মংলা-পায়রায় সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত শক্তিশালী হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’উপকূলবাসীআতংকে

শেখ সাইফুল ইসলাম কবির.সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ,বাগেরহাট : ঘূর্ণিঝড় ফণী আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এর মাত্রা বাড়বে। এটি আগামী ২ মে’র মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে কালবৈশাখীর আশঙ্কাও রয়েছে।৪৩ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আরও শক্তিশালী হচ্ছে। পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি সামান্য উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১৬.০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৪.৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার সমূদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনের ২৮ নম্বরে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।বুলেটিনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল নয়টায় ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও ঘণীভূত ও উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার বিকেল নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। পরবর্তীতে উড়িষ্যা পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে হয়ে সন্ধ্যা নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে।ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১৬০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে দেয়া চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ এই বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীউপকূল অতিক্রম না করা পর্যন্ত সকল সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা সদরসহ ৯টি উপজেলায় একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে এবং ১০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।সরকারি কর্মকতা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিলসহ রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক। জেলার সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সকল সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রয়েছে। জনসাধারনকে সতর্ক করার জন্য জেলার ৯টি উপজেলার সকল শহর ইউনিয়নে মাইকিং করা হচ্ছে। সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরী সভা করেছে।উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষগুলোকে নিরাপদে থাকার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে।এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ছয় নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার সমূদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *