট্রগ্রাম কক্সবাজার অঞ্চলে স্মরণখালের সামুদ্রিক ঝড় ২০০৭ সাল ১৫ নভেম্বর সিডরের তান্ডব এবং ২০০৯ সাল ২৫ মে আইলার ভয়াভহ ঘটা জলোছ্বাস। সর্বশেষে ফণী’র আঘাত। সুন্দরবন ঘেঁষা পাইকগাছা, কয়রা, দাকােপ উপজেলাসহ পার্র্শ্ববতী জেলার আশাশুনি উপজেলার এলাকার প্রাকৃতিক দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে। জেজেএস খুলনা কো-অর্ডিনেটর জিয়া আহম্মেদ জানান, উল্লেখিত উপজেলা সহ উপকূলীয় অঞ্চলের মাটিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি সহ নানা রকম চাষের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সিডর, আইলার ও ফণী’র ভয়াভহ জলোছ্বাস উক্ত এলাকার প্রাকৃতিক দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছে। মাইলের পর মাইল সবুজের সমারোহ নেই। এর সাথে নতুন মাত্রায় নদী ভাঙ্গন যোগ হয়ে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এর ফলে পাইকগাছা, কয়রাসহ আশে-পাশের উপজেলা এলাকায় প্রতিদিন বেঁড়িবাঁধ ও নদী বিলীন হচ্ছে। উপযুর্পরি নদী ভাঙ্গনে কেড়ে নিচ্ছে কৃৃষি জমি, বসতভিটা, চিংড়ি ঘের ও রাস্তাঘাট। দিন যতই যাচ্ছে অত্র এলাকার মানুষ জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ততই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সিডর, আইলার ও ফণীর ভয়াভহ ক্ষতিগ্রস্থ উক্ত উপজেলায় কর্মসংস্থান প্রকল্প গড়ে ওঠেনি। ফলে বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পাইকগাছা বাসস্ট্যান্ডস্থ জিরোপয়েন্টে আশাশুনির গদাইপুর গ্রামের ৫৪ বছরের ইমাম ম্যোলার সহ ময়নুর, কিবরিয়া ইসলাম, মনিরুলদের সঙ্গে কথা বললে জানান, আমাদের এলাকায় ধান না হওয়ায় এবং এলাকায় কাজকর্ম না থাকায় পেটের দায়ে আমরা কাজের সন্ধানে বরিশালে যাচ্ছি। পাইকগাছার সরল গ্রামের উজ্জ্বল মন্ডল, নিমাই, দিপংকররা জানান, এই সময়ে আমাদের এখানে তেমন কাজ নেই, আর জায়গা জমিও নাই, তাই অন্য জায়গায় কাজের সন্ধানে যাচ্ছি। কয়রা’র কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সিডর, ঘুর্ণিঝড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের এলাকায় লেগেই থাকে, পানি লবনাক্ততার জন্য ফসল হয় না, আপনারাও জানেন। দু’মুঠো ভাতের জন্য জন্মস্থান ছেড়ে যাচ্ছি। কেউ যাচ্ছে ইট ভাটায়, কেউ যাচ্ছে বোরো’র আবাদ করতে আবার অনেকেই শহরে রিক্সা, ইজিবাইক চালাতে। সিপিআরডির নিবার্হী পরিচালক মোঃ শামছুদ্দোহা এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেকেই এলাকা; এমনকি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।