ভুক্তভোগী শিক্ষকদের আদালতে মামলা, ইসলামপুরে কান্দারচর স্বতন্ত্র এবতেদায়ী একই পদে একাধিক শিক্ষক নিয়োগে বেহাল অবস্থা মাদ্রাসার!

ওসমান হারুনী,জামালপুর প্রতিনিধি: জামালপুরের ইসলামপুরে কান্দারচর স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক এসকান্দার মির্জার অনিয়ম দূর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে একই পদে একাধিক শিক্ষক নিয়োগ হওয়ায় বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে মাদ্রাসাটি’র কার্যক্রমে। ভূক্তভোগী বৈধ শিক্ষকরা তাদের চাকুরী বাচাঁতে অবশেষে আদালতে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। অভিযোগে জানা যায়,ইসলামপুর উপজেলার ১২নং চরগোয়ালীনী ইউনিয়নের কান্দারচর গ্রামে ১৯৮৫ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্নে বিধি অনুযাীয় ৫ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি’র পাঠদানের অনুমতিসহ পরবর্তীতে তিনজন শিক্ষক এমপিও/অনুদান ভুক্ত হয়। সম্প্রতি সরকার স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রাথমিক শিক্ষার ন্যায় জাতীয় করণের জন্য তথ্য চাইলে। টনক নড়ে বসে প্রধান শিক্ষকের। শুরু হয় একের পর এক পুরাতন শিক্ষক কৌশলে বাদ দিয়ে নতুন শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য। ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানটির নামে একই পদে একাধিক শিক্ষক নিয়োগ করে শিক্ষার পরিবেশ হ-য-ব-র-ল সৃষ্টি করেছেন। শনিবার সরেজমিনে গেলে চোখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি’র করুণ চিত্র,নেই শিক্ষার কোন পরিবেশ,জরাজীর্ণ ভাঙ্গাচুরা ঘরে পাঠদান করছেন প্রধান শিক্ষক এসকান্দার মির্জা। বাহিরে উড়েনা কোন জাতীয় পতাকা,বাজেনা কোন ঘন্টার। নেই ছাত্র/ছাত্রী ও শিক্ষকদের হাজিরা খাতা,নেই ক্লাসের রুটিন। নেই শিক্ষকদের কোন বসার জায়গা। নেই অফিস; নেই প্রতিষ্ঠানে প্রধান মন্ত্রীসহ জাতীর পিতার ছবি। মাঠে গর্ত। নেই কোন টয়লেট,শৌচাগার ও পানির ব্যাবস্থা। এমনই পরিবেশে প্রতিষ্ঠানটি নামে মাত্র পাঠদান চলছে। অনুসন্ধ্যানে জানা গেলে বিস্কুট পাওয়ার আশায় কয়েকদিন ধরে ছাত্র/ছাত্রীরা জরাজীর্ণ বিদ্যালয়ে আসছে। নিয়ামানুযায়ী প্রতিষ্ঠানটিতে একজন এবতেদায়ী প্রধান,সহকারী শিক্ষক(মৌলভী),সহকারী শিক্ষক(আলিম বিজ্ঞান/এসএসসি বিজ্ঞান,সহকারী শিক্ষক(সাধারন)এইচ এসসি/আলিম। ও একজন এবতেদায়ী ক্বারী শিক্ষক ক্লাস কর্মদিবসে হাজির থাকা কথা। খোজঁ নিয়ে জানা গেলো ওই দিন শুধু প্রধান শিক্ষক এসকান্দার মির্জা উপস্থিত রয়েছেন। এসময় উপস্থিত প্রধান শিক্ষকের কাছে শিক্ষক ও ছাত্র ছাত্রী হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে তিনি বাড়িতে আছে বলে পাশ কাটিয়ে যান। বাকি শিক্ষকরা কোথাই জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। অতচ্য মাদ্রাসাটির নামে প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষক শহিদুর রহমান ও মোহাম্মদ আলী ফেরদৌস নামে তিন জন প্রতিমাসে নিয়মিত বেতন ভাতা অনুদান পাচ্ছে। তবে বিদ্যালয়ে মাঠেই অবস্থান করছে প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রাপ্ত একই পদে একাধিক শিক্ষক তাদের দাবী নিয়ে। মাঠে উপস্থিত সহকারী মৌলভী শিক্ষক এনামুল হক ও সহকারী শিক্ষক মজনু মিয়ার অভিযোগ, গত ১১/০১/২০১৫ ও ০১/০৩/২০১৪ ইং তারিখে উক্ত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে যথারীতি পাঠদান করে আসছিলেন। সহকারী শিক্ষক মজনু মিয়ার আক্ষেপ করে জানান,প্রধান শিক্ষক এসকান্দার মির্জা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে আমাদের পদে অবৈধভাবে ইমাম হোসেন ও আমেনা খাতুন নামে আরও দুইজনকে নিয়োগ দিয়েছেন। ফলে কোন উপায় না পেয়ে আমরা আইনের আশ্রয় নিয়ে আদালতে মামলা করেছি। এখন মাদ্রাসা ক্লাস নিতে আসলে প্রধান শিক্ষক আমাদের ক্লাসে ঢুকতে দেয়না। এসময় মাঠে উপস্থিত এবতেদায়ী ক্বারী পদে নিয়োগ প্রাপ্ত(এমপি/অনুদানভুক্ত) শিক্ষক মোহাম্মদ আলী ফেরদুছ একই অভিযোগ করে বলেন,বৈধভাবে গত ১৮/০৪/২০০৪ ইং তারিখে অত্র মাদ্রাসায় নিয়োগ পেয়ে বেতনভাতা পেয়ে আসছেন তিনি। এমতাবস্থায় একই পদে প্রধান শিক্ষক গত ১৫/০১/১৫ ইং তারিখে জায়নাল আবেদীন নামে আরও একজনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন এবং অন্যায়ভাবে তার বেতন ভাতা ব্যাংক থেকে তুলতে দিচ্ছেনা দীর্ঘদিন ধরে। ফলে এব্যাপারে শিক্ষক মোহাম্মদ আলী ফেরদুছও ন্যায় বিচার পেতে আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন।
এছাড়াও একই ক্বারী পদে নিয়োগ প্রাপ্ত ছুফিয়া বেগমও উপস্থিত মাদ্রাসা মাঠে জানান, ২০১৫ সালে সে এবতেদায়ী ক্বারী পদে অত্র মাদ্রাসায় নিয়োগ পেয়ে মাদ্সারা ক্লাস নিতে আসলে প্রধান শিক্ষক বলে সমস্যা আছে ক্লাস নেওয়া যাবে না। আজও তিনি ক্লাস নিতে আসলে প্রধান শিক্ষক তাকে ক্লাসে ঢুকতে দেইনি। এব্যাপারে মাদ্রাসাটি’র জমিদাতা ও সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলামের সাতে কথা হলে তিনি অভিযোগ করে বলেন,মাদ্রাসাটির প্রধান শিক্ষক এসকান্দার মির্জা দুইজন শিক্ষক নিয়োগের কথা বলে একই পদে ২/৩ করে মজনু মিয়া,ছানোয়ার,ইমাম হোসেন,মোহাম্মদ আলী ফেরদৌস,আমেনা বেগম,ছুফিয়া বেগম,জোসনা বেগম,জয়নাল আবেদীন ও খুকুমনিসহ ৯জন শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন এবং একজনের আড়ালে অন্যজনের কাছে ৩লক্ষাধিক টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে প্রধান শিক্ষক। ফলে মাদ্রাসার আজ এমন অবস্থা হয়েছে। এব্যাপারে সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মাদ্রাসটি’র প্রধান শিক্ষক এসকান্দার মির্জার শিক্ষক নিয়োগ অনিয়মের একটি লিখিত অভিযোগও করেছেন সংশিষ্ঠ প্রশাসনের নিকট। মাদ্রাসাটি’র বর্তমান সভাপতি আজিজুল হক জানান,একই পদে একাধিক শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।
এব্যাপারে প্রধান শিক্ষক এসকান্দার মির্জার বক্তব্য হচ্ছে,শিক্ষকরা নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে না আসায় বিধি অনুযায়ী কয়েকজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া কয়েকজন শিক্ষক আদালতে মামলা করায় মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এব্যাপারে ইসলামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান,মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের বিষয়টি আমি অবগতি হয়েছি। সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। এব্যাপারে সচেতন এলাকাবাসী জরুরী ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটি’র শিক্ষার পরিবেশ ও ভোক্তভোগী বৈধ নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকরা তাদের চাকুরী ফিরে পেতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সৃ-দৃৃষ্টি কামনা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *