মোংলার উত্তর বাঁশতলা প্রাঃ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ
মোংলা প্রতিনিধি: মোংলায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতায় ভেঙ্গে পরেছে স্কুলের শিক্ষা ব্যাবস্থা। শিক্ষকের একের পর এক অনিয়ম দুর্নীতি আর খামখেয়ালীপনায় স্কুলে ছাত্র/ছাত্রীর আসাও কমে গেছে বলে অভিযোগ করেছে অভিভাবকরা। উত্তর বাঁশতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেব কুমার মন্ডল’র বিরুদ্ধে এমন নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ থাকলেও রাজনৈতিক ক্ষমতাবলের কারনে ব্যাবস্থা নিতে পারছেনা কর্তৃপক্ষ। ছুটি বা অনুমতি না নিয়ে দিনের পর দিন স্কুলে অনুপস্থিত থেকে অন্যাত্র কাজ করার অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত নেমেছে উপজেলা শিক্ষা অফিস। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক দেব কুমার ওই বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। নিয়মিত স্কুলে না এলেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর বিদ্যমান থাকে তার এবং ৮/১০ দিন স্কুলে অনুপস্থিত থেকে শিক্ষক হাজিরা খাতায় একদিনে স্বাক্ষর করেন তিনি। আবার বিদ্যালয়ে এলেও পাঠদান কক্ষে প্রবেশ না করে বাহিরের লোকজনের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তিনি। সরকারের নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে সকাল ৯টার স্থানে স্কুলে আসে সাড়ে ১০টা থেকে ১১টায়। আবার বিকাল ৪টার স্কুল দেড়টায় ছুটি দিয়ে চলে যান প্রধান শিক্ষক দেব কুমার। প্রায় সময় তিনি স্কুলে না এসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অন্য শিক্ষকদের উপজেলা শিক্ষা অফিসের কাজের কথা বলে বিভিন্ন জায়গায় নিজের ব্যাক্তিগত কাজ করেন তিনি। এছাড়াও তিনি ক্ষমতাশীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসে গিয়ে কর্মকর্তাদের সাথে আঁতাত করে কাছের শিক্ষকদের অন্য স্কুলে বদলী আবার দুরের শিক্ষকদের কাছের স্কুলে বদলী বানিজ্যে মেতে থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার এ কর্মকান্ডে স্কুলের অন্য শিক্ষকরা আপত্তি জানালে তাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন প্রধান শিক্ষক দেব কুমার। এছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভর্তি ফি, পরীক্ষার সনদ বাবদ অর্থ নেয়া,পরিক্ষার অতিরিক্ত ফি আদায় এবং জন্মনিবন্ধন প্রত্যয়ন প্রদানে অর্থ নিয়ে থাকেন তিনি। এমনকি বিদ্যালয়ের পানির ট্যাংকি, সৌর প্যানেলসহ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় মালামাল নিজের বাড়ীতে ব্যবহার করছেন বলে বহু অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্যরা তার কাছের লোক হওয়ায় পাঠদান কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে বলেও অভিভাবক ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। গত ২০,২২,২৪ ও ২৫ জুলাই এবং ৬,৭, ও ৮ আগষ্ট অফিসের অনুমতি না নিয়ে তিনি স্কুলের ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে অন্যত্র ব্যাক্তিগত কাজে ব্যাস্ত থাকেন প্রধান শিক্ষক দেব কুমার। এমন অভিযোগে সহকারী শিক্ষা অফিসার পুস্পজিৎ মন্ডল ঘটনাস্থলে গিয়ে তার সত্যতা পান। উপজেলা শিক্ষা অফিস বিষয়টি আমলে নিয়ে গত ২১ আগষ্ট ২০১৯/৫৯৬ নং-স্বারকে তিন দিনের সময় বেধে দিয়ে এক অফিস আদেশের মাধ্যমে স্কুলে অনুপস্থিত থাকার ব্যাখ্যা চান কর্তৃপক্ষ। বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে জাবাব না দিলে বিভাগীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে বলেও ওই চিঠিতে উল্লেখ করেন। এর আগে দীর্ঘদিন স্কুলে অনুপস্থিত ও নিজ স্ত্রী একই স্কুলের শিক্ষিকাকে সুযোগ দেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে দেব কুমারের বিরুদ্ধে। এঘটনায় গত ১০ জানুয়ারী তদন্তে গিয়ে সত্যতা পেয়ে ব্যাবস্থা নেয়ার সুপারিশ করায় উপজেলা শিক্ষা অফিসেই সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পুস্পজিৎ মন্ডলকে লাঞ্চিত ও মারধর করে অবরুদ্ধ করে রাখে অভিযুক্ত শিক্ষক দেব কুমার মন্ডল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষক দেব কুমার মন্ডলের সাথে তার ০১৭২৭০১৮২১৩ নম্বরের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক কথা শুনে ফোনটির সুইজ অফ করে দেয় তিনি।
> উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন্ত কুমার পোদ্দার জানান, প্রধান শিক্ষক দেব কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে এর আগেও বহু অভিযোগ পেয়েছি এবং বিভাগীয় ব্যাবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করেছি, যার ব্যাবস্থা নেয়ার বিষয়টি এখনও চলমান। এরই মধ্যে জুলাই ও আগষ্ট মাসে বেশ কয়েকদিন অফিস অনুমতি না নিয়ে স্কুলে অনুপস্থিত এবং হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরের বিষয় তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ।