অন্যর লেজ ধরতে গিয়ে নিজের লেজে পা !
তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ নাসরিন বানু নন্দিত রাজনৈতিক নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নার বিরুদ্ধে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে কথিত অভিযোগ করে তা প্রমাণে ব্যর্থ হয়ে নিজেই বিপাকে পড়েছেন বলে গুঞ্জন বইছে। এ ঘটনাকে উপজেলা প্রশাসনের কেউ কেউ বলছে ইউএনও সাহেব অন্যর লেজ ধরতে গিয়ে তার নিজের লেজেই পা পড়েছে। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এদিকে চলতি বছরের ২৫ ডিসেম্বর রাজশাহী ডিডিএলজি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযোগের তদন্ত বা শুনানী করেন। এ সময় ডিডিএলজির কাছে কথিত অভিযোগের ব্যাক্ষ্যা দিয়েছেন উপজেলা পরিষদ, উপজেলা এলজিইডি ও উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাগণ। এদিকে কথিত অভিযোগে বলা হয়েছে, তানোর ইউএনও নাসরিন বানু প্রকৃত কৃষকদের কাছে থেকে ধান কিনতে গেলে উপজেলা চেয়ারম্যান ময়না বাধা দেন এবং চেয়ারম্যান নিজে সিন্ডিকেট করে গত কয়েক বছর ধরে সরকারী খাদ্য গুদামে ধান-চাল-গম সরবরাহ করে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই অভিযোগের বিষয়ে তানোর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি, স্থানীয় সাংসদের প্রতিনিধি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও কলমা ইউপির পর পর দুই বার বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত সাবেক সফল চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না বলেন, তানোর উপজেলা খাদ্যশস্য ক্রয় কমিটির সভাপতি ইউএনও নাসরিন বানু নিজেই। উপজেলা চেয়ারম্যান ওই কমিটির কোনো সদস্যই নয়। যেহুতু তিনি ওই কমিটির কেউ না সেহুতু ওই কমিটির কার্যক্রমে তার হস্তক্ষেপ করার কোনো প্রশ্নই উঠে না, তাছাড়া ইউএনও সাহেব সবেমাত্র তানোরে এসেছেন তাহলে তিনি কিসের ভিত্তিত্বে অভিযোগ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খাদ্যশস্য সরবরাহ করে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তখন কি তিনি তানোরে ছিলেন যদি না থাকেন তাহলে তিনি উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল একজন শীর্ষ কর্মকর্তা হয়ে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত উপজেলার আরেকজন শীর্ষ একজন দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে এমন ভিত্তিহীন-কাল্পনিক অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান লাইসেন্সভুক্ত একজন প্রসিদ্ধ সরবরাহকারী ঠিকাদার তিনি সারা বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারী এক খাদ্য গুদাম থেকে অন্য খাদ্য গুদামে সরকারের ক্রয়কৃত খাদ্যশস্য সরবরাহ করেন এখানে তার খাদ্যশস্য ক্রয় করার কোনো সুযোগ নাই। আবার ২০১৯ সালের ১লা জুলাই উপজেলা খাদ্যশস্য ক্রয় কমিটির সভায় যেসব সিদ্ধান্ত হয় তার মধ্যে এক নম্বর সিদ্ধান্ত হচ্ছে সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর ব্যতিত কোনো কৃষকের ধান গুদামে নেয়া হবে না। যদি সভাপতির স্বাক্ষর ব্যতিত কেউ গুদামে ধান দিতে না পারেন তাহলে সেই সংগ্রহ অভিযানে উপজেলা চেয়ারম্যান কি ভাবে হস্তক্ষেপ করলেন। আবার এর আগে তিনি কলমা ইউপির পর পর দুই বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন তাহলে তিনি কি ভাবে সিন্ডিকেট করে খাদ্যগুদামে খাদ্যশস্য সরবরাহ করে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিলেন আর ইউএনও সাহেব এখানে এসেছেন সবেমাত্র তাহলে চেয়ারম্যানের দীর্ঘদিনের অনিয়ম তিনি কিভাবে দেখলেন। তিনি বলেন, তাকে বির্তকিত, তার পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি ইমেজ ও ভাবমূর্তিক্ষুন্ন করতে ইউএনও সাহেব তার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা-ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত অপপ্রচার করেছেন। অন্যদিকে অভিযোগ করা হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাস্তা মেরামতের নামে কাজ না করেই ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা ছাড় করানোর জন্য ইউএনও’র ওপর বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করেন চেয়ারম্যান ময়না। এতে রাজী না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেন চেয়ারম্যান ময়না। এ বিষয়ে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী বাক্ষ্যা দিয়ে বলেন ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই উপজেলা পরিষদের মাসিক সাধারণ সভায় উপজেলা প্রকৌশলী এলজিইডি, রাজশাহী জেলা প্রশাসক ভিডিও কনফারেন্সের পরামর্শ অনুযায়ী চলতি বর্ষা মৌসুমে ঈদে ঘরমূখী মানুষের যাতায়াত নির্বিঘœ করার লক্ষ্য ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা জরুরীভাবে মেরামত করতে রাস্তার তালিকাসহ প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। সেই মর্মে উপজেলা পরিষদ উপজেলার মাসিক সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক উপজেলার রাজস্ব খাত থেকে ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা অনুমোদিত হয়। বরাদ্দকৃত অর্থে বিধি মোতাবেক ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে রাস্তার সংস্কার কাজ করা হয় এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে বিলের চেক প্রদান করা হয়। তাছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা পরিদর্শন শেষে সন্তোষ প্রকাশ করে বাকি রাস্তাগুলো সময়ের অভাবে পরিদর্শন না করতে পারায় অফিসার বরাবর ঠিকাদার কর্তৃক তিন লাখ ৯০ হাজার টাকার বিডি নং (রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক তানোর শাখা (০০২৫৮০৩) গ্রহণ এবং পরিদর্শন শেষে ফেরত প্রদান করেন তাই এখানে উপজেলা চেয়ারম্যানের অর্থ আতœসাতের কোনো প্রশ্নই আসে না। অভিযোগে অরো বলা হয় একই অর্থবছরে মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এক লাখ ৮৭ হাজার টাকা ও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেরামতের জন্য ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে উপজেলা চেয়ারম্যান সেই টাকা উত্তোলন করলেও এখানো বিতরণ করেননি। এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের (স্মার্টমুদ্রাক্ষরিক) কম্পিউটার অপারেটর তৌফিকুল ইসলাম বাক্ষ্যা দিয়ে বলেন, ২০১৯ সালের ৩০ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যান স্যারের যৌথ স্বাক্ষরে ওই অর্থ উত্তোলন করা হয়। কিšত্ত দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী ও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা চুড়ান্ত না হওয়ায় এসব অর্থ ফেরত যাবার উপক্রম হলে অর্থ উত্তোলন করে আমার দপ্তরে গচ্ছিত হেফাজতে রাখতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌখিক নির্দেশ দেন। নির্দেশ পাবার পর আমি শুধুমাত্র দায়িত্ব পালন করে আসছি। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের দপ্তরের কর্মচারীর মাধ্যমে উক্ত অর্থ বিতরণের জন্য নথিটি হস্তান্তরের নির্দেশ প্রদান করেন আমি সেই নির্দেশ মোতাবেক নথিটি নির্বাহী কর্মকর্তা স্যারের দপ্তরে হস্তান্তর করেছি এখানে উপজেলা চেয়ারম্যানের অর্থ আতœসাতের কোনো সুযোগ নাই। জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো চিঠিতে ইউএনও আরো উল্লেখ করেন, উপজেলা পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর তৌফিকুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর থানায় মোটরসাইকেল ছিনতাই মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি মামলাটি এখানো চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন। কিšত্ত উপজেলা চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে দিচ্ছেন না বরং তৌফিকুলের বিভিন্ন অপকর্মে সহায়তা করছেন এতে উপজেলা পরিষদের ভাবমূর্তিক্ষুন্ন হচ্ছে। তবে আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমন মন্তব্য করতে পারেন কি না সেটা নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এবিষয়ে উপজেলা পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর তৌফিকুল ইসলাম ব্যাক্ষা দিয়ে বলেন, এবিষয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে, আদালত যদি আমাকে দোষী প্রমাণ করে সাজা দেয় তাহলে আমি তা মাথা পেত নিব। ইউএনও’র চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয় সরকারী খাস জমিতে অবৈধভাবে পাকাবাড়ী নির্মাণ করায় ইউএনও’র নির্দেশে উপজেলা ভূমি অফিসের নাজির ও সার্ভেয়ার তা ভেঙে দেন। উপজেলার গঙ্গারামপুরে স্বপ্না নামের মহিলা আওয়ামী লীগের এক কর্মী বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। এ ঘটনায় ২৭ আগস্ট দুপুরে ইউএনও’র বিরুদ্ধে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন উপজেলা চেয়ারম্যান ময়নার অনুসারী উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান সোনিয়া সরদার। এ সময় সোনিয়া ইউএনও’র বিরুদ্ধে সেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তোলেন এবং ৭ দিনের মধ্যে ইউএনওকে তানোর থেকে প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম দেন। এবিষয়ে উপজেলা নারী ভাইস-চেয়ারম্যান সোনিয়া সরদার ব্যাক্ষা দিয়ে বলেন, ঘটনার দিন তিনি উপজেলার ছোট হলরুমে এসএডোর প্রোগ্রামে ছিলে এবং ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের একটি অনুষ্ঠানে বেলপুকুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন,এসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আমি কিভাবে ইউএনও’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ও মানববন্ধনে নেতৃত্ব দিলাম সেটা আমার বোধগম্য নয়। এবিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না বলেন, আমি চাই এসব অভিযোগের সঠিক তদন্ত হোক তাতে আমি যদি এসব করে থাকি যেকোনো শাস্তি মাথা মেনে নিতে আমার কোনো আপত্তী নাই। তবে আমি পর পর দুই বার বিপুল ভোটের ব্যবধানে কলমা ইউপির চেয়ারম্যান ও একবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি সমাজে আমার একটা আলাদা সম্মান ও মর্যাদা রয়েছে উপজেলার ছোট-বড় সবাই আমাকে পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি ইমেজ সম্পন্ন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে এক নামে চিনেন। এসব বানোয়াট ও গায়েবী অভিযোগের খবরে এমনিতেই সমাজে আমার যেই সম্মান ও ভাবমূর্তিক্ষুন্ন হয়েছে তার দায় কে নিবেন। আবার তদন্তে আমার বিরুদ্ধে উঙ্খাপিত এসব অভিযোগ প্রমাণ হয়নি তাহলে রাজনৈতিক,পারিবারিক ও সামাজিকভাবে আমার যে সম্মাহানী হয়েছে সেই দায় কে নিবেন ?। এদিকে উপজেলা প্রশাসনের একজন দায়িত্বশীল শীর্ষ কর্মকর্তা হয়ে কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আরেকজন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত শীর্ষ জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে এই রকম অভিযোগ নৈতিকভাবে তিনি করতে ও অভিযোগের কপি গণম্যাধ্যমের কাছে দিতে পারেন কি না সেটা জনমনে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এব্যাপারে একাধিকবার যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও মুঠোফোনে কল গ্রহণ না করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসাঃ নাসরিন বানুর কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ইউএনও সাহেবের এমন মনগড়া অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ডিডিএলজি চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে তাকে শতর্ক করে দিয়েছেন।