তালায় প্রশাসনের নজর এড়িয়ে জনবহুল এলাকায় দুই ইটভাটা!
অমল সেন, তালা: ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে সারক্ষীরার তালার জেঠুয়ার জনবহুল এলাকায় কৃষি জমিতেই গড়ে উঠছে ইটভাটা। এতে পরিবেশ দূষণ ও লোকালয়ে জনবসতির মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানায়, শুরু থেকেই ভাটা মালিক জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ৩শকোটি টাকা ব্যয়ে খননকৃত কপোতাক্ষের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাটি কর্তন, নদী তীরের মাটি কর্তন থেকে শুরু করে কৃষকদের প্রলুব্ধ করে কৃষি জমির মাটি কেটে ভাটা পরিচালনা করে আসছে। এতে একদিকে যেমন অবাধ মাটি কর্তনে এলাকা বিরান ভূমিতে রূপ নিচ্ছে, অন্যদিকে এলাকায় পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। ইতোমধ্যে এর কুফলও ভোগ করতে শুরু করেছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের জেঠুয়ার জনবহুল এলাকার ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে বিসমিল্লাহ ব্রিকস। গত ২৫ জুন এই ভাটা উদ্বোধন করা হয়। অটো ইটভাটার নামে প্রচার করলেও মূলত তারা সেখানে হাওয়া ভাটা তৈরির কার্যক্রম শুরু করেছেন। মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে মুন ব্রিকস নামের আরেকটি ইটভাটার কার্যক্রম শুরু রয়েছে। সর্বশেষ দু’দুটি ইটভাটার কারণে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এলাকাবাসীর মধ্যে রীতিমত আতংক বিরাজ করছে। তারা তদন্তপূর্বক এসব ভাটার কার্যক্রম বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানা গেছে, তালা উপজেলার জেঠুয়া গ্রামের মোবারক হোসেন ও হাফেজ জহুরুল ইসলাম, একই এলাকার কামরুল ইসলাম, মো. মোতালেব গংদের কাছ থেকে ১১নং জালালপুর ইউনিয়নের জেঠুয়া মৌজার জে.এল নং-১৩০, সিট নং-১ এলাকার প্রায় ৪ একর সম্পত্তি ইজারা নিয়ে ২৫ জুন সকালে ইটভাটা স্থাপনের কাজ শুরু করেন।
এলাকাবাসীর দাবি, প্রথমে মালিকপক্ষ অটো ইটভাটার নামে প্রচার দিলেও তারা সেখানে জিকজ্যাক হাওয়া ভাটা তৈরির কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জনবহুল এলাকায় ইটভাটা স্থাপিত হলে এলাকার সামগ্রিক পরিবেশ বিপর্যয়ের পড়বে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ভাটার জমির ইজারাদাতা ও মালিকপক্ষ পরস্পর যোগসাজশে বসতভিটা থেকে শুরু করে ফসলি জমির দাগ-খতিয়ান সম্পৃক্ত করে ইজারাচুক্তি সম্পন্ন করলেও মূলত তারা বিআরএস খাস খতিয়ানের জমিতেই ভাটা স্থাপন করছেন।
এছাড়া ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ৫৯ নং ধারা এবং পরবর্তীতে অধ্যাদেশ নং ০২/২০১৮ সংশোধিত) এর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সম্পূর্ণ ভুল বুঝিয়ে তারা সেখানে ইটভাটার লাইসেন্স নেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আইনের ৮ এর (১) ধারায় আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিজমি, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, ডিগ্রেডেড এয়ার শেড এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। একই ধারার উপধারা (২) অনুযায়ী এই আইন কার্যকর হবার পর নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার অভ্যন্তরে ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো আইনের অধীন কোনরূপ অনুমতি বা ছাড়পত্র বা লাইসেন্স, যে নামেই অভিহিত হোক প্রদান করতে পারবে না।
আইনের ৩ নং ধারার ক) উপধারায় বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ এলাকার সীমারেখা হতে ন্যূনতম ১ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে, ঙ) উপধারায় বিশেষ কোনো স্থাপনা রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান হতে ১ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যেসহ নানা শর্তানুযায়ী ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।
এ ব্যাপারে ভাটার ম্যানেজার মফিজুল ইসলামের কাছে ভাটার বৈধতা বা কাগজপত্র আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবকিছুই ঠিক আছে।
তালা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শুভ্রাংশু শেখর দাশের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাটার তদন্তভার তার কাছে রয়েছে। তবে ট্রেনিংয়ের কারণে বাইরে থাকায় তিনি এখনো রিপোর্ট জমা দেননি। এদিকে, তদন্তের আগেই অনুমোদন ও এর কার্যক্রম শুরুর বিষয়টিকে রীতিমত এলাকাবাসী ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন। তাদের কার্যক্রমে এলাকাবাসীর রীতিমতো আতংকে রয়েছে। এ বিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, এখনো পর্যন্ত এ নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।