দখলদার উচ্ছেদে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ নেই, সাতক্ষীরার বেতনা নদী পরিণত হবে বাওড়ে
রেজওয়ান আহম্মেদ, সাতক্ষীরা: বেতনা নদীর জায়গা দখল করে বিভিন্ন স্থানে বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে এমন অবৈধ দখলদারের তালিকা তৈরি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তালিকা তৈরি হলেও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হয়নি। নানা কারণে থমকে গেছে এই উদ্যোগ। অপর দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের এক শ্রেণির কর্মচারীদের সহযোগিতায় নদীর বুকে ইটভাটা স্থাপন, নদীর পাড় বেধে জায়গা দখল করে সরু খালে পরিনত করা, কাঠের সাঁকো তৈরি করে মাটি ও কাঁচা ইট এপার ওপার করা, চর থেকে মাটি কাটা, চর দখল করে ভাটার চাতাল ও মৎস্য ঘের করা, নদীর সাথে সংযুক্ত ১০টি খালের মুখ বেধে মৎস্য চাষ করা এবং শাসক দলের নেতা-কর্মীদের সেলামী দিয়ে নদী শিকস্তিতে বসতি স্থাপন চলছে। ফলে এককালের খরস্রোতা বেতনা নদীর এখন আর কোন অস্তিত্ব নেই। শুকনো ও মরা খালে পরিণত হয়েছে। ভেস্তে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘ব্লুগোল্ড প্রোগ্রাম’-এর কার্যক্রম। বেতনায় এখন আর নৌকা চলে না। জোয়ারভাটা খেলে না। বেতনায় পায়ে হেঁটে এপার ওপার করে মানুষ। আগামী দু’বছরেই বেতনা নদীর নতুন নাম হবে ‘বেতনা বাওড়’।
বেতনার চরে গড়ে উঠছে বাড়িঘর দোকানপাট ও হাট বাজার। এর দুই তীর দখল করে সাইফুল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম, শওকত আলী, হায়দার আলী, আবুল হোসেন মোঃ মকসুদুর রহমান, লিয়াকত আলী, শুকুর আলী, মেহের আলী, আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুর রউফ, রেজাউল ইসলাম (১), লিয়াকত আলী, সাবুদ আলী, আজগর আলী, হায়দার আলী (২), পিয়ার আলী, তাসকিন আহমেদ চিশতি, মিন্টু, রেজাউল ইসলাম (২), হোসেন আলী, সাবুর আলীসহ অসংখ্য প্রভাবশালী ব্যক্তিরা গড়ে তুলেছেন ইটভাটা। এই ভাটা মালিকদের দু’একজন বাদে বাকিরা সব হজ্জ্ব করেছেন। শাল্যে গ্রামের আব্দুল খালেক ক্ষোভে বলেন, ‘তারা হজ্জ্ব করে ইসলামী কায়দায় নদী ভক্ষণ করে চলেছেন। মাটি ফ্রিতে পেয়ে টাকা লুটে নিচ্ছে।’ তাদের অত্যাচারে কুঞ্জডাঙ্গী গ্রামটি চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই গ্রামের মানুষরা ভারতে চলে গেছে। বেতনার চরে বাঁধ দিয়ে পুকুর ও ঘের তৈরি করে চিংড়ি চাষেও মেতে উঠেছেন প্রভাবশালীরা। আবার কোন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি নদী দখল করে ‘হারি’তে লিজ দিয়েছেন। এই দখল প্রক্রিয়ায় জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সব ধরনের আর্থিক সুবিধা নিয়ে দখলদারদের সহায়তা দিচ্ছে। বেতনা দিনে দিনে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীরা বলছেন, আগামী দু’ এক বছরের মধ্যে বেতনা বাওড়ে পরিণত হবে।
বেতনা সংলগ্ন ১২টি বিলের পানি এই নদী দিয়েই প্রবাহিত হয়। কিন্তু পলি জমে এই পানি নিষ্কাশন হতে না পেরে প্রতি বছর দু’কুল জুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে থাকে। বেতনার সাথে সংযুক্ত খালগুলোর ওপর নির্মিত স্লুইস গেটের সবক’টি অকেজো হয়ে পড়েছে। খালের মুখগুলো বেধে ফেলা হয়েছে। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মুরারীকাটি থেকে সদরের সুপারীঘাটা পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে বেতনা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ১০টির বেশি সংযোগ খাল রয়েছে। এই খালগুলোর সঙ্গে রয়েছে স্লুইজ গেট। সংস্কার না হওয়ায় স্লুইজ গেটের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ। পলিমাটি জমে বেতনা নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালে বিলের পানি সংযোগ খালের মধ্য দিয়ে নদীতে পড়তে পারে না। ইটভাটা মালিকরা বাধ দিয়ে দিয়ে নদী দখল করায় পলি জমে নদীর বক্ষ ভরাট হওয়ায় বিগত দুই দশক ধরে প্রতি বছর বর্ষাকালে এলাকায় জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। উল্টে নদীর পানি লোকালয়ে বা বিলে এসে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বেতনা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় তীরবর্তী চারটি ইউনিয়নের ৭০টি গ্রামের মানুষ ভোগান্তির মুখে পড়েছে। প্রতিবছর জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে হাজারও মানুষ। পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে ফসল। বর্ষাকালে সাতক্ষীরা সদরের দামারপোতা, মাছখোলা, পরমাছখোলা, শাল্যে, বেড়াডাঙ্গী, সরদারপাড়া, কুঞ্জডাঙ্গী, বিনেরপোতা, বাকডাঙ্গী, জিয়ালা, বদনার বিল, খেজুরডাঙ্গী, গোবিন্দপুর, বারিগাছা, সানাপাড়া, কোমরপুর, তেতুলডাঙ্গী, জাহানাবাজ, ডাইয়ের বিল, গোপীনাথপুর, কৈখালী, শহরের রাজারবাগানসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্ল¬াবিত হয়ে যায়। সেখানে হয়না আমন ধান। বোরো ধান হলেও তা যথেষ্ট নয়। এলাকার ধান ও মাছ চাষসহ সকল ধরণের উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকরা। এর প্রভাব পড়েছে মানুষের আর্থসামাজিক জীবনযাত্রার ওপর। বেকার হয়ে পড়ছে শত শত মানুষ। জলবায়ু প্রকল্পের আওতায় ২০১৩ সালের ২২ জুলাই ২৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সাতটি প্যাকেজের মাধ্যমে কলারোয়ার মুরারীকাটি থেকে সদরের সুপারিঘাটার দিকে ২৫ কিলোমিটার নদী খননের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়। ২০১৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী মধ্যে ওই কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সেই সময়ে নিয়োগকৃত ঠিকাদাররা কাজ করতে পারেনি। ফলে কাজের মেয়াদ আরো এক বছর বাড়িয়ে ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত ধার্য করা হয়। কিন্তু ২৫ শতাংশ খনন কাজ হওয়ার পর বিভিন্ন বিলের পানি কমাতে যেয়ে নদীর উপর নির্মিত তিনটি ক্লোজার কেটে দিতে হয়। বর্ষা শেষে দেখা যায় ক্লোজারের পাশে খননকৃত জায়গাগুলো আবারো পলিমাটিতে ভরে গেছে। নতুন করে খনন করতে দ্বিগুণ খরচ দেখানোয় সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের জানুয়ারী মাসে কাজ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু খননের পূর্বের অবস্থার চেয়ে বর্তমান অবস্থা আরো খারাপ। খনন কাজের পূর্বে নদীটি কমপক্ষে ১৫০ থেকে ২০০ মিটার চওড়া ছিল। কিন্তু খননের পর নদীটি পরিণত হয়েছে নালায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, যাচ্ছেতাইভাবে নদীটি খনন করায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। বেতনা নদীর মাঝ বরাবর খনন করার কথা ছিল ১০ থেকে ১৮ ফুট গভীর করে। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। কেবল বিনেরপোতা ব্রিজের কাছে দু’ থেকে তিন ফুট গভীর করে মাটি কাটা হয়েছে। কোথাও এক ফুটের বেশি মাটি তোলা হয়নি। উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে বেতনা নদী খনন ও পাড় বাঁধাই করার জন্য প্রকল্পটি হাতে নিয়েছিল সরকার। ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ২৫ কোটি টাকার ওই প্রকল্পে নামমাত্র কাজ করে টাকা তোলার অভিযোগ আছে ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘ব্লুগোল্ড প্রোগ্রাম’-এর কার্যক্রম নেদারল্যান্ডের অর্থায়নে ২০১৪ সালে শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় মার্চ ২০১৯ সাল পর্যন্ত। এর সীমানার মধ্যে পড়ে বেতনা নদীর বিনেরপোতা থেকে আশাশুনির মধ্যে তিনব্যান্ড স্লুইস গেট পর্যন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছিল বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এছাড়াও সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সাহায্য করবে মৎস্য অধিদপ্তর ও প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর। এ দপ্তর চারটি জনগণকে সংগঠিতকরণ ও সংগঠন শক্তিশালী, পানি ব্যবস্থাপনা, খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি উন্নয়ন এবং ব্যবসা উন্নয়নের মাধ্যমে এখানে বসবাসকারী চাষী, মৎস্যজীবী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হস্ত শিল্পী, মাঝি, ভূমিহীন, দুঃস্থ, এ্যাকুয়াকালচারিস্ট এবং প্রকল্প দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটাবে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০১৪ সাল থেকে ‘ব্লুগোল্ড প্রোগ্রাম’-এর কার্যক্রম চলতে থাকে। কিন্তু প্রভাবশালীদের যথেচ্ছ দখলদারিত্বে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ভেস্তে যায়। সদরের লাবসা ইউনিয়নের বিনেরপোতা থেকে ব্রহ্মরাজপুর হয়ে ধুলিহর ইউনিয়নের সুপারিঘাটা পর্যন্ত বেতনা নদী সরু নর্দমায় পরিণত হয়েছে। মাছখোলা, দামারপোতা, শাল্যে, বেড়াডাঙ্গী, বড়দল, মাটিয়াডাঙ্গা, নেহালপুর, তেঁতুলডাঙ্গা, গোবিন্দপুরসহ বিভিন্ন এলাকার পানি নিষ্কাশনের খালগুলো প্রভাবশালীরা দখল করে মাছের ঘের তৈরি করেছে। মাছখোলাসহ বিভিন্ন স্থানে বেতনার ওপর ইটভাটার মালিকরা আরসিসি খুঁটি বসিয়ে ব্রীজ তৈরি করেছে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে পানি নিষ্কাশনের সব পথ। চর কেটে মাঝ দিয়ে উঁচু বেড়িবাঁধ তৈরি করায় নদী সরু হয়ে এসেছে। বর্তমানে কলারোয়া থেকে প্রতাপনগর পর্যন্ত বেতনা নদীর দু’ধারের চর দখল করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ১০৫টির বেশি ইটভাটা। তারা ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা, উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে দেদারছে ইট পোড়ানো হচ্ছে ভাটায়। তারা নদীর ভেতর ও চরের পলিমাটি ভেকু লাগিয়ে মাটি কেটে নিয়ে ব্যবহার করছে ভাটাগুলোতে। লাবসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আবু সুফিয়ান সজল, তার সহযোগী রেজাউল ইসলাম লাবলু ও জিয়া, খেজুরডাঙ্গী আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ মেম্বার ও রাজনগরের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমীন, বাপ্পী ও আলমগীরের সহায়তায় ভেড়ি ও চরের মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে। আবার সুযোগ বুঝে এক শ্রেণীর সুবিধাভোগী মহল ওইসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে নদীর দু’পাশের চরের কিছু কিছু জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ভূমিহীনদের নামে ইজারা নিয়ে মাছের ঘের ও ধান চাষ শুরু করেছে। অনেকে নদীর বুকে আড়াআড়ি ভাবে নেটপাটা দিয়ে মাছ ধরায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আবার একটি মহল চর দখল করে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিয়ে দরিদ্র ভূমিহীনদের কাছে থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এই ভাবে বসতি স্থাপন করায় একটি পাড়া গড়ে উঠেছে। পাড়ার নাম দেয়া হয়েছে ‘হঠাৎপাড়া’। রাজনগরের ‘হঠাৎপাড়া’র ভূমিহীনদের কাছে থেকে পরিবার প্রতি রুহুল আমীন, বাপ্পী ও আলমগীর নিয়েছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় তৈরি করা হয়েছে মসজিদ, দোকানপাট ও বাড়িঘর। ভূমিহীনদের কারণে নদীর দু’ধারে গড়ে উঠেছে অস্বাস্থ্যকর পায়খানা। তাছাড়া কৃষি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি ঘের করায় এক শ্রেণীর মাছ চাষীদের কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। জবর দখলের মাত্রা এতটাই বেড়ে গেছে যে সরকার বা প্রশাসন তা উচ্ছেদ করতে গেলে সংঘাত হতে পারে। বেতনা নদীর চরে জেগে ওঠা সরকারি খাস জমির আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটছে সংঘর্ষের মত ঘটনাও।
চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারীতে উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল হোসেন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য নোটিশ দিয়েছে। নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতক্ষীরা পওর বিভাগ- ২-এর আওতাভূক্ত বিভিন্ন মৌজায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২২/৭৯-৮০ নং এলএ কেস-এর অধিগ্রহণকৃত জমির উপর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যাতীত স্থাপনা নির্মাণ করছেন। আপনাকে নি¤œ স্বাক্ষরকারী একাধিকবার মৌখিকভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করা সত্বেও নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন। এমতাবস্থায় ৭ দিনের মধ্যে সরকারী সম্পত্তি রক্ষার্থে আপনাকে এই অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ করা সহ নির্মিত অংশ অপসারণের জন্য অনুরোধ করা হল। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে বাপাউবো’র জমি জবরদখলের অভিযোগে আইনানুগ ব্যবস্থা করা হইবে। বিষয়টি অতীব জরুরী। কিন্তু এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং দখলদারদের বলা হয়েছে অফিসে দেখা করার জন্য। আবুল হোসেনের সাথে রুহুল আমীন, বাপ্পী ও আলমগীর উচ্ছেদের পরিবর্তে দখলদারদের মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে (০১৭১১-৪৪৩৩৮৫) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য প্রথমবারের মতো নোটিশ করা হয়েছে। তারা তাদের স্থাপনা সরিয়ে না নিলে পুনরায় নোটিশ করা হবে। তাতেও কাজ না হলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। খালের মুখ বেধে ও আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে মৎস্য চাষ করা এবং নদীর ভেড়ি, চর ও তলদেশ কেটে মাটি নিয়ে যাওয়ার ব্যপারে বলেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে’র জনবল খুবই কম। তারপর আমরা সব সময় যেতে পারি না। যারা এই অবৈধ কাজগুলো করে তারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান- মেম্বার ও রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী লোক। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যায় না। পুলিশের সহায়তা চাইলে তারা দু’একজনকে ধরে আনে, তারপর কোন খবর থাকে না। আমাদের আর কোন খবর নেয় না। প্রভাবশালীরা পুলিশকে ম্যানেজ করে ফেলে। তাই দখলদাররা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে’র আমল দেয় না। পাইকগাছায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিসের জমি রেকর্ড করে নেয়ার উদাহারণ দিয়ে তিনি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেতনা নদীর জমি কেউ কেউ রেকর্ডও করে নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, নদীর মালিক হলেন জেলা প্রশাসক। আর শুধু বাঁধের মালিক বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। বিনেরপোতা থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত যতো ভাটা তৈরী হয়েছে তার সবগুলোর অনুমোদন দিয়েছেন সাবেক জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ ও পরিবেশ অধিদপ্তর। তাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের করার কিছুই নেই্। সবার অযতœ অবহেলায় একদিন বেতনা নদী পরিণত হবে হাওড়ে।
বিষয়গুলো নিয়ে বেতনা বাঁচাও আন্দোলন, সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সম্মিলিত ঐক্য পরিষদ, পানি কমিটি ও বেতনা বাঁচাও কমিটি অভিন্ন দাবিতে বিভিন্ন সময়ে রাজনগরে, জজ কোর্টের সামনে, প্রেস ক্লাবের সামনে পথসভা ও মানব বন্ধন এবং প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। এইসব পথসভা, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দৈনিক দক্ষিণের মশাল-এর সম্পাদক আশেক ই এলাহি, সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ, এড. ওসমান গনি, এড. ফাহিমুল হক কিসলু, অধ্যক্ষ সুভাষ সরকার, স্বপন কুমার শীল, সাংবাাদিক কল্যাণ ব্যানার্জি, সাংবাদিক ইয়ারব হোসেন, আলি নুর খান বাবুল, আবদুস সামাদ, আবিদুর রহমান, কওছার আলি, শাহজাহান গাজী, আবদুর রশীদ, মফিজুর রহমান, ন্যাপ নেতা হায়দার আলী শান্ত, এড. আকবর আলী, কেন্দ্রীয় জাসদের সদস্য ওবায়দুস সুলতান বাবলু, সীমান্ত আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, মানবাধিকার কর্মী ওমর ফারুক, ডা: আনোয়ার হোসেন, অলিউর রহমান, শামসুর রহমান, রবিউল ইসলাম, আবুল হাসান, রুহুল আমিন, ছাত্রলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম, নূরুল হুদা প্রমুখ। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।