বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির দুর্নীতির দায়ে দুদুকের চার্জশিট দাখিল
ফুলবাড়ী দিনাজপুর প্রতিনিধি: দেশের উত্তরাঞ্চলের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ টাকার কয়লা আত্মসাতে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড এর সাবেক ৭ এমডিসহ মোট ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দিনাজপুরের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের উপপরিচালক মো. শামছুল আলম চার্জশিটটি দাখিল করেন, যা পরবর্তীকালে আদালতে দাখিল করা হবে।
এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়। তার মধ্যে তদন্তে এজাহারভুক্ত ১৯ আসামির মধ্যে ৫ জনের অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাদেরকে অভিযোগপত্রে রাখা হয়নি। আর ঘটনার সঙ্গে নতুন করে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় মামলায় আরও ৯ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ২৩ আসামির মধ্যে ৭ সাবেক এমডি হলেন মো. মাহবুবুর রহমান, মো. আবদুল আজিজ খান, খুরশীদুল হাসান, কামরুজ্জামান, মো. আমিনুজ্জামান, এসএম নুরুল আওরঙ্গজেব ও হাবিব উদ্দিন আহাম্মদ। এছাড়া সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. শরিফুল আলম, সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. আবুল কাসেম প্রধানীয়া, মহাব্যবস্থাপক
(মাইন অপারেশন বিভাগ) আবু তাহের মো. নুর-উজ-জামান চৌধুরী, ব্যবস্থাপক (জেনারেল সার্ভিসেস) মাসুদুর রহমান হাওলাদার, ব্যবস্থাপক (মেইন্টেনেন্স অ্যান্ড অপারেশন) মো. আরিফুর রহমান, ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা শাখা) সৈয়দ ইমান হাসান, উপব্যবস্থাপক (কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্ট) মুহাম্মদ খলিলুর রহমান, উপব্যবস্থাপক (মেইন্টেনেন্স অ্যান্ড অপারেশন) মো. মোরশেদুজ্জামান, উপব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট) মো. হাবিবুর রহমান, উপব্যবস্থাপক (মাইন ডেভেলপমেন্ট) মো. জাহেদুর রহমানকে আসামি করা হয়।
অন্যদিকে সহকারী ব্যবস্থাপক (ভেন্টিলেশন ম্যানেজমেন্ট) সত্যেন্দ্র নাথ বর্মণ, মো. মনিরুজ্জামান, ব্যবস্থাপক (কোল হ্যান্ডেলিং ম্যানেজমেন্ট) মো. শোয়েবুর রহমান, উপমহাব্যবস্থাপক (স্টোর ডিপার্টমেন্ট) একেএম খালেদুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট) অশোক কুমার হালদার ও উপমহাব্যবস্থাপক (মাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) মো. জোবায়ের আলীকেও অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিদের পরস্পর যোগসাজশে ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত এ আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া ৫ আসামি হলেন, ব্যবস্থাপক (কোম্পানির প্ল্যানিং অ্যান্ড এক্সপ্লোরেশন বিভাগ) মো. মোশারফ হোসেন সরকার, ব্যবস্থাপক (ডিজাইন, কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড মেইন্টেনেন্স) জাহিদুল ইসলাম, উপব্যবস্থাপক (সেফটি ম্যানেজমেন্ট) মো. একরামুল হক, মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) গোপাল চন্দ্র সাহা ও সাবেক মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী। ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ টন কয়লা ঘাটতির অভিযোগে বিসিএমসিএলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বাদী হয়ে ঐ সময় ১৯ জনকে আসামি করে ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই দিনাজপুরের পার্বতীপুর থানায় মামলা করেন। মামলাটি নতিভুক্ত হওয়ায় অভিযোগ তদন্ত করেছেন দুদক। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ঐ কর্মকর্তা কর্মচারীদের নাম। বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাগজে-কলমে বেশি কয়লার মজুত দেখিয়ে প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ওই বছরের ২৩ জুলাই তিন সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছিল দুদক। সেই আলোতে দুদক দূর্নীতির সঠিক তদন্ত করে ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। এতে আসামীদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯/১০৯ এবং ১৯৪৭ সনের ২ নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২)ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।