ওসিসহ পাঁচ পুলিশের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ
খুলনা ব্যুরো : খুলনা জিআরপি থানার মধ্যে ওসি উছমান গণি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য মিলে এক তরুণীকে ধর্ষণ করেছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই তরুণী রোববার খুলনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে জবানবন্দিতে এমন অভিযোগ করেন। আদালতের নির্দেশে গত সোমবার দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে পুলিশ। এদিকে, ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওসি উছমান গণি মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন বলেও ওই তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীর বাড়ি নগরীর মহেশ্বরপাশা এলাকায়। তার বড় বোন ও খালাতো ভাই অভিযোগ করেন, তাদের বোন (৩০) গত শুক্রবার বিকেলে যশোরে ডাক্তার দেখাতে যান। এরপর তিনি খুলনায় আসার জন্য বেনাপোল থেকে খুলনাগামী কমিউটার ট্রেনে ওঠেন। ট্রেনটি ফুলতলা এলাকায় পৌঁছলে ট্রেনে থাকা জিআরপি পুলিশ মোবাইল ফোনসেট চুরির অভিযোগ তুলে তাকে আটক করে। এরপর তাকে খুলনা রেলস্টেশনের পাশে জিআরপি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তারা জানান, খবর পেয়ে তারা থানায় গেলে জিআরপি থানার ওসি উছমান গণি এক লাখ টাকা দিলে তাদের বোনকে ছেড়ে দেবেন বলে জানান। কিন্তু তারা টাকা দিতে পারেননি। কিছু সময় পর তারা বাড়ি চলে যান। সকালে থানায় গেলে কাঁদতে কাঁদতে তার বোন জানান, রাতে থানা হাজতে ওড়না দিয়ে হাত এবং কাপড় দিয়ে মুখ বেঁধে প্রথমে ধর্ষণ করেন ওসি। ওসি ধর্ষণ করে চলে যাওয়ার পর পর্যায়ক্রমে আরও চার পুলিশ সদস্য তাকে ধর্ষণ করেন। তাদের অভিযোগ, শনিবার সকালে তাদের বোনকে পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ধর্ষণের আগে তরুণীকে পুলিশ সদস্যরা মারধরও করে। তারা আরও অভিযোগ করেন, রোববার রাতে ওসি নিজে তাদের কাছে গিয়ে ঘটনার জন্য ক্ষমা চান এবং দেড় লাখ টাকা নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন। এ ছাড়া ওসি বিভিন্নভাবে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার ওই তরুণী খুলনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন। এ ছাড়া তাকে মারধর ও গণধর্ষণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খুমেক হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে তাকে রোববার রাতে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় ওই দিন তার পরীক্ষা হয়নি। খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়কারী ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী জানান, ওই তরুণীকে গতকাল সকালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। এরপর তাকে ওসিসিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে হাসপাতালের গাইনি বিভাগে নিয়ে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ টেস্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ওই তরুণী ধর্ষিত হয়েছেন কি-না সে রিপোর্ট পেতে কয়েক দিন সময় লাগবে। এদিকে এ ঘটনায় পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম গতকাল তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদকে। অপর দুই সদস্য হলেন পুলিশ পরিদর্শক শ ম কামাল হোসেইন ও বাহারুল ইসলাম। অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে গতকাল সকাল ও দুপুরে দুই দফা খুলনা জিআরপি থানায় গিয়ে ওসি উছমান গণি পাঠানকে পাওয়া যায়নি। থানার ডিউটি অফিসার এসআই মফিজুল সাংবাদিকদের জানান, ওসি উছমান গণি খুমেক হাসপাতালে গেছেন। তিনি বলেন, থানায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে কি-না, তা তার জানা নেই। ওই দিন রাতে তার ডিউটি ছিল না। ওই রাতে ডিউটিতে ছিলেন ওসি উছমান গণি, এসআই গৌতম কুমার পাল, এএসআই নাজমুল, কনস্টেবল মিজান ও হারুন। পরে মোবাইল ফোনে কথা হলে ওসি উছমান গণি অভিযোগ অস্বীকার করে সমকালকে বলেন, ওই তরুণীকে ট্রেন থেকে পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করা হয়। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে তরুণী ও তার পরিবার ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ এনেছে। মারধর কিংবা দেড় লাখ টাকায় মীমাংসার চেষ্টার অভিযোগও সঠিক