ঝিনাইদহে শামীমা ডাক্তারের ভুল অপারেশনে জাবি ছাত্রী জ্যোতির জীবন সংকটাপন্ন। পরিবারের দাবী ডাক্তারের শাস্তি

সাহিদুল এনাম পল্লব, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ শামীমা ক্লিনিকের সত্বাধিকারী ডাঃ শামীমা সুলতানা ক্যান্সার রিপোর্ট না বুঝেই আন্দাজে ওভারিতে থাকা দুই কেজি ওজনের টিউমার অপারেশন করে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী ও ৪ বার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত দেশের উদিয়মান সঙ্গিতশিল্পি ফারহানা ইসলাম জ্যোতিকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে, তার জীবন এখন সংকটাপন্ন, অসহায় পিতা চিকিৎসার সাহায্যের জন্য ঘুড়ছে দ্বারে দ্বারে। প্রতিভাবান জ্যোতি এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। ক্যান্সার সম্পর্কে কোন জ্ঞান না থাকায় রিপোর্টে স্পষ্ট উল্যেখ থাকলেও ডাঃ শামীমা তা বুঝতে পারে নাই। শুধু টাকার লোভে না বুঝেই হাতুড়ে ডাক্তারের ন্যায় ক্যান্সারের রুগিকে অপারেশন করায় জ্যোতির দেহে দানা বেধে থাকা মরণ ব্যাধি ক্যান্সারের জীবনু শরীরের অধিকাংশ অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। অজ্ঞতা ও ভুল চিকিৎসার কারনে জ্যোতিকে বাঁচার জন্য প্রতিটি মুহুর্তে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। জ্যোতির চিকিৎসায় ইতোমধ্যে ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়ে গেছে, আরও ২৫ লক্ষ টাকা লাগবে, যাহা গরীর অসহায় পিতার দ্বারা কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছেনা জ্যোতির চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া। ঝিনাইদহের আদর্শপাড়ার অধ্যক্ষ করিম উদ্দিন সড়কের বসবাস রত জ্যোতির বাবা মোঃ আঃ রউফ জানায় যে গত ৩০ শে অক্টোবর ২০১৭ সালে তার মেয়ে ফারহানা ইসলাম জ্যোতি (২৪) পেটের নীচের অংশে ব্যথা এবং পেটে ফোলা টিউমার সাদৃশ কিছু একটা অনুভব করে এবং গাইনি সমস্যা মনে করে ঝিনাইদহের চুয়াডাঙ্গা স্ট্যান্ডের অগ্নিবীণা সড়কে অবস্থিত বহুতলবিশিষ্ট নিজ ভবনে শামীমা ক্লিনিকের সত্বাধিকারী গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ শামীমা সুলতানার নিকট যায়। আল্ট্রাসাইন্ডসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডাঃ শামীমা জানায় তলপেটের বামদিকে চর্বি অংশে একটি লাইফোমা আছে যা খুবই ছোট অপারেশন, এটা করলেই ঠিক হয়ে যাবে। রুগির লোকজন তার পরামর্শে রাজি হয়ে যায়। তারপরেও সে রুগিকে উন্নত পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়ার সনো প্লাস নামক ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারে ৩ডি রঙ্গিন আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যানসহ কয়েকটি টেষ্ট করে আনতে বলে। ৩১-১০-১৭ তারিখে টেষ্টের রিপোট দেখে বলে দেরি করা যাবে না, আগামিকালই অপারেশন করতে হবে, ৩৫ হাজার টাকা লাগবে। টাকা যোগাড় করতে একদিন দেরি হওয়ায় ২-১১-১৭ তারিখে জ্যোতিকে অপারেশনের জন্য ডাঃ শামীমা সুলতানা এর অধীনে শামীমা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। অপারেশনের পূর্বে নিজের ক্লিনিক ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন ধরনের টেষ্ট রিপোর্ট থাকা সত্বেও আবারও ইসিজি ও রক্তের বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করতে বলে এবং সেগুলো করানো হয়। অপারেশন করল গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ শামীমা, অবসে ছিলো ডাঃ রেজা সেকেন্দার এবং সেলাই করেছিলো শামীমা ক্লিনিকের ম্যানেজার এনামুল। রিপোর্ট দেখে বলেছিলো লাইফোমা কিন্তু অপারেশনের পর বলল দুই কেজি ওজনের টিউমার পাওয়া গেছে যা জ্যোতির বাম অভারিতে ছিলো। রুগির লোকদেরকে টিউমার দেখিয়ে বলে টিউমারে ক্যান্সারের জিবানু থাকতে পারে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠাতে হবে ২০০০ টাকা লাগবে। ১৩-১১-২০১৭ তারিখে রিপোট আসলে জ্যোতির বাবাকে ফোনে ডেকে নিয়ে বায়োপসি রিপোট দেখে ডাঃ শামীমা বলে “ওকে ফাইন, আপনার ভাগ্য ভালো, কোন সমস্যা নেই”। কিন্তু ঐ রিপোটে কম্পিউটার টাইপে স্পষ্ট উল্যেখ ছিলো মরণ ব্যাধি ক্যান্সারের কথা যা ডাঃ শামীমা হয়ত খেয়াল করে দেখে নাই বা রিপোট বুঝেই না। রুগি পূর্বের থেকে আরো বেশি অসুস্থ হতে পড়ায় অবারও ডাঃ শামীমা’র নিকট নিয়ে যায়। কিছু ঔষধপত্র লিখে দিলো কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি হলো না বরং রুগির অবস্থা দিনকে দিন খরাপ হতে থাকে। তাই রুগিকে আবারও ডাঃ শামীমার নিকট নিয়ে যায়। এবার বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করানোর জন্য যশোরের ল্যাব এইড এ পাঠায়। যশোরের রিপোট দেখে বলল আরেকটা লাইফোমা আছে এবং পিত্ত থলিতে পাথর আছে দুইটাই অপারেশন করতে হবে, ৫০ হাজার টাকা লাগবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ৯-৯-১৮ তারিখে অপারেশনের উদ্দেশ্যে ভর্তি করা হলো জ্যোতিকে। অপারেশনের সময় এবার সাথে রাখার কথা ছিলো ডাঃ লতিফকে কিন্তু সে ঢাকাতে যাওয়ার কারনে ডাঃ জাহিদকে কল করে আনা হয়। সে অবস্থা বুঝতে পেরে অপারেশন করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং জ্যোতিকে অপারেশন না হতে পরামর্শ দেয়, এ বিষয়ে ডাঃ জাহিদের সাথে ডাঃ শামীমার বাক বিতন্ডা হয়। তাই অপারেশন না হয়ে জ্যোতিকে ঢাকায় ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর নিকট নিয়ে যায় সে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলে ক্যান্সারের তৃতীয় পর্যায় আছে। এরপর জোতিকে ভারতের বোম্বে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুরেশ আদভানি এর নিকট নিয়ে যায়। দীর্ঘ ৫ মাস ধরে সেখানে চিকিৎসা গ্রহণ করছে। জোতির বাবার যা ছিলো এবং বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়ে গেছে এপর্যন্ত এখনও ৫/৬ বছর ঐ ডাক্তারের অধীনে চিকিৎসা নিতে হবে, তাতে আরও প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা দরকার বলে জোতির বাবা জানায়। সে আরও জানায়, আমার একমাত্র মেয়েকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে তার জীবনটা যেভাবে শেষ করে দিলো সেই ডাক্তার যেন তার উপযুক্ত শাস্তি পায়, সে যেন আর কোন পিতা মাতাকে সন্তান হারা করতে না পারে। সরকার এবং দেশের আইন আদালত যেন সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ভারত থেকে ফিরে আসা জ্যোতি জানায় যে আমি যখন ডাঃ শামীমার কাছে গিয়েছিলাম তখন বায়োয়াফসি রিপোর্ট দেখে বলে যে সমস্যা নেই। সেখান ডাঃ জাহিদ ছিল সে আমাকে বলেছিল এই টা সিরিয়াস কিছু এই টা অপরেশণ করা যাবে না। তখন ডাঃ শামীমা আমাকে জোর করছিল অপরেশণ করার জন্য তখন আমি বললাম যে অপরেশণ করাব না তখন ডাঃ আমাকে ওখান থেকে উঠায়ে দেয় এবং বলে যে এফএনেছি করতে হবে তারপর ঢাকায় যেয়ে পরীক্ষা করে জানতে পারলাম যে আমার ক্যান্সার হয়েছে। তাছাড়া আমার বায়োপসি রিপোর্টে পরিষ্কার লেখা ছিল যে আমার ক্যান্সার হয়েছে। আমার যেহেতু আগেই ক্যান্সার হয়েছে সেখানে ডাঃ শামীমা কেন বলল যে আমার ক্যান্সার নেই। যার কারনেই আমার জীবন ক্ষতি হয়ে গেল। যেহেতু তার কারনেই আমার ক্ষতি হয়েছে আমি ডাক্তারের শাস্তি চাই এবং আমার যথাযথ ক্ষতি পুরন দাবী করছি।
জ্যোতির স্বামী ও তার স্ত্রীর এই অবস্থার জন্য ডাঃ শামীমাকেই দায়ী করে বলে যে যদি এক বছর আগেই শামীমা জানাত যে জ্যোতির শরীরে ক্যান্সারের জীবাণু আছে তাহলে আজ তার এই অবস্থা হত না। শুধু কয়েকটি টাকার জন্য সে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছে তাই তার শাস্তি হওয়া দরকার। এব্যাপারে ডাঃ শামীমার সাথে যোগাযোগ করা হলে সে বলে ভীড়ের মধ্যে আমি ব্যস্ত ছিলাম তাই রিপোর্টটা ভালো করে বুঝতে পারি নাই, পরে আমি দেখেছি ক্যান্সারের জীবানু ছিলো এর জন্য আমি সরি, জ্যোতির জন্য আমি দোয়া করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *