পল্লীনিবাসেই চিরনিদ্রায় শায়িত এরশাদ
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: অবশেষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ (এইচএম) এরশাদকে রংপুরের পল্লীনিবাসেই দাফন করা হয়েছে। রংপুরে নিজ বাসভবনের জন্য গড়া পল্লীনিবাসই হলেন সংসদী বিরোধী দলীয় নেতার শেষ ঠিকানা। মঙ্গলবার ( ১৬ জুলাই) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। দাফনের আগে কবরের পাশে সাবেক এই সেনাপ্রধানকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অনার প্রদান করা হয়। সাবেক সরকারপ্রধানকে গার্ড অনার প্রদান করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকেও। ঢাকায় সেনানিবাসে দাফনের সিদ্ধান্ত থাকলেও নেতাকর্মীদের তীব্র বাধা ও প্রতিরোধের মুখে এরশাদকে রংপুরের তাঁর পল্লীনিবাসেই দাফনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় পার্টি। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় এই নেতার মরদেহ পল্লীনিবাসের দিকে রওনা হয় নেতাকর্মীরা। লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স গিলে হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যারিকেড তৈরি করেন। অ্যাম্বুলেন্সের সামনে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের, মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙা, সিটি মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফাসহ দলের শীর্ষ নেতারা। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু এরশাদ রংপুর-৩ (সদর) আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি এ আসন থেকে টানা ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রংপুরকে জাতীয় পার্টির ঘাঁটি বিবেচনা করা হয়। এরশাদ জেলে থেকেও এখান থেকে ভোট করে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। পল্লীবন্ধুকে নিয়ে রংপুরের মানুষের এক ধরনের আবেগ কাজ করে। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর থেকে এরশাদের মরদেহবাহী হেলিকপ্টার রংপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে বিমান বাহিনীর একটি সাদা হেলিকপ্টারযোগে এরশাদের লাশ ঢাকা থেকে আনা হয় রংপুর ক্যান্টনমেন্টে। সেখান থেকে চতুর্থ জানাজার জন্য মরদেহবাহী গাড়ি কালেক্টরেট মাঠে পৌঁছায় দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে। এই কালেক্টরেট মাঠেই বাদ জোহর তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে জানাজার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন। সকাল থেকে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে লোকজন জানাজায় শরিক হতে ঈদগাহ মাঠে আসতে শুরু করে। জানাজায় অংশ নিতে এবং তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে রংপুরের ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দানে লাখো মানুষের ঢল নামে। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী, এরশাদ ভক্ত, বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ১৬ জেলার লাখো মুসল্লি। এসময় মূল মাঠ পেরিয়ে পাশের ক্রিকেট গার্ডেন, রংপুর সরকারি কলেজ মাঠ, রংপুর স্টেডিয়াম, পুলিশ লাইন স্কুল মাঠ, পাসপোর্ট অফিস এলাকা, সুরভী উদ্যানসহ নগরীর প্রধান সড়কে মানুষ দাঁড়িয়ে জানাজার নামাজ আদায় করেন।১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করা এরশাদ গত ১৪ জুলাই ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।