১০০ গজে স্বামী-স্ত্রীর তিন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত

ডেস্ক রিপোর্ট: স্বামী-স্ত্রীর তিন প্রতিষ্ঠান। তাও আবার একই ইউনিয়নে এবং ১০০ গজের ব্যবধানে। এর মধ্যে দুটির আবার নামকরণ করা হয়েছে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে। তিনটি প্রতিষ্ঠানই এবার এমপিওভুক্ত হয়েছে। এমন তিনটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকায় স্থান পাওয়ায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- দেউলমুড়া এনআর টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে দেউলমুড়া জিআর মডেল বালিকা বিদ্যালয় ও দেউলমুড়া জিআর বালিকা বিদ্যালয় (সেক্রেটারিয়েল সায়েন্স)। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান স্বামীর, বাকি দুটি স্ত্রীর। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এমপিওবঞ্চিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাদের অভিযোগÑ এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য জালিয়াতিতে ভরা। স্বামীর প্রতিষ্ঠানের একটি নির্মাণাধীন ভবন থাকলেও সরেজমিন গিয়ে পাওয়া যায়নি কোনো শিক্ষার্থী। এমনকি শিক্ষক-কর্মচারীকেও পাওয়া যায়নি। অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী দেখিয়ে এমপিওভুক্তির অভিযোগ উঠেছে। অথচ এ উপজেলায় এর চেয়েও ভালো প্রতিষ্ঠান ছিল। জানা যায়, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের মীরের দেউলমুড়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। যার নাম দেওয়া হয় মীরের দেউলমুড়া জিআর মডেল বালিকা বিদ্যালয়। এই প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মোসা. রুবা খাতুন। এই প্রতিষ্ঠানের নামেই খোলা হয় কারিগরি শাখা। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হলেন তার স্বামী হাতেম হাসিল উচ্চ বিদ্যালয়ের বিএসসি শিক্ষক রফিকুল ইসলাম নান্নু। এই বিএসসি শিক্ষক চাকরিকালীন নিয়মভঙ্গ করে তিনি ও তার স্ত্রীর নামে নানুœ-রুবা অর্থাৎ দেউলমুড়া এনআর টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট স্থাপন করেন। এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান রফিকুল ইসলাম নান্নু নিজেই। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিধিভঙ্গ করে দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, যা চাকরিবিধিবহির্ভূত। প্রতিষ্ঠানে নেই ক্লাস চলার কার্যক্রম। অন্যদিকে সদ্য এমপিওভুক্তি হওয়া এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান ছাড়া পায় না কোনো কারিগরি শিক্ষা। ল্যাবসহ কম্পিউটারের সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও এমপিও হয়েছে। কাগজ-কলমে স্থান ও ছাত্রছাত্রীর নাম ঠিকঠাক থাকলেও বাস্তবে ভিন্নচিত্র। এখানে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এনে পরীক্ষা দেওয়া হয় এমন অভিযোগ অসংখ্য। অভিযোগ রয়েছে, এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের কাগজপত্রেও জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। যে কারণে এখন পর্যন্ত কোনো শিক্ষক-কর্মচারীকে নিয়োগ ও যোগদানপত্র দেওয়া হয়নি। এদিকে সদ্য এমপিওভুক্তির তালিকায় নাম আসায় আগের কর্মচারীদের নাম বাদ দিয়ে নতুন করে নিয়োগবাণিজ্যে নেমে পড়েছেন স্বামী-স্ত্রী। ফলে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় বিনাবেতনে চাকরি করে আসা শিক্ষক-কর্মচারীরা এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। টিনশেড এই ঘরগুলোতে ক্লাস পরিচালনার জন্য পাওয়া যায়নি কোনো বেঞ্চ, বোর্ড কিংবা পাঠদানের সরঞ্জামাদি। তবে তার দাবি, এখানে ক্লাস হয় নিয়মিত। এই প্রতিষ্ঠানে নাকি রয়েছে ৪৫০ শিক্ষার্থী। এসব অভিযোগের ব্যাপারে রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মোসা. রুবা খাতুনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। হাতেম হাসিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ইসলাম নান্নু মিয়া তার প্রতিষ্ঠানে গত ১৫ বছর ধরে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। গত আগস্ট মাসেও তিনি বেতনভাতা উত্তোলন করেছেন। তিনি আরও জানান, নিজের প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ায় খুব তাড়াতাড়ি চাকরি থেকে ইস্তফাপত্র জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফি উল্লাহ জানান, তালিকায় স্থান পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর যাবতীয় তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাইয়ের পরেই চূড়ান্ত এমপিও পাবেন বলে জানান এই শিক্ষা কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীমুর রহমান জানান, এমপিওভুক্ত তালিকায় নাম এলেই যে প্রতিষ্ঠান বেতনভুক্ত হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। যেসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোকে আরও যাচাই-বাছাই করে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশনা এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *