ঝিনাইদহ জেলা জুড়েই গরুর খামারে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহ ভাইরাস ‘লামথি স্কিন ডিজিজ’ হতাশ ও আতঙ্কে গরুর খামারিরা

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহ জেলা জুড়েই গরুর খামারে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহ ভাইরাস ‘লামথি স্কিন ডিজিজ’ হতাশ ও আতঙ্কে রয়েছে জেলার গরুর খামারিরা। ঝিনাইদহের গ্রামে গ্রামে ‘লামথি স্কিন ডিজিজ’ নামে একটি ভাইসারে আক্রান্ত হচ্ছে গরু। এতে গরু পালকদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। পশু সম্পদ কর্মকর্তারা বিচলিত না হয়ে খামারী ও গুরু পালকদের মশারির মধ্যে গরু রাখার পরামর্শ দিয়েছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, আক্রান্ত গরুগুলোর প্রথমে পাঁ ফুলে যাচ্ছে। এরপর শরীরে জ্বর আসছে। এই জ¦র থাকা অবস্থায় ২/৩ দিনের মধ্যে গোটা শরীরে বসন্তের মত গুটি গুটি ফোসকা বের হচ্ছে। যা পরবর্তীতে দগদগে ঘাঁয়ে পরিনত হচ্ছে। গরুর মালিকরা বলছেন, এই রোগে আক্রান্ত গরুগুলো কিছুই খেতে পারছে না। ফলে দ্রুতই তারা রোগাক্রান্ত ও দূর্বল হয়ে পড়েছে। স্থানিয় পশু চিকিৎসকেরা বলছেন, এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ। ইতিপূর্বে কখনও দেখা যায়নি। ৯০ এর দশকে আফ্রিকাতে এই রোগ দেখা দেয়। এই রোগ মশার কামড় থেকে ছড়াই। এবার বাংলাদেশের অনেক স্থানেই এই রোগ দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকরা গরুগুলো মশারির মধ্যে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় প্রতিটি গ্রামেই গরুর এই রোগ দেখা দিয়েছে। তবে উপজেলার নিয়ামতপুর, মালিয়াট, জামাল ও কোলা ইউনিয়নে এর প্রাদুর্ভাবটা বেশি। সরেজমিনে কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকদের গোয়ালের হালের বলদ, দুধের গাভী, সদ্যজাত বাছুর সব বয়সী গরুই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কালীগঞ্জের পার-খালকুলা গ্রামের মোফাজ্জেল হোসেনের ফ্রিজিয়ান জাতের একটি দুধের গাভীর পেছনের একটি পা ফুলে আছে। গাভিটির সারা শরীরে বসন্তের মত গুটি গুটি বের হয়েছে। একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে ইমারত মন্ডলের ২ টি গরুর। তালিয়ান গ্রামের নারায়ন বিশ্বাস জানান, তার গোয়ালের মোট ৪ টি গরুর পা ফুলে গায়ে ফুসকা বের হয়েছে। তার একটি বড় বলদের অবস্থা খুবই খারাপ। পায়ের ফোলা স্থানে ক্ষত হয়ে পঁচন ধরেছে। ডাউটি গ্রামের কৃষক লিখন তরফদার জানান, তার হাল চাষের ৩ টি বড় বলদের অবস্থা বেশ খারাপ। স্থানিয় চিকিৎসক দেখিয়ে ঔষধ খাওয়াচ্ছেন, কিন্ত সুস্থ হচ্ছে না। একাধিক পষু চিকিৎসক এর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, উল্লেখিত গ্রাম ছাড়াও হরদেবপুর, বাগডাঙ্গা, উল্ল্যা, তালিয়ান, কাবিলপুর, বাসুদেবপুর, হুদা-ডাউটি, বড়-বায়সা, চুকাইতলা, খেদাপাড়া, রামচন্দ্রপুর, খালকুলা. ময়ধরপুর, কোলা, কাদিরডাঙ্গা, কামালহাট, দৌলতপুর. খড়িকাডাঙ্গা সহ পাশ^বর্তী এলাকার গ্রামগুলোর গরুর শরীরে এই রোগ দেখা দিয়েছে। তারা জানান, দিন যতই যাচ্ছে, এই রোগ ততই ছড়াচ্ছে। নতুন নতুন গ্রামে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বাড়ছে। এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আতিকুজ্জামান জানান, এই রোগটি শুধু কালীগঞ্জ উপজেলায় নয়, দেশের অনেক স্থানে দেখা দিয়েছে। লামথি স্কিন ডিজিজ (ষঁসঢ়যু ংশরহ ফরংবধংবং) বলে এক ধরনের ভাইরাস এটা। ইতিপূর্বে এই রোগ দেখা যায়নি। তিনি বলেন, এই রোগে মৃত্যুর ঝুকি অনেকটা কম। তবে এতে গরুর অনেক ক্ষতি হয়। তিনি বলেন, এই রোগ দেখা দিলে অন্য গরু থেকে আক্রান্তটা আলাদা করে রাখতে হবে। রোগটি মশার মাধ্যমে ছড়ানোর কারনে অবশ্যই রোগাক্রান্ত গরুকে মশারির মধ্যে রাখতে হবে। আক্রান্ত গরুর জ¦র হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খাওয়াতে হবে। আর এভাবে ৪ থেকে ৫ দিন অতিবাহিত হলে এবং ক্ষত জায়গা খুব খারাপ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এটা কোনো মরণব্যাধি নয় বলেও তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *