পাথর বিক্রয় শেষ হলে খনিটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম। মধ্যপাড়া খনির ভূ-গর্ভ থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ ॥
মোঃ আফজাল হোসেন, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলের দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা ভূ-গর্ভ থেকে প্রায় ৪ মাস ধরে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। পাথর বিক্রি শেষ হলে খনিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এ ব্যাপারে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইন কোম্পানী লিঃ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করছেন বেসরকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি কে। জিটিসি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুষছে মধ্যাপাড়া খনি কর্তৃপক্ষ কে। অপরদিকে দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি প্রকল্পে গত ৩ এপ্রিল থেকে খনি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় কাজকর্ম প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। খনিতে কর্মরত প্রায় ১ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। আর খনির ডামপিং এ মজুদ পাথর বিক্রয় প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ার পথে। বন্ধের উপক্রম পাথর বিক্রি কঠিন শিলা পাথর খনি। খনিটিতে লোকসান বাড়ছে দিনের পর দিন। উত্তর অঞ্চলের একমাত্র মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিঃ (এমজিএমসিএল) বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদন শুরু হয় ২০০৭ সালে। ঐ সময় পাথর খনি থেকে দৈনিক প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মেক্ট্রিকটন পাথর উত্তোলন করা হতো। পরে উত্তোলন নেমে আসে ৫ শত টনে। কারন কারীগরি প্রযুক্তির অভাবে ভূ-গর্ভ থেকে পাথর উত্তোলন কম যায়। মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির ঐ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদন বাড়াতে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে প্রায় ৯২ লক্ষ টন পাথর উত্তোলনের বিপরিতে ১৭১.৮৬ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে খনির উৎপাদন ও রক্ষনা বেক্ষনের দায়িত্ব দেওয়া হয় জার্মানীর বেলারুশের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জার্মানীয়া ট্রাস্ট কনসোর্টিয়ামকে (জিটিসি)। চুক্তি অনুযায়ী, ১২টি নতুন ষ্টোভ (পাথর উত্তোলন ক্ষেত্র) নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু জিটিসি মাত্র ৯২ লক্ষ টন পাথরের স্থলে এ পর্যন্ত পাথর উত্তোলন করেছে ৩০.৭৬ লক্ষ টন। আর ১২ ষ্টোভের স্থলে নির্মান করেছে মাত্র ৬টি ষ্টোভ। পাথর উত্তোলন যন্ত্র ক্রিপ্ট মটর গিয়ার বক্সের পিনিয়াম নষ্টের কারন দেখিয়ে চলতি বছরের ৩ এপ্রিল থেকে পুরোপুরি ভূ-গর্ভ থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রেখেছে চুক্তিবদ্ধ ঐ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানটি। পাথর উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধ থাকার ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি কে দোষ দিচ্ছেন এমজিএমসিএল কর্তৃপক্ষ। মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পের মহা ব্যবস্থাপক (অপারেশন) মোঃ আবু তালেব ফারাজী জানিয়েছেন উৎপাদন শুরু করতে তাদের দপ্তর থেকে বার বার পত্র দেওয়া হলেও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি কোন জবাব দিচ্ছে না। তারা পাথর উৎপাদন শুরুর কোন উদ্বোগও নিচ্ছে না। কবে নাগাদ মধ্যপাড়া খনির উৎপাদন শুরু হবে তা নিশ্চিত করতে পারছে না খনি কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে বাড়ছে লোকশান এবং সরকার রাজ্বস্য হারাচ্ছে। সূত্র মতে জানা যায় গত অর্থ বছরে ২০১৮-২০১৯ সালে খনির লোকসান দাড়িয়েছিল ৩ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা। আগের অর্থ বছরেও প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা লোকসান খেতে হয়েছে খনি কর্তৃপক্ষকে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বেসরকারী সংস্থা (জিটিসি)’র চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। খনিটিকে উৎপাদনে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং লাভবান নতুন কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তির জন্য টেন্ডারের প্রস্তুতি নিয়েছেন খনি কর্তৃপক্ষ। আবু তালেব ফারাজী জানিয়েছেন চুক্তি অনুযায়ী পাথর উৎপাদন করতে পারেনি বেসরকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজ না করলে লিকুইডেটেড ডেমেজ (এলডি), নিরাপত্তার অর্থ ও অগ্রীম গ্রহন করা অর্থ কেটে রাখবেন। সব মিলে প্রায় ১৪৬ কোটি টাকা পাবেনা জিটিসি। অপরদিকে উৎপাদন বন্ধ থাকার ব্যাপারে জিটিসির মহা ব্যবস্থাপক জাবেদ সিদ্দিকী জানান খনি কর্তৃপক্ষ বরাবরে পাথর উত্তোলনের বিষয়ে সার্বিক সহযোগীতা করে আসছে। কিন্তু পাথর উত্তোলন বৃদ্ধির অনেক প্রস্তাব আগে ভাগে দেওয়া হলেও তারা বিষয়টি আমলে নেয়নি। উত্তোলন যন্ত্রের ক্রিস্ট মটর গিয়ার বক্সের পিনিয়াম নষ্টের কথা জানালেও তা আনার কথা বললেও খনি কর্তৃপক্ষ সে কথা গুরুত্ব দেননি। যার কারনে আজ প্রায় ৪ মাস খনির পাথর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে খনি এলাকার লোড আনলোড শ্রমিক, ট্রাক শ্রমিক এবং ভূ-গর্ভস্থ কর্মরত প্রায় ১ হাজার শ্রমিক। সব মিলে সকলে বেকার হয়ে পড়েছে। বেকার হওয়া শ্রমিকদের স্বার্থে খনি থেকে পাথর উত্তোলনের দাবি জানান তারা। মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি প্রকল্পে বর্তমান পাথর মজুদ রয়েছে প্রায় ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার মেক্ট্রিকটন আর প্রতি মাসে খনির ইয়াড থেকে পাথর বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার মেক্ট্রিকটন। বর্তমান দুপক্ষের রশি টানাটানিতে মধ্যপাড়া খনিটির উৎপাদন বন্ধ। এলাকাবাসী বলছেন, দেশের অর্থনীতি বাড়ার জন্য মধ্যপাড়া খনিটির দ্রুত উৎপাদন শুরু করা উচিৎ।