খুলনায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ

অপরাধ তথ্যচিত্র ডেক্স: আগামী ৩১ মার্চ খুলনার নয়টি উপজেলার মধ্যে সাতটিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নয়টি উপজেলার মধ্যে ফুলতলা ও বটিয়াঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীরা একক প্রার্থী থাকায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে দাকোপ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পদ ব্যতীত অন্য উপজেলাতেই ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি জোট অংশ নিচ্ছে না। শুধুমাত্র ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদে বিএনপি নেতা সাহস ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান ও রূপসা উপজেলায় জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ফিরোজ মামুন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে দলের মনোনীত নৌকার প্রার্থীরা। যেন আওয়ামী লীগের মুখোমুখি আওয়ামী লীগ। স্থানীয় এমপিরা দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখছেন, কেউ কেউ বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন। দলগতভাবে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী বিভিন্ন জায়গায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে জোর প্রচারণায় নেমেছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতিরোধে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় অনেক জায়গায় দল মনোনীত নৌকার প্রার্থী রয়েছেন ঝুঁকিতে। প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক জোট বিএনপি এবার নির্বাচনে অংশ না নেয়া ও আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে জাঁকজমকপূর্ণ করতে দলীয় মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও মনোনয়ন বঞ্চিতদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দিয়েছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার পর আওয়ামী লীগ উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিতে আবেদন আহ্বান করে। সেই আহ্বানে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ওই তিনটি পদে মনোনয়ন পেতে আবেদনপত্র নির্ধারিত ফি প্রদান সাপেক্ষে জমা দেন পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস- চেয়ারম্যান পদটি উন্মুক্ত করে দেয়। এই দুই পদে আবেদনকারীদের ফিসের টাকাও ফেরত দেয়ার কথা বলে। দলটি চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দিলেও আগের নির্বাচনে যেমনটি বলেছিল বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন করার সুযোগ করে দেয়। এতে খুলনায় দুটি উপজেলা ব্যতীত ৭টি উপজেলায় দলীয় মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও একাধিক দলীয় নেতা-কর্মী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছে। খুলনার সাতটি উপজেলাতেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী বিদ্রোহী প্রার্থী। সে হিসেবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাই দলীয় প্রার্থীর গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো প্রার্থী নৌকার সম্মান বাঁচানোর কথা বলে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের উপর চড়াও হচ্ছে। এমনকি তারা প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে জানা যায়, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও মনোনয়নবঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থীরাই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এক্ষেত্রে ডুমুরিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের মো. মোস্তফা সরোয়ার ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হাদীর ছেলে গাজী এজাজ আহমেদ এবং দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা শাহনেওয়াজ জোয়রদার। তবে দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী কাজ করছেন ঘোড়া প্রতীকের এজাজ আহমেদ-এর পক্ষে। ফলে নির্বাচনে মোস্তফা সরোয়ার এবং এজাজ আহমেদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বলে ভোটারদের ধারণা। কয়রা উপজেলায় লড়াই হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের জিএম মহসীন রেজা ও আনারস প্রতীক নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগ নেতা এস এম শফিকুল ইসলামের মধ্যে। দিঘলিয়া উপজেলায় ত্রিমুখি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে খান নজরুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থীর নামে বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মারুফুল ইসলাম ও দোয়াত কলম প্রতীকের আওযামী লীগ নেতা মহিউদ্দীন মল্লিক। পাইকগাছা উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত গাজী মোহাম্মদ আলীর নৌকা প্রতীকের সাথে লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর আনারস প্রতীক পাওয়া আওযামী লীগ নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব রশীদুজ্জামানের সাথে। তেরখাদা উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত শরফুদ্দীন বিশ্বাস বাচ্চুর সাথে লড়াই হবে দোয়াত কলম প্রতীকের শেখ শহিদুল ইসলামের সাথে। দাকোপ উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত শেখ আবুল হোসেন লড়ছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে ও ওর্য়াকার্স পার্টির মনোনীত গৌরাঙ্গ প্রসাদ রায় লড়ছেন হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে। এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। রূপসা উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতীকের কামাল উদ্দীন বাদশার সাথে লড়াই হবে উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আকবার আলী শেখের। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন আনারস প্রতীক নিয়ে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের খুলনার একাধিক শীর্ষ নেতাদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, ‘আমরা চাই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হোক। দলের নেতা-কর্মীরা নৌকার প্রার্থীকেই ভোট দেবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।’ তাহলে কেন বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘আমরা চাই ভোট উৎসব। আশা করি সেটাই হবে।’ আর মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী যদি জয়ী হয় তাহলে সেও তো আওয়ামী লীগের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *