‘রুটি রুজির নিশ্চয়তা চাই, সাংবাদিকদের সুরক্ষা চাই
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের হাতে হাতকড়া, পেশাগত নিরাপত্তা ও সংবাদ সংগ্রহের সময় হামলার প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারা গোলচত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক আকতার হোসেনের সঞ্চালনায় টেলিভিশন, প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের সংবাদকর্মী ও সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা মানববন্ধনে অংশ নেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য বলেন, ‘রুটি রুজির নিশ্চয়তা চাই, সাংবাদিকদের সুরক্ষা চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সব জায়গায় উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু সাংবাদিকরা ভালো নেই। সাংবাদিকরা কাজ করে বেতন পায় না, বছরের পর বছর বেতন বৃদ্ধি হয় না। আমরা কাজ করে নির্যাতনের শিকার হয়েও বেতন পাই না। আর মালিকরা বাড়ি-গাড়ি করছে। বছরে বছরে গাড়ি পাল্টাচ্ছে। আমরা সবার কথা বলি- অথচ আমাদের কথা বলার কেউ নেই।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যম একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। যদি সুশাসন কায়েম করতে চান তাহলে গণমাধ্যমকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। গণমাধ্যমের মুখ টিপে ধরে রাষ্ট্রের সুশাসন নিশ্চিত করা যায় না। যদি স্বাধীনতার কথা মনে করেন তাহলে আমাদের বাক-স্বাধীনতা দিতে হবে। আমরা রাষ্ট্রের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষ, সমাজের পক্ষে, গরীবের পক্ষে, মানবতার পক্ষে, সাম্যের পক্ষে কথা বলি কিন্তু আমাদের কথাই আমরা বলতে পারিনা।’ এজন্য গণমাধ্যমকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, ‘যারা সাংবাদিক নিপীড়ন করে তারা তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং সাংবাদিক সমাজকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য দরকার আইনি কাঠামো। আমাদের জন্য কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা চাই। আমরা শুধু মানুষের দ্বারা নিগৃহীত হচ্ছি তা-না, কর্মপরিবেশ না থাকার কারণে আমি আমার বেতন থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি। এই দুই ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবোধ্য লড়াই সংগ্রাম করা খুবই জরুরি।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, ‘যখন একজন সাংবাদিককে রক্তাক্ত করা হয় তখন রক্তাক্ত করা হয় গোটা সাংবাদিক সমাজকে। সাংবাদিকদের রক্তাক্ত করা মানে একাত্তরকে রক্তাক্ত করা, আর একাত্তরকে রক্তাক্ত করা মানে স্বাধীন সার্বভৌমত্বকে রক্তাক্ত করা। স্বাধীন সার্বভৌমত্বকে রক্তাক্ত করে যত বড় শক্তিশালীই হোক তারা শান্তিতে থাকতে পারবে না। গোটা সাংবাদিক সমাজ আজ জেগে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক সাংবাদিকের ওপর হামলায় গোটা দেশ আজ বিস্মিত। গোটা সাংবাদিক সমাজকে অরক্ষিত রেখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি আপনারা যদি মনে করেন দেশ শাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিত শান্ত থাকবে তা পারবেন না। ওয়ায়দুল কাদের বলেছেন, এই কাউয়ারাই দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আপনি যদি অবিলম্বে এই কাউয়া ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করেন তাহলে সাংবাদিক সমাজ বৃহত্তর আন্দোলন দিতে বাধ্য হবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমরা রাস্তায় না দাঁড়ালে আপনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) আসামি ধরার কথা ভুলে যান। আমরা রাস্তায় না দাঁড়ালে খুন করলেও কেউ আসামিকে গ্রেফতার করে না। এর চাইতে কষ্টকর বিষয় আর পৃথিবীতে নেই।’
নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফয়েজ বলেন, ‘সমাজের অসঙ্গতি, সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের কথা আমরা তুলে ধরি, কিন্তু যাদের পক্ষে নিউজ যায় না তারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। এই হামলাকারীরা একেক সময় একেক দলের নাম বিক্রি করে সন্ত্রাসী করে। এরা রাষ্ট্রের দুর্বৃত্ত। সন্ত্রাসীরা জানে না, সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে কোনোভাবেই কণ্ঠরোধ করা যায় না। আমরা সত্যের পক্ষে সব সময় সংবাদ তুলে ধরি এবং ভবিষ্যতেও তুলে ধরতে চাই।’
সাংবাদিকরা ঝুঁকিপূর্ণ হলে রাষ্ট্র ঝুঁকিপূর্ণ হয়। সাংবাদিক সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি করেন এস এম ফয়েজ।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ উম্মুল ওয়ারা সুইটি ‘সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে হবে, সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিতে হবে, সাংবাদিকদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না, সাংবাদিক আহত কেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জবাব চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তার বক্তৃতা শুরু করেন।’
তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তাহীন অবস্থায় আমরা ঘরে ফিরে যেতে পারি না। আগামী নিউজের রিপোর্টার মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের মতো যাতে আর কারো মাথা না ফাটে। সারাবাংলাডটনেটের রিপোর্টার উজ্জ্বল জিসানের মতো কারো যাতে হামলার ঘটনায় আর ট্রমা না হয়। সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় আর কোনো আপস করা হবে না। আমাদের প্রধান ও একমাত্র দাবি- আমরা নিরাপদ সাংবাদিকতা করতে চাই।’
তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি সাংবাদিকবান্ধব। সবার আগে আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে হবে। সাংবাদিকরা যদি স্বাধীনভাবে কাজ না করতে পারে তাহলে সারা বিশ্বে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হবো।’
এনটিভির সিনিয়র রিপোর্টার শফিক শাহিন বলেন, ‘আমাদের দুর্বল ভাববেন না। সাংবাদিক সমাজ জেগে উঠলে নির্যাতনকারী, হামলাকারীরা টিকে থাকতে পারবে না।’
বাংলাভিশনের সিনিয়র ক্যামেরাপারসন ফজলুল হক ফজলু বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছি না। আমরা অফিসে ও বাহিরেও নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। আমরা সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ চাই। হামলা-মামলা থেকে সাংবাদিক সমাজ মুক্তি পেতে চায়।’
এনটিভির সিনিয়র সাংবাদিক হাসান মাহমুদ বলেন, ‘সারা দেশের মানুষ যেখানে বসন্ত বরণে ব্যস্ত তখন আমরা সহকর্মী নির্যাতনের প্রতিবাদে রাস্তায় দাঁড়াচ্ছি। এতেই আমাদের অসহায়ত্বের প্রমাণ দেয়। সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব ষড়যন্ত্র রুখতে হবে।’