র্যাব সদর দফতরের কাজও করতেন টেন্ডার কিং শামীম!
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি চালিয়ে আসা টেন্ডার কিং খ্যাত গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে নগদ ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও প্রায় ২০০ কোটি টাকার এফডিআর চেক, লাইসেন্সবিহীন অস্ত্র, মাদকসহ আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তাকে বাদ দিয়ে কেউ বা কোনো প্রতিষ্ঠান মতিঝিল-পল্টন এলাকার সরকারি প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার নিতে পারতেন না। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় তিনি টেন্ডার কিং হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তিনি র্যাব সদর দফতর, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, নিউরো সাইয়েন্স হাসপাতাল ও সচিবালয়সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে একহাতে কাজ করতেন। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শামীমকে তার নিকেতনের বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে আটক করে র্যাব। র্যাব দাবি করে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শামীমকে তার ৭ দেহরক্ষীসহ আটক করা হয়েছে। র্যাব জানায়, শীর্ষ রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও ছিল তার বিশেষ সখ্যতা। সহযোদ্ধা হিসেবে পাশে ছিলেন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গেও লিয়াজো রক্ষা করে চলতেন তিনি। নিজে যেমন একাধিক বডিগার্ড নিয়ে ঘুরতেন, তেমনি অবৈধ অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনীও ছিল তার। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, তার অবৈধ টেন্ডারবাজি থেকে আয়ের একটি অংশ তিনি দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ ও মধ্যম সারির কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়মিত মাসোহারা হিসেবে দিতেন। এছাড়া, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অর্থ দিয়ে সেসব অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দিতেন। সমাজের গণমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে তোলা ছবি দেখা গেছে, তার অফিস ও বাসাতেও। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এসব ছবি দিয়ে প্রভাবশালীদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে প্রভাব খাটাতেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একসময় মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠ ছিলেন যুবদল করা জি কে শামীম। ওই সময় মির্জা আব্বাসের পরিচয় দিয়ে তিনি টেন্ডারবাজি করতেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন তিনি। একপর্যায়ে যোগ দেন যুবলীগে। যদিও যুবলীগের পক্ষ থেকে তার কোনো পদবি নেই বলে দাবি করা হয়েছে। তবে জি কে শামীম নিজেকে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক বলে পরিচয় দিতেন। প্রায় ৪ ঘণ্টা জি কে শামীমের নিকেতনের ডি ব্লকের ৫ নম্বর রোডের ১৪৪ নম্বর অফিস ঘিরে রেখে বিকেলে তাকে আটক দেখায় র্যাব। তাকে আটক ও সম্পদ উদ্ধারের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম ও র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারওয়ার-বিন-কাশেম। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব জানায়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই জি কে শামীমের অফিসে অভিযান চালানো হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে বিপুল সংখ্যক টাকা ও স্থায়ী সম্পদ উদ্ধার করা হয়। এত টাকা বাসায় রাখা অপরাধ কিনা এমন প্রশ্নে র্যাব কর্মকর্তারা বলেন, শামীমের সম্পদ বৈধ কি অবৈধ সেটি আদালতে প্রমাণ হবে। সে যদি আদালতে সঠিক হিসাব দেখাতে পারে, তাহলে তার সম্পদ তারই থাকবে।
এদিকে অভিযান চালানোর সময় শামীমের অফিস থেকে সরকারি প্রায় ১৭টি বড় বড় প্রকল্পের ঠিকাদারি কাগজপত্রের তালিকা পায় র্যাব। সেখানে দেখা যায়, স্বয়ং র্যাব সদর দফতরের প্রকল্পের ঠিকাদারের কাজও পেয়েছেন কথিত এই যুবলীগ নেতা। একটি তালিকা থেকে দেখা যায়, র্যাব সদর দফতর, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, নিউরো সাইয়েন্স হাসপাতাল, বিজ্ঞান জাদুঘর, ক্যানসার হাসপাতাল ও সচিবালয়সহ প্রায় ২৫০০ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজের একটি তালিকা। জি কে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারাও দাবি করছেন, জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডে এসব প্রকল্প পেয়েছেন এবং কাজ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির একজন সিনিয়র ম্যানেজার বলেন, বর্তমানে আমাদের আনুমানিক ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে। আমাদের অফিসে এত টাকাতো থাকবেই। এর আগে বিকেল ৪টায় অভিযান শেষে শামীমসহ ৮ জনকে আটক করার কথা জানায় র্যাব। এই এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম ‘শামীম ঠিকাদার’ নামেও পরিচিত। রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় শামীম ঠিকাদারি কাজ করে থাকেন। শুধু তাই নয় গণপূর্ত ভবনের বেশি ভাগ ঠিকাদারি কাজ করেন তিনি। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলেও গণপূর্তে এই শামীমই ছিলেন ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি। সেই জিকে শামীম এখন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক।