জুয়া থেকে হুইপের আয় ১৮০ কোটি টাকা: পুলিশ পরিদর্শক বরখাস্ত
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ও সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে জুয়া থেকে ১৮০ কোটি টাকা আয়ের অভিযোগ আনা সেই পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদ সাইফুল আমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এআইজি (পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট-২) এর পক্ষে এআইজি (পিআইও-১) আনোয়ার হোসেন খান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই আদেশ দেয়া হয়। এছাড়াও মানহানি করায় পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদ সাইফুল করিমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সাইবার ট্রাইবুন্যালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর কয়েকটি ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ওই চিঠিতে বলা হয়, রাজধানীর উত্তরা এপিবিএনে কর্মরত নিরস্ত্র মাহমুদ সাইফুল আমিন বিভাগীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপ, জনসম্মুখে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন করা তথা অসদাচরণের দায়ে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ১২(১) মোতাবেক এতদ্বারা চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি ডিআইজি, রংপুর রেঞ্জ, বাংলাদেশ পুলিশ, রংপুরের কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকবেন এবং প্রচলিত বিধি মোতাবেক খোরাকি ভাতা প্রাপ্য হবেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল আমিন অভিযোগ করেন- চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাবের জুয়ার আসর থেকে গত পাঁচ বছরে ক্লাবটির মহাসচিব ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী ১৮০ কোটি টাকা আয় করেছেন। পাঠকদের জন্য পুলিশ পরিদর্শক সাইফ আমিনের দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হল-
ক্লাব-জুয়া-সাংসদ এবং ওসিঃ
‘‘ক্যসিনো, ফ্লাশ, হাউজি, হাজারি, কাইট, পয়শা (চাঁন তারা) এগুলো আবহমান কাল থেকেই মহানগর ও জেলা সদরের ওসিদের বিনা ঝামেলায় মোটা টাকা পাওয়ার পথ।
মহানগরের ফ্ল্যাটকেন্দ্রিক দেহ ব্যবসা, ম্যাসেজ পার্লারগুলো ওসি সাহেবদের ২য় ইনকাম জেনারেটিং এসিসট্যান্স করে, থানার ক্যাশিয়ার কালেকশন করে ওসির প্রতিনিধি হিসেবে। ক্লাবপাড়ার ওসিরা এই দুই খাত থেকেই দৈনিক ৫ লাখ করে নিলেও মাসে সেটা দেড় কোটিতে পৌছায়। এবার আছে থানার সিভিল টিম, সিয়েরা ডে/নাইট, লিমা ডে/ নাইট/ গল্ফ ডে নাইট।
এরপর ডিবি। ডিবি একসঙ্গে নেয় না, তালিকা অনুযায়ী ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করা হয়। প্রতি মাসেই স্ব স্ব ইউনিট থেকে কর্মরত অফিসারদের তালিকা আপডেট করে হাউজগুলোতে পাঠানো হয়।
বাকি থাকে মাদক, ওসিরা এখন মাদকের টাকা নেয় না। মফস্বলের ওসিরা চায় সারা বছর মেলা। মেলা মানে ধামাকা ধামাকা নৃত্য, জুয়া, হাউজি, ওয়ান/টেন আর ডাব্বা খেলা। দৈনিক ওসির ৫০ হাজার, মাসান্তে ১৫ লক্ষ, তিন মাস চললে ৪৫। ব্যস! আগের পোস্টিং ফ্রি, আর পরেরটা মজুদ। বাকি দিনে যা পান সব বোনাস। ঢাকায় মেনন সাহেব একটির চেয়ার অলঙ্কৃত করেছেন। দোষের কিছু নাই। রাজনীতি বলে নকশালীরা টাকশালি। অর্থাৎ টাকশালের মালিক তারা হন। চট্টগ্রামে শামসুল হক মাস্টার (!)। ছিঃ ধিক্কার জানাই। আমার নিজের হিসেবে তিনি আজ ৫ বছর চট্টগ্রাম আবাহনীর জুয়ার বোর্ডের মালিক, তত্ত্বাবধায়ক এবং গডফাদার। দৈনিক সর্বনিম্ন ১০ লাখ করে নিলেও আজ ৫ বছরে শুধু জুয়া থেকে নিয়েছেন প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। ক্লাবটি হালিশহর থানায়, এমপি সাহেব ওসির জন্য মাসে হাজার দশেক টাকা পাঠান ছিঁচকে ছিনতাইকারী ও মাদকসেবী দীঘলের মারফত ( তথাকথিত যুবলীগ নেতা)। টাকার এত অবনয়নে হালিশহরের ওসিরা সেই টাকা নেন না। যদিও ওই থানায় ১৩০০টি দেহ ব্যবসার আলয় আছে। ওসি দৈনিক বাসা প্রতি ৫০০ টাকা করে ৬০ হাজার পান। মাসে এখানে ১৮ লাখ পান, তাই মাস্টারের জুয়ার আখড়া মুফতে চললেও রা করেন না। এই হক মাস্টারের অর্থশালী হয়ে ধরা কে সরা জ্ঞান করার অন্য কারবার হলো ইয়াবা ট্রানজিট। সরকারের কড়াকড়ি আরোপের আগ পর্যন্ত টেকনাফ থেকে আসা ইয়াবার ৮০ ভাগ তার পটিয়ায় ট্রানজিট নিতো। এবং র্যাব এর এনকাউন্টারে মাস্টার সাবের ইয়াবা উইং কমান্ডার নিহত হলে দীর্ঘ একযুগ পর চট্টগ্রামের স্টেশন কলোনি ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। শত অভিযান আর আন্তরিকতা স্বত্তেও যা বন্ধ করতে পারেননি সিএমপির সাবেক কমিশনার জনাব মোহাঃ সফিকুল ইসলাম, জনাব জলিল, জনাব ইকবাল বাহার চৌঃ। অথচ হক মাস্টার ধোয়া তুলশী রয়ে গেলেন। জুয়া দিয়ে এবং নিয়ে দেশময় প্রায় একই অবস্থা। আগের সরকারে করেছেন খোকা, আব্বাস, ফালু, এখন করছেন মেনন, শামসু মাস্টার, খালিদ। কিন্তু সব আমলেই কমন আছেন ব্রাত্য ওসি সাহেব।’’