আরও একবার নৌকায় ভোট দিয়ে নৌকাকে বিজয়ী করুন: শেখ হাসিনা
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ উন্নয়ন পেয়েছে। নৌকা মানুষের বিপদের বন্ধু। নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকায় ভোট দেয়ায় ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। হজরত নূহ (আ.) এর নৌকা বিপন্ন মানুষকে যেভাবে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে এসেছিল সেভাবে আওয়ামী লীগের নৌকা মানুষের বিপদে এগিয়ে এসেছে। আরও একবার নৌকাকে বিজয়ী করুন।’ শনিবার (২২ ডিসেম্বর) সিলেটে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। উপস্থিত জনগণের কাছে ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের কাছে আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা যে প্রার্থী দিয়েছি তাদের জন্য ভোট চাই। নৌকায় ভোট চাইতে আপনাদের কাছে উপস্থিত হয়েছি। আওয়ামী লীগ জনগণের দল। আওয়ামী লীগ জনগণের সেবা করে। আওয়ামী লীগ থাকলে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। আওয়ামী লীগ এলে জনগণের কল্যাণ হয়। জনগণের জীবন মানের উন্নয়ন হয়।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যে উন্নয়ন করেছি এই উন্নয়ন ধরে রাখতে হবে। প্রত্যেকটা মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। তারুণ্য শক্তি, তরুণরাই আনবে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। তরুণদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছে যাবে। আমরা সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে উন্নয়ন করেছি; এই উন্নয়ন ধরে রাখতে হবে। নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী করতে হবে। বিএনপি-জামায়াত জোটের চরিত্র- হত্যা, খুন ও জঙ্গিবাদ। নির্বাচনে তারা কি করেছে! একেকজনকে চারবার করে নমিনেশন দিচ্ছে। যে যত টাকা দেবে তাকে নমিনেশন! বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক কোনো আদর্শ নেই। বিএনপি-জামায়াত ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে জীবন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। এরা মানুষ পুড়িয়ে মারা ছাড়া আর কিছু পারে না।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্নীতি, এতিমের টাকা চুরি করায় বিএনপি চেয়াপারসন আজ সাজাপ্রাপ্ত। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা আওয়ামী লীগ দেয়নি। খালেদা জিয়ার পছন্দের সেনাপ্রধান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এই মামলা দিয়েছিল। সেই মামলায় তাঁর সাজা হয়েছে। এছাড়া তাঁর বড় ছেলে তারেক জিয়া অস্ত্র মামলা, বোমা হামলা মামলা, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এই সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিদেশের মাটিতে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫ এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় এসে আমরা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করি। কিন্তু ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। তারা ক্ষমতায় এসে গুম-খুন-হত্যার রাজনীতি শুরু করে। দেশকে তারা বিশ্বের কাছে জঙ্গিবাদ, গুম-খুনের দেশ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। এরপর ২০০৮ সালে দুই মেয়াদে ক্ষমতায় এসে শিক্ষার হার বৃদ্ধি করেছি, বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি।’ সিলেটের উন্নয়ন বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘সিলেটের চারটি জেলার উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি আমরা হাতে নিয়েছি। আগামীবার ক্ষমতায় এলে এই কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়িত হবে। সিলেটে কোনও দারিদ্র্যতা থাকবে না।’দলীয় প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়ার পাশাপাশি তিনি জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীদের জন্য লাঙল প্রতীকেও ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। সিলেট আলিয়া মাদ্রাসায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ ও মহাজোট প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় এই আহ্বান জানান।
এসময় শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বীকারী প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। জনসভায় ভাষণ দেয়ার এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা সুনামগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-২ আসনের জয়া সেনগুপ্তা, সুনামগঞ্জ-৩ আসনে এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের পীর ফজলুর রহমান (জাপা), সুনামগঞ্জ-৫ আসনে মুহিবুর রহমান মানিক, মৌলভীবাজার-১ আসনের প্রার্থী শাহাব উদ্দিন, মৌলভীবাজার-২ আসনে বিকল্পধারার প্রার্থী এম এম শাহীন, মৌলভীবাজার-৩ আসনের নেছার আহমেদ, মৌলভীবাজার-৪ আসনের উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, হবিগঞ্জ-২ আসনের মো. আবদুল মজিদ খান, হবিগঞ্জ-৩ আসনের আবু জহির, হবিগঞ্জ-৪ আসনের মো. মাহবুব আলীকে পরিচয় করিয়ে দেন। এছাড়া শেখ হাসিনা সিলেট-১ আসনে ড. একে এম আবদুল মোমেন, সিলেট-২ আসনে ইয়াহইয়া চৌধুরী (জাপা), সিলেট-৩ আসনে মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী কয়েস, সিলেট-৪ আসনে ইমরান আহমদ, সিলেট-৫ আসনে হাফিজ আহমেদ মজুমদার, সিলেট-৬ আসনে নুরুল ইসলাম নাহিদকে পরিচয় করিয়ে দেন। জনসভায় ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার বিষয়টি লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেন। এসময় রেজা কিবরিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগের গাজী মো.শাহনেওয়াজের পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট চান শেখ হাসিনা। সমাবেশ শেষে বিমানের ফ্লাইটে বিকেলেই ঢাকার পথে রওয়ানা দেবেন শেখ হাসিনা।