দেশের সমুদ্র সুরক্ষায় কোস্টগার্ড বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ছে
মনির হোসেন,মংলা: দেশের সমুদ্র সীমার তলদেশে যে বিপুল সম্পদ রয়েছে তা সুরক্ষায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনীর সক্ষমতা বেড়েই চলছে। এ বাহিনীর সক্রিয় উপস্থিতি দেশের উপকূলীয় এলাকার জনগনের সামাজিক নিরাপত্তায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে। বঙ্গোপসাগর বিধৌত নদী-মাতৃক বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন বিভিন্ন নদ-নদী এবং বিশাল সমুদ্রের নিজস্ব এলাকা ব্যবহারের মধ্যে নিহিত। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে যথোপযুক্ত সামুদ্রিক আইন-শৃংখলা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী তার নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসাবে কোস্টগার্ড বাহিনীর ভূমিকা পালন করে আসছিল। বেসামরিক প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনাধীন আইন-শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আওতাভূক্ত না হওয়ায় উপকূলীয় এলাকার জানমালের নিরাপত্তাসহ সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে একটি পৃথক সামুদ্রিক আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। যার ফলশ্রুতিতে “কোস্ট গার্ড এ্যাক্ট ১৯৯৪” মহান জাতীয় সংসদে পাশ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড গঠন করা হয় এবং ১৯৯৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারীতে একটি আধা সামরিক বাহিনী হিসাবে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনীর যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠা লগ্ন হতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনী বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানা, তৎসংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চল এবং বিভিন্ন নদ নদীতে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও নির্ভরতার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছে। কালের পরিক্রমায় আজ বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনী উপকূলীয় অঞ্চলে একটি আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীকে পরিনত হয়েছে। বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের ৯০ ভাগেরও বেশী পণ্যের আমদানি ও রপ্তানি সমুদ্র পথে হয়ে থাকে। তাই আমদানি ও রপ্তানি কাজে ব্যবহৃত সকল প্রকার দেশী ও বিদেশী জাহাজ সমূহের নদী ও সমুদ্রপথে নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে তথা দেশের অর্থনীতির প্রবাহ অব্যহত রাখতে কোস্টগার্ড বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকার কোন বিকল্প নেই। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে সমুদ্রতীর হতে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত টেরিটোরিয়াল সী এলাকা এবং ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত EEZ (Exclusive economic zone) এর সকল অধিকার সমূহ সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। এদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী জনগণের মূল জীবিকা এবং রপ্তানি আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভরশীল। এছাড়া বঙ্গোপসাগর প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল ও অন্যান্য বহু অনাবিষ্কৃত খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এ সকল মৎস্য ও খনিজ সম্পদ রক্ষায় কোস্টগার্ড বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ভৌগলিক অবস্থান ও দীর্ঘ ৭১০ কিঃ মিঃ সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল থাকায় সমুদ্র ও নদী পথে চোরাচালান বেশী হয়ে থাকে। এসব রোধকল্পে কোস্ট গার্ড বাহিনীর গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রয়েছে। তাছাড়া দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম এবং মংলা সমুদ্র বন্দরে আগত বিদেশী ও দেশী জাহাজসমূহের নিরাপত্তা প্রদান, সুবিশাল সুন্দরবনের পর্যটক, মৌয়াল, চিংড়ি চাষী, মাঝি ও অন্যান্য জনগনের নিরাপত্তা প্রদান করে কোস্ট গার্ড দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনী জম্মলগ্ন থেকে জলোচ্ছ্বাস, ঘূণিঝড়, সুনামি ও দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় উপকূলীয় জনগনকে সার্বিক সহায়তা এবং ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণ করে সর্বমহলে প্রশংশিত হয়েছে। তাই জাতীয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কোস্টগার্ড বাহিনীর অবদান অপরিসীম। বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনী মানব পাচার রোধ ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও পাচার রোধ, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে পাচার করে আনা ভারতীয় শাড়ি কাপড় জব্দ করা সহ সমুদ্রপথে মরন নেশা ইয়াবা, ফেনসিডিল,বিয়ার,বিদেশী সিগারেটসহ বিভিন্ন অবৈধ পণ্য জব্দ করে থাকে। দেশের উপকূলীয় এলাকার জনগনের সার্বিক নিরাপত্তায় সদা জাগ্রত কোস্টগার্ড বাহিনীর প্রতিটি সদস্য। কোস্টগার্ড বাহিনী দেশের উপকূলীয় এলাকার শিক্ষা স্বাস্থ্যর উন্নয়নেও নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনামূল্যে শিক্ষা সামগ্রী বিতরনসহ উপকূলীয় এলাকায় জেলেদের লাইফ জ্যাকেট প্রদান করাসহ ফ্রি চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিশাল সমুদ্র এলাকার সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনীর ৫৭ টি জাহাজ। বিশেষ করে গত ৩ বছরে কোস্টগার্ড বাহিনীর বহরে যুক্ত হয়েছে ৪ টি অত্যাধুনিক যুদ্ধ জাহাজ সিজিএস সৈয়দ নজরুল, সিজিএস তাজউদ্দিন,সিজিএস কামরুজ্জামান ও সিজিএস মুনসুর আলী। ৮৭ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০.৫ মিটার প্রস্থ এ জাহাজগুলো দেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তায় দারুন ভূমিকা রাখছে। ২০২৫ সালের মধ্য বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনীকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।