নওগাঁয় মাসোয়ারা নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় পুলিশ সেবা সপ্তাহে আটকের পর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দোকান মালিক দেলোয়ার হোসেন জুয়েলকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চলছে নানান গুঞ্জন। পুলিশ সেবা সপ্তাহে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত ২৮ জানুয়ারী সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের লখাইজানী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ জানুয়ারী দুপুর আড়াইটার দিকে লখাইজানী বাজারে কীটনাশকের দোকান ‘মেসার্স মা ট্রেডার্সে’ অভিযান পরিচালনা করে সদর থানার এসআই আব্দুল মান্নান-২ ও এএসআই আইনুল হক। এসময় পাঁচ বোতল ফেন্সিডিলসহ দোকানের মালিক দেলোয়ার হোসেন জুয়েলকে আটক করে। জুয়েল লখাইজানি গ্রামের হাজী নুর ইসলামের ছেলে। তাকে আটক করে উপস্থিত স্বাক্ষী হিসেবে জব্দ তালিকায় দুইজনের স্বাক্ষর নেয় বলেও জানা যায়। এরপর বাজার থেকে প্রায় আধাকিলোমিটার দূরে চন্ডিক্ষেত্রে নামক স্থানে নিয়ে মোটা অংকের টাকায় রফাদফা করার শর্ত দেন। এসময় জুয়েল ৭০ হাজার টাকা দিতে রাজী হন। কিন্তু পুলিশ তার কথায় সম্মত না দিয়ে তাকে নিয়ে বাজার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে টার্কি খামারের কাছে হাঁপানিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফছার আলী ও ইউপি মেম্বার ফিরোজ হোসেনের মধ্যস্থতায় আবারও রফাদফা হয়। সেখানে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ীকে জুয়েলকে ছেড়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের এক দোকানী বলেন, পুলিশ এসে আমার কাছে জব্দ তালিকায় স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর চান। আমি বিষয়টি জানি না এবং স্বাক্ষরও দিতে চাইনি। পরে পুলিশ মোড়ক ছাড়া (লেভেল বিহিনী) পাঁচটি বোতল আমার সামনে নিয়ে এসে বলে এগুলো ফেন্সিডিল। তারপর স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করি। এরপর জুয়েলকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে ঘন্টা দুয়েক পর দেখি জুয়েল বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ইতোপূর্বে পুলিশ ক্রেতা সেজে দুই বোতল ফেন্সিডিল কিনে নেয়। এরই প্রেক্ষিতে সেখানে অভিযান চালায় বলে পুলিশ জানিয়েছে। হাঁপানিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আফছার আলী বলেন, ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না। সংবাদ পাওয়ার পর পুলিশের সাথে সাক্ষাত করি। জুয়েল ভাল ছেলে হিসেবে সুপারিশ করলে পরে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। তবে কোন সমঝোতা আমি করিনি। কীটনাশকের দোকান ‘মেসার্স মা ট্রেডার্সে’ মালিক দেলোয়ার হোসেন জুয়েল বলেন, পুলিশ এসে আমার দোকানে অভিযান চালিয়ে মেয়াদ উর্ত্তিন (এক্সপেয়ার ডেট) কয়েকটি কীটনাশকের বোতল পায়। এরপর আমাকে আটক করে নিয়ে গিয়ে মাঝপথে ছেড়ে দেয়। তবে দোকানে অভিযান চালানোর সময় কৃষি অফিসের কোন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না। এসআই আব্দুল মান্নান-২ বলেন, দোকানে ফেন্সিডিল আছে মর্মে অভিযান চালানো হয়। এসময় দোকান থেকে স্পিরিট জাতীয় অ্যালকোল গন্ধের পাঁচটি উদ্ধার করা হয়। পরে বিষয়টি তদন্ত আনোয়ার হোসেন স্যারের সাথে পরামর্শ করে স্থানীয় চেয়ারম্যানের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়। তবে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ ভিত্তীহিন। এএসআই আইনুল হক বলেন, মাদক আছে এমন তথ্যের ভিত্তিত্বে ওই কীটনাশকের দোকানে অভিযান চালাই। পরে দোকান থেকে পাঁচ বোতল কীটনাশক পাওয়া যায়। এজন্য তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে টাকার বিনিময়ে জুয়েলকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাই বলেন, ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *