ভোটের সময় মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ, নেটের গতি কমানোর সুপারিশ

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মোবাইল ব্যাংকি বন্ধসহ ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে আনার জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ভোটের দিন গুজব ছাড়ানো রোধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব এসেছে। পাশাপাশি ভোট কেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে মোবাইল ফোন নিয়ে ঢোকার ওপর নিষেধাজ্ঞা আসছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ছাড়া কেউ যাতে মোবাইল নিয়ে ঢুকতে না পারেন এজন্য নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সমন্বয় সভায় এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
ইসি সূত্র জানায়, সভায় উপস্থিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, নির্বাচনের দিন অনেকে কাকে ভোট দিয়েছেন তা মোবাইল ফোনে ছবি তুলেন। সাংবাদিকরা ভোট কক্ষে গিয়ে ভিডিও করেন। অনেকে ব্যালট পেপারের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেন। কেউ আবার গুজব ছড়ান। এর জবাবে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ভোট কেন্দ্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ছাড়া কেউ মোবাইল নিয়ে ঢুকতে পারবেন না। এনড্রয়েট তো দূরের কথা ৪০০ গজের মধ্যে কেউ বাটন মোবাইল নিয়েও কেউ ঢুকতে পারবেন না। তবে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপারে আমাদের করার কিছু নেই। সভায় কয়েকজন পুলিশ সুপার (এসপি) ভোটের দিন থ্রিজি নেটওয়ার্ক এর বদলে টুজি রাখার প্রস্তাব করেন। তবে এ ব্যাপারে কমিশন থেকে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। সূত্র জানায়, সভায় দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ওপর বিশেষ নজর রাখার প্রস্তাব করা হয়। যাতে বিশেষ কোনো গোষ্ঠী পর্যবেক্ষণের আড়ালে অপপ্রচার চালাতে না পারে। এছাড়াও সভায নির্বাচনের দিন সাংবাদিকদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়েও কড়াকড়ি আরোপের ওপর পুলিশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব আসে। নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার বন্ধে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ করার প্রস্তবনা দেয়া হয। পোস্টাল লেনদেনও বন্ধের প্রস্তাব আছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়- পোস্টাল লেনদেনের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা পযর্ন্ত পাঠানো যায়। এইসব টাকা নির্বাচনে অবৈধভাবে ব্যবহার করা হতে পারে বলে তারা জানান। তিন দিন আগে থেকে মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যাপারে ইসিও সায় দিয়েছে বলে সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সভায় জানানো হয়, নির্বাচনের সময় অভ্যন্তরীন ব্যাংক থেকে টাকা তোলার পরিমাণ বেড়ে গেছে। এসব কালো টাকা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইসিকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন। বৈঠকে এসপিরা জানান, বৈধ অস্ত্র শুধুমাত্র প্রার্থীরা নিরাপত্তার জন্য নিজের কাছে রাখতে পারবেন। তবে তা ব্যবহার করতে পারবেন না। ভোটের এক সপ্তাহ আগে বৈধ সকল অস্ত্র (প্রার্থী ব্যতিত) জমা দিতে হবে। সেনাবাহিনীর মোতায়েনের বিষয়ে সভায় দুই ধরনের বক্তব্য উঠে এসেছে। ইসির পুর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত ছিল। সভায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি পক্ষের দাবি, নয় দিনের চেয়ে বাড়ানো হোক। আরেক পক্ষের দাবি, সেনাবাহিনীর মোতায়েনের সময় কমিয়ে বরং বিজিবিকে আরও আগে নামানো হোক। তবে ইসি এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। সভায় রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনা হয় । নির্বাচনে যাতে কোনো মহল রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করতে পারে সেজন্য বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হবে বলে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়।
সভায় কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে ২৪ ঘণ্টা ফোন আসছে। বেশিরভাগই বলেন, স্যার ভোট দিয়ে বাসায় ফিরতে পারবো কিনা। ভোটারদের এই আশঙ্কা রাখা যাবে না। এটা দূর করতে হবে আপনাদের। সভায় কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ১২ ডিসেম্বর ঢাকা-১ আসনের প্রার্থীকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ফোন করে জানতে চাইলে তিনি নাকি কিছু জানেন না। আপনার প্রার্থীকে তুলে নিয়ে গেলো আপনি কিছুই জানেন না। তাহলে এতো সমন্বয়হীনতা নিয়ে আপনারা কাজ করছেন কিভাবে। কবিতা খানম আরও বলেন, ‘আগামী ২০ ডিসেম্বরের পর পরিস্থিতি আরও বেশি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই সময়টাতে আপনাদের অধিক ধৈয্য ধারণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ফৌজদারি অপরাধ আর আচরণবিধি এক নয়। আপনাদের ছোট্ট একটা ভুলের কারণে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে।’ সভা শেষে কমিশনার রফিকুল ইসলাম তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকের সভায় অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে চুড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সভার প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে কমিশন বসে চুড়াস্ত সিদ্ধান্ত নিবে। এ নিয়ে গণমাধ্যমের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *