ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ বাগেরহাটে ২৩৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত ছুটি বাতিল
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির.সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার,বাগেরহাট: সুন্দরবন উপকূলে ধেয়ে আসছে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। এর প্রভাবে সাগর খুবই বিক্ষুদ্ধ রয়েছে। এজন্য শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সকালে মোংলা সমুদ্র বন্দরসহ আশপাশ উপকূলীয় এলাকাকে (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা) ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন। এর অংশ হিসেবে জেলার সকল ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও সব উপজেলায় একটি করে মেডিকেল টিম ও কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে।শুক্রবার (০৮ নভেম্বর) বেলা ১২টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুর্যোগ মোকাবিলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কামরুল ইসলামকে জেলার ফোকাল পার্সন হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন- পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক দেব প্রসাদ পাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক কামরুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তানজিল্লুর রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদুজ্জামান খান, রেড ক্রিসেন্ট কর্মকর্তা অধ্যাপক বুলবুল কবির, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বাগেরহাটের উপ-সহকারী পরিচালক মাসুদ সরদারসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। সভায় জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ জানান, জেলায় ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। দুর্যোগে কোথাও বড় ধরনের সমস্যা হলে তাৎক্ষণিকভাবে খবর নেওয়ার জন্য জেলায় ১০টি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলায় আমাদের মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে জনসাধারণকে সচেতন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা স্ব-স্ব উপজেলায় সভা করবেন। এছাড়া সমুদ্রে থাকা সকল নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি কোনো নৌযান নির্দেশ অমান্য করে যাতে চলতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউপি চেয়ারম্যান আছাদুজ্জামান মিলন বলেন, ইতোমধ্যে আমরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করেছি। ওয়ার্ড পর্যায়ে ইউপি সদস্যরা জনসাধারণকে সচেতন করছেন। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ বর্তমানে মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আগামীকাল শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে আঘাত হানবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য সাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আরো উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য সাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র প্রভাবে মোংলা সমুদ্র বন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে খোলা হয়েছে তিনটি কন্ট্রোল রুম। বন্দরে এই মুহূর্তে মেশিনারী, ক্লিংকার, সার, জিপসাম, পাথর, সিরামিক ও কয়লাসহ দেশি-বিদেশি মোট ১৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এসব জাহাজে পণ্য খালাসে সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলেও জানান বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন। পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান জানান, ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অবস্থা প্রতিকূল হলে দুবলার চরে জেলেদের মাছ ধরতে অনুমতি দেয়া হবেনা। এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে।