শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয় ২০ বার

ডেস্ক রিপোর্ট: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। জাতির জনকের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা দেশে না থাকায় সেই সময় প্রাণে বেঁচে যান। তবে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। ১৯৮১ সালে ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সময় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০ বার হামলা চালায় ঘাতকরা। এসব মামলার মধ্যে বোমা ও গুলিবর্ষণের ১৪টি ঘটনা রয়েছে। তবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ও ন্যক্কারজনক হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা রক্ষা পেলেও নিহত হন ২৪ নেতাকর্মী। আহত হন চার শতাধিক নেতাকর্মী। খবর আমাদের সময়’র। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতিকে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রথম সশস্ত্র হামলা হয় ঢাকায় সচিবালয়ের সামনে। সেদিন তার গাড়ি লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু গুলি করা হয়। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচিকালে ওই হামলা হয়। ওই দিন গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগ কর্মী নূর হোসেন। দ্বিতীয় হামলা হয় ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে মিছিল করে জনসভাস্থলে যাওয়ার পথে শেখ হাসিনার ট্রাক মিছিলে। ওই সময় তিনি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে আটদলীয় জোটের জনসভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। তখন পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে ২৪ জন নিহত হন। যাদের মধ্যে ৯ জন শেখ হাসিনাকে মানববর্ম তৈরি করে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হন। পরের হামলাটি হয় ১৯৮৯ সালের ১০ আগস্ট মধ্যরাতে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের গড়া দল ফ্রিডম পার্টির অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধানম-ির ৩২ নম্বরের বাসভবনে গুলি ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। শেখ হাসিনা তখন ওই বাসাতেই থাকতেন। ওই ঘটনার দুটি মামলায় ২৮ বছর পর বিস্ফোরক আইনের মামলায় ১১ আসামির যাবজ্জীবন এবং অপর দ-বিধি আইনের মামলায় একই আসামিদের ২০ বছর করে কারাদ-ের রায় দিয়েছেন আদালত। এর পর ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চতুর্থ জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনের সময় ধানম-ির গ্রিন রোডের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনকালে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। গাড়িতে গুলি লাগলেও তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। একই বছর ২৭ সেপ্টেম্বর লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর খুনি ডালিমসহ অন্যরা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। পরের হত্যাচেষ্টা হয় ১৯৯৪ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ট্রেনমার্চ করার সময় পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে। এ সময় শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনের বগি লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। অসংখ্য গুলি লাগে বগিটিতে।
১৯৯৫ সালের মার্চে রাজধানীর পান্থপথে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বোমা হামলা চালানো হয়। তখন দলের নেতাকর্মীরা তাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন। একই বছরের ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর শেখ রাসেল স্কয়ারের কাছে সমাবেশে ভাষণদানরত অবস্থায় শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। পরের হত্যাচেষ্টা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায়। ১৯৯৬ সালের ৭ মার্চ সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে শেখ হাসিনার বক্তৃতার পর হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস থেকে সভামঞ্চ লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে ২০ জন আহত হন। ২০০০ সালের ২০ জুলাই শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে জঙ্গিরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয় মাঠের পাশে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখে। ২২ জুলাই সেখানে জনসভায় শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু বোমাটি আগেই অবিস্ফোরিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনার মামলায় ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট ১০ আসামিকে গুলিতে মৃত্যুদ-ের রায় দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে এক আসামির যাবজ্জীবন কারাদ- এবং তিন আসামির ১৪ বছর করে কারাদ-ের রায় দেওয়া হয়।
২০০১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনা নির্বাচনী জনসভা করতে সিলেটে গেলে সেখানে বোমা পুঁতে রেখে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা। কিন্তু হামলার পরিকল্পনার আগের দিন জনসভাস্থলের অদূরে একটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে দুই জঙ্গি নিহত হলে ওই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। ওই ঘটনায় হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্য মাসুদ আহমেদ শাকিল ও আবু ওবায়দা হারুন আহত হয়। ওই ঘটনার মামলায় হুজির আধ্যাত্মিক নেতা মাওলানা আবু সাইদ ওরফে আবু জাফর ২০০৬ সালের ৫ অক্টোবর আদালতে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। পরের হত্যাচেষ্টা হয় ২০০১ সালের ৩০ মে। ওই দিন খুলনায় রূপসা সেতুর কাজ উদ্বোধন করতে যাওয়ার কথা ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ঘাতকচক্র সেখানে শক্তিশালী বোমা পুঁতে রাখলে তা বিস্ফোরণের আগেই গোয়েন্দা পুলিশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। ২০০২ সালের ৪ মার্চ নওগাঁয় বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। ২০০২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা সাতক্ষীরার কলারোয়ার রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালায়। ২০০৩ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বিএনপি অফিসের সামনে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। ওই দিন তার গাড়িবহরে ব্যাপক গুলিবর্ষণ করা হয়। কিন্তু অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। ২০০৪ সালের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে তার গাড়িবহরে গুলিবর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে ওই হামলা, গাড়ি ভাঙচুর, লুটতরাজের ঘটনায় প্রকৃত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা না করে উল্টো আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের আসামি করে মামলা দেয় পুলিশ। পরে ওই মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়। এর পর সবচেয়ে বড় হত্যাচেষ্টা হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। ওই দিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশস্থলে চালানো হয় গ্রেনেড হামলা। ওই ঘটনায় শেখ হাসিনা অল্পের জন্য বেঁচে যান। নিহত হন আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভী রহমানসহ ২৪ জন। ওই ঘটনার দুই মামলার বিচার প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই মামলা দুটিতে রায় ঘোষণা হতে পারে। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে। তাকে রাখা হয়েছিল জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাবজেলে। সেই সময় খাবারে ক্রমাগত বিষ মিশিয়ে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করা হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। ২০১১ সালে শ্রীলংকার একটি সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের শত্রুরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য চুক্তি করে এবং সে জন্য আগাম টাকাও প্রদান করা হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করার লক্ষ্যে একটি সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যা পরে ব্যর্থ হয়ে যায়। সবশেষ ২০১৫ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার সময়ে কাওরানবাজারে তার গাড়িবহরে বোমা হামলার চেষ্টা চালায় জেএমবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *