ইসিতে ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ চলে আসছে: মাহবুব তালুকদার

অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: নির্বাচন কমিশনে (ইসি) সচিবালয়ে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা চলে আসছে বলে অভিযোগ করেছেন আলোচিত নির্বাচন কমিশনার মাহাবুব তালুকদার। এই স্বেচ্ছাচারিতা এতদসংক্রান্ত সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ও নির্বাচন কমিশন কার্যপ্রণালী বিধিমালা সমর্থন করে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে এসব কথা বলেন মাহাবুব তালুকদার। ‘নিয়োগসহ কিছু বিষয়ে সিইসির প্রতি ক্ষুব্ধ ইসির চার কশিমনার’ এমন সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হোন এই আলোচিত কমিশনার। লিখিত বক্তব্যে মাহাবুব তালুকদার বলেন, ‘২৪ নভেম্বর কমিশনের এখতিয়ারের বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ পাওয়ায় সাংবাদিকবৃন্দ আমার বক্তব্য জানতে চান। এই প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে আমার অভিমত ব্যক্ত করতে হলো। গত ১২ নভেম্বর আমি সংবাদ পাই যে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাম্প্রতিক কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় ১৩৫ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে, কিন্তু কারও বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।’
‘বিষয়টি সম্পর্কে বিশদভাবে জানোর জন্য আমি নির্বাচন কশিমন সচিবালয়ের কাছে লিখিতভাবে কিছু তথ্য ও জিজ্ঞাসার জবাব জানতে চাই। ১৪ নভেম্বর আমাকে জানানো হয় যে, হাতের লেখার অমিল বা পরিচয়পত্রের অমিলের কারণে ভাইবার সময় ওই ১৩৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়। তাদের প্রতারণার দায়ে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, আমার এমন প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়— ‘মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। কারও কারও নিকট হতে লিখিত স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে।’তিনি আরও বলেন, ‘লিখিতভাবে আমাকে আরও জানানো হয়, কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় ৩৩৮টি শূন্যপদের বিপরীতে ৮৫ হাজার ৮৯৩ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি ও উত্তরপত্র যাছাইয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদকে ৪ কোটি ৮ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এই অর্থ প্রধান নির্বাচন কমিশনার অনুমোদন করলেও কতজন পরীক্ষককে কীভাবে এই টাকা প্রদান করা হয়, তার কোনও হিসাব নির্বাচন কশিশনের কাছে নেই। এমনটিক নিয়োগ কমিটির সদস্যবৃন্দ এ বিষয়ে অবহিত নন। কমিশন সচিবালয় পরীক্ষা সম্পর্কে কিছুই জানে না। পরীক্ষা প্রশ্নপত্রের বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ।’আলোচিত এই কমিশনার আরও বলেন, ‘বিগত ১৪ নভেম্বর, ২০১৯ তারিখে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে তার অফিসকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ অভিযোগ করেন যে, কমিশন সচিবালয় উক্ত নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত ও অর্থ ব্যয় সম্পর্কিত বিষয়ে কমিশনকে কোনো পর্যায়েই অবহিত করেনি। উত্তরে কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব জানান, উল্লিখিত নিয়োগ বা এতদসংক্রান্ত ব্যয় নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার বহির্ভূত। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও তার বক্তব্য সমর্থন করেন। স্বাভাবিক কারণেই নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ ২৪ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে একটি ইউও নোটের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কার্যাদির বিষয়ে কমিশনের এখতিয়ার সম্পর্কে অবহিত হতে চান।’আমি মনে করি অভ্যন্তরীণ অনিয়মের কারণে, এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। অনেক ক্ষেত্রে সচিবালয়ের কোনও দায়বদ্ধতা নেই, কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে প্রায় সর্বক্ষেত্রেই দায় বহন করতে হয়। এই অনভিপ্রেত অবস্থার অবসানের জন্য নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত বিষয়ে সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ও নির্বাচন কমিশন কার্যপ্রণালী বিধিমালা কঠোরভাবে পরিপালন করা আবশ্যক। নির্বাচন কমিশন ও সচিবালয়ের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে কোনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলেও মনে করেন মাহাবুব তালুকদার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *