মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি বিভাগ শরিফুলের কাছে জিম্মি, সাফাই গেয়ে রক্ষা করে ডাক্তার ও মাদ্রাসা শিক্ষক
রেজওয়ান আহম্মেদ: সাতক্ষীরা মেডিকেল হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত শরিফুলের কাছে নিয়মিত ঘটছে রোগী লাঞ্ছিতের ঘটনা। অপারেশনের রোগীকে আটকিয়ে ৪-৫ হাজার টাকা, আউটডোরের রোগীদের হয়রানি, টাকা না দিলে লাঞ্ছিত করা, নিজেই ডাঃ সেজে মেডিকেল হাসপাতালের আগত রোগীদের প্রেসক্রিপশন লিখে ভিজিট গ্রহণের মত গুরুতর অভিযোগ। তবে কোন অভিযোগই হলে পানি পায়না ইএনটি বিভাগের ডাক্তারদের বিরোধীতায়।
প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা যায়, গত শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাবিবুল্লাহর পুত্রের নাক থেকে পাথর বের করে টাকা দাবী করে শরিফুল। এক পর্যায়ে এক মাদ্রাসা শিক্ষকও শরিফুলের সাথে টাকার দাবীতে গোলযোগ শুরু করে। অভিযোগ আছে ওই মাদ্রাসা শিক্ষক শরিফুলের দালাল হিসাবে কাজ করেন। যার প্রমান মিলে শিক্ষকের বক্তব্য নেওয়ার পরপরই উনার কাছ থেকে নম্বর সংগ্রহ করে শরিফুল ফোনে এবং সেই সাথে অনুরোধ করে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য। ভুক্তভোগী পলাশপোল এলাকার মোঃ হাবিবুল্লাহ বাহার হাবিব জানান, “আমার শিশু পুত্র (সালমান রুহানি শিহাব) খেলা করতে গিয়ে নাকে পাথর ঢুকে যায়। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডাক্তার না পেয়ে আমি দ্রুত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানে ২:৩০ পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ইএনটি বিভাগে কোন ডাক্তার পাই না। কিছুক্ষণ পরে শরিফুল ডাক্তার পরিচয়ে কথা বললে আমার বাচ্চার নাকের পাথর বের করে দিতে বলি। শরিফুল পাথর বের করে আমাকে চলে যেতে বলে। আমি ইএনটি বিভাগ থেকে বের হওয়া মাত্রই আমাকে আবার ডেকে টাকা দিতে বলে। আমি এক’শ টাকা দিয়ে চলে আসার সময় আবার পিছন থেকে ডেকে শরিফুল বলেন, ‘এই কাজ বে-সরকারী ক্লিনিকে করলে দুই থেকে তিন হাজার টাকা লাগত। আপনি যা দিবেন দেন।’ আমি অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি আমার সাথে অস্বাভাবিক আচরন শুরু করেন। হঠাৎ মেডিকেল লাগোয়া দারুল হাদীছ আহমাদিয়াহ সালাফিয়াহ ও ইয়াতীমখানার জেনারেল শিক্ষক অহিদুল ইসলাম আমাকে বলেন, চিকিৎসা নিছিস টাকা দিবিনা কেন। কাজ উদ্ধার হয়ে গেলে মনে থাকেনা। আমি বলি, আপনি আমার সাথে খারাপ আচরণ করছেন কেন? এই প্রশ্ন করার সাথে সাথে শরিফুল ও মাদ্রাসা শিক্ষক মিলে আমাকে মারতে উদ্যত হয়। এ সময় শরিফুল আমাকে বলে, এখুনি এখান থেকে বেরিয়ে যা। না হলে এরপর তোর পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে যাবে। আমি বাধ্য হয়ে প্রমাণ স্বরূপ পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করি।”
মোঃ হাবিবুল্লাহ বাহার হাবিব আরও বলেন, এর আগে আরও কয়েকবার আমি নিজে কানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ফিরে আসি। হাসপাতালে প্রতি সপ্তাহে শনি ও রবি বার ডাঃ নারায়ন প্রসাদ শ্যান্যালের রোগী দেখার নিয়ম থাকলেও তাকে হাসপাতালে পাওয়া যায় না। ডাঃ শ্যান্যাল অধিকাংশ অফিস চলাকালীন সময় বে-সরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন। আমি পরে বাধ্যহয়ে ডাঃ শ্যান্যাল এর পার্সোনাল চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করি। এ বিষয়ে দারুল হাদীছ আহমাদিয়াহ সালাফিয়াহ ও ইয়াতীমখানা মাদ্রাসার জেনারেল শিক্ষক অহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি ছিল ভুল বুঝাবুঝি। আমি আসলে না জেনেশুনে এভাবে কথা বলেছি।’ এদিকে শরিফুলের বিষয়ে মেডিকেল হাসপাতালের একাধিক স্টাফ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সেচ্ছাচারী ভাবে চলে শরিফুল। স্টাফদের সাথেও খারাপ আচরণ করেন তিনি। আর যে কোন রোগীর সাথে খারাপ আচরনসহ লাঞ্ছিত করার ঘটনা হরহামেষাই ঘটে থাকে। অপারেশনের রোগীকে আটকিয়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আদায় করা, নিয়মিত রোগীদের হয়রানি সেই সাথে লাঞ্ছিত করা, ইএনটি ডাক্তারদের মেডিকেল হাসপাতালে রোগী না দেখার সুযোগ নিয়েই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সেজে মেডিকেলেই রোগী দেখে প্রেসক্রিপশন লিখে ভিজিট গ্রহণ করার মত অপরাধ করেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করেননা উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ। এর আগে প্রায় দুই মাস আগে সদরের থানাঘাটার আব্দুর রহমানের স্ত্রী অপারেশনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দাবী করে। তবে শরিফুল জানায় এ ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। সে বলে, পুরো ঘটনাই ভুল বোঝাবুঝির ফল। এ বিষয়ে মেডিকেল হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের দায়িত্বরত ডাঃ নারায়ন প্রসাদ শ্যান্যালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা আমাকে কেউ জানায়নি। আসলে ঘটনাটি দুঃখ জনক।
লাঞ্ছিতের বিষয়ে মেডিকেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ শাহাজান আলী বলেন, শরিফুলের বিরুদ্ধে এর আগেও বহুবার অভিযোগ এসেছে। রোগীদের নিকট থেকে অর্থ আদায় করে শুনেছি। কিন্তু ইএনটি ডাক্তারদের বিরোধীতায় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তবে এবার ঘটনার ফুটেজ হাতে থাকায় পরবর্তী বোর্ড মিটিংয়ে শরিফুলের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, এর আগেও শরিফুল স্টাফ, নার্স ও রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে। শুধুমাত্র ইএনটি ডাক্তাররা পার্সোনাল চেম্বারে রোগী দেখার সুবিধার্থে তার সবরকম নালিশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ফলে আগ্রাসী হয়ে ওঠে শরিফুল। আর ভোগান্তিতে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা জনসাধারণ।