সেই জজ মিয়ার কষ্টের জীবন

ডেস্ক রিপোর্ট: রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান জজ মিয়াকে দিয়ে সাজানো হয় মিথ্যা মামলা। তাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে আদায় করা হয় মিথ্যা স্বীকারোক্তি। এর আগে তাকে বিদেশে ভালো চাকরির প্রলোভন দেওয়া হয়। কিছুদিন জজ মিয়ার পরিবারকে সিআইডি প্রতিমাসে দুই হাজার করে টাকাও দেয়। এক সময় সেই টাকাও বন্ধ হয়ে যায়। মামলা চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় তার পরিবার। পাঁচ বছর কারাভোগের পর ২০০৯ সালে জজ মিয়া কারাগার থেকে মুক্তি পান। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু সেই আশ্বাস পড়ে আছে খাতা-কলমেই। আজও অবসান হয়নি জজ মিয়ার নিদারুণ কষ্টের জীবন। গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে কোনো রকমে বেঁচে আছেন তিনি। পুলিশি নির্যাতনের দিনগুলোর স্মৃতি এখনো তাড়া করে ফেরে। জজ মিয়া বলেন, ‘আমি তো সবই হারাইছি। আমার তো কিছুই নাই। গ্রামের বাড়িতে বাপ-দাদার একটু ভিটা ছিল, তা-ও ২১ আগস্টের মামলা চালাইতে গিয়া শেষ হয়ে গেছে। ওই ঘটনায় যারা আহত হয়েছিলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো তাদের কমবেশি সাহায্য করছেন। কিন্তু আমারে তো কোনো কিছুই করা হলো না। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাই, আমারে একটু পুনর্বসাসন করেন।’তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমাকে জেল থেকে বের করে। এ জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। কয়েক বছর আগে আসাদুজ্জামান নূর স্যারের মাধ্যমে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করি। তিনি আমাকে পুনর্বাসনের আশ্বাস দেন। আমি নিজ এলাকার এমপির কাছ থেকে একটা ডিও লেটার এনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে জমাও দিয়েছি। এর পর আর কিছু জানি না। কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আশায় আছি যে কোনো দিন হয়তো আমাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ডাকা হবে।’ জজ মিয়া বলেন, ‘দেড় বছর আগে বিয়ে করেছি। আল্লাহ আমারে একটা কন্যাসন্তান দিছে। আমার মেয়েটার জন্য তো আমার কিছু রেখে যেতে হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে জজ মিয়া বলেন, ‘আমি দোষী না হয়েও প্রায় পাঁচ বছর জেল খেটেছি। আর সিআইডিতে রিমান্ডে থাকাবস্থায় আমারে যে নির্যাতন করা হয়েছে, তার ব্যথা এখনো টের পাই। মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য আমারে চোখ বেঁধে চ্যাংদোলা করে নির্যাতন করা হয়েছে। কারা নির্যাতন করেছে আমি চোখে দেখতে পারি নাই। তবে আমাকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ কর্মকর্তা রুহুল আমিন, মুন্সি আতিক, আব্দুর রশীদ জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য ক্রসফায়ারের ভয় দেখায়। আমি তাদের যতই বলি জীবনে আমি গ্রেনেড চোখে দেখিনি, নামও শুনিনি, তারা সব কিছু জেনেশুনেও আমারে বিশ্বাস করতে চায়নি। তারা আমারে সাদা কাগজে মিথ্যা সাজানো স্বীকারোক্তি লিখে মুখস্থ করায়। পরে আদালতে আমি সেই কথা বলি। তারা তিনজন মিলে আমারে ক্রসফায়ারের ভয় দেখায়।’ ‘যারা ঘটনা ভিন্ন খাতে নিছে, প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করেছে, তাদের শাস্তি চাই। সরকার যেন মামলার রায় কার্যকর করে অপরাধীদের শাস্তি দেয়, এটাই আমার চাওয়া। আমি সব সময় বিএনপি-জামায়াতরে ভয় পাই। এই বুঝি আমার ওপর তারা হামলা করে। ভয়ে আমি কোনো ফেসবুক আইডিও খুলি নাই। তারা সুযোগ পাইলে তো আমারে ছাইড়া দিবো না। আমারে মাইরা ফেলব,’ যোগ করেন জজ মিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *