নকলার পল্লীতে যৌতুকের দাবীতে গৃহবধূকে নির্যাতন-শরীরে আগুন

আলহাজ মাহবুবর রহমান, শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনায় বাছুর আলগা গ্রামে যৌতুকের টাকা না পেয়ে গৃহবধূকে শারীরিক নির্যাতন ও শরীররে আগুন দিয়ে ঝলসে দিয়েছে স্বামীর পরিবার। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার চন্দ্রবাড়ী গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে মোছা: শিলা আক্তার এর সাথে শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনায় বাছুর আলগা গ্রামের সমর আলীর পুত্র সজীব আহম্মেদের সাথে ৪ বছর আগে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়, বয়স ১ বছর। বিয়ের ১ বছর পর স্বামী সজীব এলাকায় অন্য এক মেয়ের সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পরে। এতে দু’জনার মাঝে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। যার ফলে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। সজীব তার বিবাহিতা স্ত্রী শিলাকে যৌতুকের জন্য দাবী জানায়। শিলার বাবা একজন সি.এন.জি চালক। ইতোমধ্যে মেয়ের সুখের জন্য শিলার বাবা প্রায় ৩ লক্ষ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র ও গহনা দিয়েছেন। এর মধ্যে সজীবের পরকীয়া প্রেমের খবর জানাজানি হলে স্থানীয় মাতাব্বরগণ গ্রাম্য শালিসে সজীবকে জরিমানা করলে সজীব জরিমানা দিয়ে পার পায়। দুইমাস আগে দুই লাখ টাকা যৌতুক চেয়ে শিলার বাবার কাছে খবর পাঠায় সজীবের পরিবার । কিন্তু অসহায় এই সি এন জি চালক এত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ২৩ মে বৃহঃ বার শেষ রাতে সজীবের পরিবারের লোকজন মিলে শিলাকে ঘরের ভিতর আটকিয়ে রেখে নির্যাতন করে দাঁত ভেঙে ফেলে। এ অবস্থায় শিলা মাটিতে লুটিয়ে পরলে তার শরীররে আগুন লাগিয়ে দেয়। এর ফলে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গা ও মাথার চুল পুড়ে যায়। শিলার ডাক-চিৎকার শুনে আস-পাশের লোকজন শিলাকে উদ্ধার করতে আসলে সজীবের লোকজন তাদেরকে জানায়, শিলা পাগল হয়ে গেছে । এরপর লোকজন শিলাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে ও শিলার বাবাকে খবর দিলে তার বাবা শহিদ মিয়া মুক্তাগাছা থেকে ঘটনাস্থালে তাৎক্ষণিক দ্রুত চলে এসে এলাকার লোকজন ও পুলিশের সহায়তায় নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে শিলার বাবা বাদী হয়ে ২০০০ সালের নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩ এর ১১(খ)/৩১ যৌতুকের দাবীতে মারধর করিয়া গুরুতর জখমের অপরাধ উল্লেখ করে তার স্বামী সজীব সহ পরিবারের ৮জনের নাম উল্লেখ করে নকলা থানায় মামলা রুজু করেন। নকলা থানা মামলা নং -১১, তাং ২৪/০৫/১৯ইং।
এরই ধারাবাহিকতায় ঘাতক সজীব আহম্মেদকে পুলিশে গ্রেফতার করলেও বাকিরা পলাতক রয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস.আই সামছুল আলম জানান, আসামী সজীবকে গ্রেফতার করা হয়েছে ,বাকী আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।
এদিকে ২৩মে রবিবার অবস্থা আশংকা জনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য শিলাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছেন নকলা হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা: রবিউল করিম। অভিযুক্ত ৮জন আসামীর নাম মামলায় উল্লেখ থাকলেও আরও কতিপয় ব্যক্তি এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে বলে জানান মামলার বাদী শহিদ মিয়া। শিলা আক্তার ২০-০৫-১৯ তারিখে শেরপুরের মেজিষ্ট্রেট নাহিদ সুলতানার কাছে তাকে নির্যাতনের জবানবন্দি দিয়েছেন। শিলাকে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার এই বর্বরোচিত ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ন্যায় বিচারের মাধ্যমে কঠিন শাস্তির দাবী করেছেন এলাকাবাসী সহ সচেতন নাগরিকবৃন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *