সাতক্ষীরায় ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপন।
হাবিবুল্লাহ হাবীব:সাতক্ষীরা শহরে কাশেমপুরের বিলে বাইপাসের পাশে এই ভাটার কিলন, চিমনি স্থাপনের তোড়জোড় চলছে বেশ জোরেশোরেই। ওই স্থানে বিভিন্ন ব্যাক্তির নিকট থেকে প্রায় চল্লিশ বিঘা চাষের জমি লিজ নেওয়ার চেষ্টা করলেও এ পর্যন্ত ২৩ বিঘার মত লিজ নিতে পেরেছেন ভাটা স্থাপনকারী শুকুর আলী। বাকিরা জমি না দেওযায় এখনও বিভিন্ন প্রলোভন ও ভয় ভীতি দেখিয়ে জমি লিজ নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। শুকুর আলির আরও দুইটি ভাটা আছে একটি বিনেরপোতায় আরেকটি লাবসার বেতলা নামক স্থানে। দুটিই এবিবি ব্রিক ফিল্ড নামে পরিচিত। ইটভাটা বসানোর জন্য শুকুর আলি কাশেমপুরের ইমান মাওলানার কাছ থেকে সাড়ে ৩ বিঘা জমি ৩ লাখ টাকায়, কওসারের কাছ থেকে ৫ বিঘা ১৭৫০০০ টাকায়, হাসান উকিলের কাছ থেকে ৩ বিঘা ৯০০০০ টাকায়, মান্নান গাজীর থেকে ১৮ হাজার টাকায় ১২ কাঠা জমি লিজ নিয়েছেন। এ ছাড়াও, ৩০০০০ টাকা প্রতি বিঘা রেটে মজিদের থেকে ১ বিঘা, বারি-সুরত-কালামের থেকে ৬ কাঠা করে ১৮ কাঠা, ছাত্তারের কাছ থেকে ৫ কাঠা, মুকুল-মাজেদের কাছ থেকে ১.৫ বিঘা করে লিজ নিয়েছেন। আরও জমি লিজ নিয়েছেন শাহবুদ্দিনের কাছ থেকে ১২ কাঠা, সোহরাব ১৬ কাঠা, হাসান ৩ কাঠা, রাজ্জাক-মাজেদ ১২ কাঠা, তোহিদুল মেম্বার ১৫ কাঠা, জব্বার ৬ কাঠা, রমজান-শাহজান ২.৫ বিঘা, নাসির ১ বিঘা, কুদ্দুস ৫ কাঠা, আব্দুল ওহাব ৫ কাঠা, আব্দুল মাজেদ ৪ কাঠা, আ. রহিম ৪ কাঠা, আ. করিম ৪ কাঠা, হাজী শহিদুল ৮ কাঠা, আব্দুল্লাহ ৫ কাঠা করে প্রায় ২৩ বিঘা জমি। ভাটা স্থাপন প্রসঙ্গে কাশেমপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ইট ব্যবসায়ী শুকুর আলী ইট ভাটা বসানোর জন্য কিছু জমি লিজ নিয়ে ইট, বালি, মাটি নিয়ে আসে। এসব আনার জন্য রাস্তার পাশের নিম, মেহগনি গাছ গুলো কেটে নিয়েছে। এখানের সিরাজুল নামের এক কৃষক ভাটায় জমি দিবে না। তাই সে পোল্ট্রি ফার্ম উঠাইছে এবং কিছু গাছ রোপণ করেছে। তাকে ভাটা মালিকদের পক্ষ থেকে হুমকি ও বাধা প্রদান করা হচ্ছে। তারা বলছে যে, নিবন্ধন না পাওয়া পর্যন্ত যেন ফার্ম ও গাছ উঠায়ে নেওয়া হয়। আমাদের এলাকার জনগণসহ সকল চাষীদের কথা হল এখানে ফসলি জমিতে চারটে ফসল হয়। এই চারটি ফসল বিনষ্ট করে, পরিবেশ নষ্ট ও দূষিত করে ভাটা যেন করতে না দেওয়া হয়। আমরা সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি এই ভাটা যেন নিবন্ধন না পায়। ভাটার পাশের অন্য জমির মালিক কাশেমপুরের সিরাজুল ইসলাম জানান, শুকুর আলি অনেক জোর করেছিল আমার জমি লিজ নেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি রাজি হইনি। ভাটায় জমি লিজ দেওয়ার মানে সেই জমি একেবারে শেষ। ভাটায় জমি লিজ দিলে তা ফেরত পাওয়া যায় না। আর যদি পাওয়ায় যায় তাহলে সেই জমিতে কিছু হয়না।
সাধারণত বিল অঞ্চলের জমি বর্ষাকালে পানিতে ডুবলেও এই বিল উঁচু হওয়ায় বর্ষাতে এটি ডুবেনা। তাই এখানে বছরে লাগাতার চাষ কাজ চলতেই থাকে। এই সকল জমিতে বর্গা চাষ করেন তেমন চাষীর মধ্যে একজন রেজাউল ইসলাম। তিনি বলেন “এই বিলে আমি ১০ বিঘার মত জমিতে ধান চাষ করি। বছরে তিনবার ধান চাষ করে আমার সংসার চালাতে কোন কষ্ট হয় না। অথচ অতিরিক্ত লাভ দেখিয়ে শুকুর আলি অনেক জমি লিজ নিয়েছে। আমি যে ১০ বিঘা জমি চাষ করতাম তার থেকে ৮ বিঘাই ভাটার পেটে। এখন আমি কিভাবে যে সংসার চালাই তা নিয়েই চিন্তায় আছি। আর যদি পাশের থেকে অন্য জমি লিজ নেই তাহলেও ভাটার জন্য ফসল ভাল হবে না। এই বিলের সব জমি নষ্ট হয়ে গেল। ফসলি জমিতে ভাটা স্থাপন প্রসঙ্গে শুকুর আলী বলেন, ভাটা স্থাপন করলে ধান চাষে ক্ষতি হবে এ কথা একশ ভাগ ঠিক। কিন্তু ভাটা না হলে মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, বাড়িঘর তৈরির ইট পাবে কোথায়। আমি ডিসি সাহেবের অনুমতি, পরিবেশ ছাড়পত্রসহ সব কিছুই নিয়েছি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ অরবিন্দু বিশ্বাস জানান, কৃষি জমিতে ভাটা স্থাপনের অনুমতি নেই। আমরা কৃষকদেরও উদ্বুদ্ধ করছি যেন বেশি লাভের আশায় ফসলের ক্ষতি করে ভাটায় জমি না দেয়। এ ব্যাপারে কৃষি অফিস ও জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, নতুন করে কোন ভাটার লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। কাশেমপুরে নতুন কোন ভাটা গড়ে উঠেছে এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে যদি কেউ ভাটা গড়ে তোলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।