কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে
অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (৮ মে) রাজধানীর সবুজবাগে শ্রী-শ্রী বরদেশ্বরী মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য হয়। বিকেল ৫টায় শুরু হয়ে শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় সন্ধ্যা ৭টায়। এ সময় মন্দিরে উপস্থিত ছিলেন সুবীর নন্দীর পরিবারের সদস্য, আত্মীয় ও বন্ধু-স্বজনরাসহ দূর দূরান্ত থেকে আসা ভক্তরা। মঙ্গলবার (৭ মে) ভোর সাড়ে ৪টায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন সুবীর নন্দী। বুধবার (৮ মে) সকালে রিজেন্ট এয়ারওয়েজে তার মরদেহ দেশে আনা হয়। বিমানবন্দর থেকে তাঁর লাশ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রিন রোডের বাসভবনে।
বেলা ১১টায় তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় শহীদ মিনারে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের মানুষ। পরে এফডিসিতে শ্রদ্ধা শেষে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণ ঘুরে রামকৃষ্ণ মিশনে নিয়ে যাওয়া হয় সুবীর নন্দীকে। সেখান থেকে সবুজবাগ শ্রী-শ্রী বরদেশ্বরী মহাশ্মশানে যায় তার মরদেহ। সুবীর নন্দী আনুষ্ঠানিক ভাবে গানের জগতে আসেন ১৯৭০ সালে ঢাকা রেডিওতে প্রথম রেকর্ডিংয়ের মধ্য দিয়ে। প্রথম গান ‘যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়’-এর গীত রচনা করেন মোহাম্মদ মুজাক্কের এবং সুরারোপ করেন ওস্তাদ মীর কাসেম। চলচ্চিত্রে ১৯৭৩ সালের সূর্যগ্রহণ চলচ্চিত্রে রাজা-শ্যামের সুরে প্রথম গান ‘দোষী হইলাম আমি দয়াল রে’ গানটি। ৪৫ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গেয়েছেন আড়াই হাজারের বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে গেয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। চলচ্চিত্রে প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে। ১৯৮১ সালে তার একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে। ২০১৮ সালে ‘চ্যানেল আই সংগীত পুরস্কার’ থেকে জীবনের প্রথম ‘আজীবন সম্মাননা’ পুরস্কার পেয়ে নিজের প্রাপ্তি নিয়ে তিনি বলেছিলন, আমার জীবনে প্রাপ্তি বেশি, বিসর্জন কম। মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। সুবীর নন্দী শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পাঁচবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (মহানায়ক, ১৯৮৪; শুভদা, ১৯৮৬; শ্রাবণ মেঘের দিন, ১৯৯৯; মেঘের পরে মেঘ, ২০০৪; মহুয়া সুন্দরী, ২০১৫), পাঁচবার পেয়েছেন বাচসাস পুরস্কার। এছাড়া লন্ডনের ‘হাউস অব কমন্স’-এ ২০০৪ সালে সব সাংসদের উপস্থিতিতে গান করার ঘটনাটিকে তিনি সৌভাগ্য হিসেবেই মএন করেন। সুবীর নন্দী হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানায় নন্দীপাড়ায় এক কায়স্থ সম্ভ্রান্ত সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সময়টা ১৯ নভেম্বর ১৯৫৩। তাঁর নানাবাড়ি শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাদেআলিশা গ্রামে। তাঁর পিতা সুধাংশু নন্দী ছিলেন একজন চিকিৎসক ও সংগীতপ্রেমী। তাঁর মা পুতুল রানী চমৎকার গান গাইতেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ভাইবোনদের সঙ্গে শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নিতে শুরু করেন ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছে। তবে সংগীতে তার হাতেখড়ি মায়ের কাছেই। বাবার চাকরিসূত্রে তার শৈশবকাল চা বাগানেই কেটেছে। পড়েছেন হবিগঞ্জ সরকারি হাই স্কুলে। তারপর হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সুবীর নন্দী সেকেন্ড ইয়ারে পড়তেন। আধুনিক সংগীতের পাশাপাশি সুবীর নন্দী শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন শাস্ত্রীয় সংগীত, ভজন, কীর্তন এবং পল্লীগীতিতেও। নিজের ভালোলাগার নজরুলসংগীতেও আবেশ ছড়ান সুবীর নন্দী। সংগীতের সব অঙ্গনে মায়া ছড়ানো এই শিল্পীর গাওয়া জনপ্রিয় গান গুল হলো, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খী রে’, ‘একটা ছিল সোনার কন্যা’, ‘পাখিরে তুই দূরে থাকলে’, ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভাল’, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘তুমি এমনই জাল পেতেছো সংসারে’, ‘দিন যায় কথা থাকে’এছাড়াও আরও বহু গান রয়েছে যা ভক্তদের মনে আজীবন জীবন্ত থাকবে।