মতলব উত্তরে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা তারিক মাহমুদের বিরুদ্ধে ২৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক: চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা তারেক মাহমুদ হাসানের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,বিগত ৩ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে যুব উন্নয়ন অফিসের আয়োজনে উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকল্পের আওতায় শিক্ষিত বেকার পুরুষ ও মহিলাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এতে ৫৭০ জন প্রশিক্ষণার্থী তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাদেরকে ৬টি ভেন্যুতে প্রশিক্ষণ হওয়ার কথা থাকলেও অদৃশ্য কারণে দুটি ভেন্যুতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
২০১৭ সনের ৩- ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈনিক ২-৩ টি ক্লশ করে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা তারিক মাহমুদ ছুটি দিয়ে দিতেন । ২০১৭ সনের ১২ ডিসেম্বর যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা তারিক মাহমুদ অসুস্থ্য হয়ে ঢাকা বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে ওই অফিসের কেডিট সুপার ভাইজার শহিদুল ইসলাম ও মেসবাহ উদ্দিন দুটি ভেন্যুতে দৈনিক ৮ টি ক্লাশ করিয়ে সময় কাটিয়ে দিতেন। মতলব উত্তর উপজেলা যুব উন্নয়ন র্কমকর্তা তারিক মাহমুদ হোসেন চিকিৎসা শেষে ২০১৮ সনের ২৯ জানুয়ারি তারিখে অফিসে আসেন।বিনা ছুটিতে অনুপস্থিত থাকায় তার হাজিরা খাতায় অনুপস্থিতি কলামে চাঁদপুরের উপ-পরিচালক এসে স্বাক্ষর করেন।
তিনি অনুপস্থিত সময়ে কোনো ছুটি নেননি। কিন্তু নিয়মিত বেতন নিতেন । তিনি টানা ১ মাস ২২ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি ২০১৮ সনের ২৯ জানুয়ারি অফিসে যোগদান না করেই ২০১৮ সনের ৫ ফেব্রুয়ারি ১৩ লক্ষ ১১ হাজার টাকার বিল তৈরি করে উপজেলা একাউন্টস অফিসে জমা দেন । তিনি ২০১৮ সনের ৭ ফেব্রুয়ারি বিলটি পাস করে ব্যাংক হতে নগদ টাকা উত্তোলন করেন। ডিসেম্বর ২০১৭ সালে ৫শত৭০ জনের ভাতা বাবদ টাকা উত্তোলন করেন তিনি। ২০১৭ সালে ডিসেম্বর মাসে ১৩১ জন প্রশিক্ষণার্থী অনুপস্থিত ছিলেন । ফলে ৪শত৩৯ জনকে তিনি (যে যত দিন উপস্থিত ছিলেন) দৈনিক ১০০ টাকা ভাতা হিসেবে তাদেরকে প্রদান করেন । ১৩ লক্ষ ১১ হাজার টাকার মধ্যে ডিসেম্বর মাসের প্রশিক্ষণ বাবদ ৯ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা প্রদান করেন। ডিসেম্বর মাসেই প্রশিক্ষনের অবশিষ্ট ৩ লক্ষ ৩১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারী এই দুই মাসের প্রশিক্ষন ভাতা বাবদ দ্বিতীয় বার ২২ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা বিল উত্তোলন করেন। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারী ২০১৮ সাল প্রশিক্ষণ ভাতা বাবদ ২০ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা প্রদান করেন। অবশিষ্ট ১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে তিন মাসের প্রশিক্ষণ ভাতা বাবদ বরাদ্দ আসে ৪৬ লক্ষ টাকা।তিনি প্রশিক্ষণার্থী দের মিথ্যা উপস্থিতি দেখিয়ে ভাতা বাবদ ৪৬ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেন । তন্মধ্যে তিন মাসের প্রশিক্ষণ ভাতা বাবদ ৩০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন। এখানে ১৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে।
যে সকল প্রশিক্ষণার্থী মাসে এক দিনে ও উপস্থিত হননি এমন তাদের হাজিরা খাতায় অফিসের বাইরের লোক দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেন উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা তারিক মাহমুদ। এ দিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অফিসের এক কর্মকর্ত জানিয়েছেন, নির্দিস্ট সময়ের পরেও খোলা হয় তাদের ব্যাংক হিসাব। শুধু তাই নয়, একই সাথে তারা একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। তাদের অনেককেই মাসিক সম্মানী ভাতা থেকে ৮০% টাকা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা তারিক মাহমুদকে প্রতি মাসে উত্তোলন করে দিয়ে দিতেন। এই অঙ্গিকার করেই অনেককে চাকুরি দিতেন তিনি।সেখানে শুধু প্রশিক্ষণ ভাতা হতে আত্মসাৎ করেন ১৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা । তিন মাসের দুটি ভেন্যুতে প্রশিক্ষকদের সম্মানী ভাতা বাবদ বাজেট এসেছে ১০ লাখ টাকা। তিনি প্রশিক্ষনার্থীদের ভাতা বাবদ দিয়েছেন ৪ লক্ষ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা । তিনি সর্ব মোট ২৩ লক্ষ ২২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করেন।তন্মধ্যে প্রশিক্ষণ ভাতা বাবদ ১৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। সম্মানী ভাতা বাবদ ৫ লাখ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং জরিপ ও রেভিনিউ বাবদ আদার ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার ও উপ-পরিচালকের বরাবর অভিযোগ করলে তারা কোনো প্রকার ব্যবস্থা এখনো পর্যন্ত ব্যবস্থা নেননি বলে জানা যায়।
সরকারের এত লক্ষ লক্ষ টাকা হরিলুটের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কোনো টনক লড়বে কী?