বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি আদমদীঘিতে ইউরিয়া সারের কৃত্রিম সংকেট ঠকছে কৃষক


আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার আদমদীঘিতে চলতি আমন মৌসুমে কিছু অসাধু ডিলার ও খুচরা সার ব্যবসায়ীরা ইউরিয়া সার সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে সার বিক্রি করছে এমন অভিযোগ উঠেছে। কতিপয় অসাধু ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ঘরে সার নেই, জমাট বাঁধানো সার বলে কৃত্রিম সংকট করে এ অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকদের ঠকিয়ে তাদের নিকট বেশি দামে সার বিক্রয় করছে। ডিলার ও খুচরা সার ব্যবসায়ীরা সরকারি নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করেই এ সব জমাট বাঁধানো বিভিন্ন কোম্পানীর ইউরিয়া সার প্রতি বস্তায় ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রয় করে আসছে। ফলে জমাট বাঁধানো সার বেশি দামে ক্রয় করে প্রতারিত ও আর্থিক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে এলাকার কৃষকরা। তাছাড়া জমাট বাঁধা সারের গুণগত মান নিয়েও দেখা দিয়েছে অনেক প্রশ্ন। এ সব সার জমিতে প্রয়োগ করে কোন ফল পাচ্ছে না কৃষকরা। আদমদীঘি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ইউরিয়া ও নন ইউরিয়া সার ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য উপজেলায় বিসিআইসির ডিলার রয়েছে মোট ১০ জন ও সাব-ডিলার (কার্ডধারী সার ব্যবসায়ী) রয়েছে প্রায় ১৮ জন এবং কার্ডধারী কীটনাশক বিক্রেতা রয়েছে পাইকারী ১৭, খুচরা ১৪৭ জন। ফলে বাজারে সারের কোন সংকট নেই। তবে খুচরা সার ব্যবসায়ীরা বেশী দাম ও ওজনে কম দেয়ার বিষয়ে কৃষকরা অভিযোগ তুলেছেন। বিএডিসি ১৫ জন বিসিআইসি ১০ খুচরা ৫৫ জন। এলাকার কৃষক ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিদেশী চায়না, সৌদি/আবুধাবি, আমেরিকা থেকে আমদানী করা বিভিন্ন প্রকারের ইউরিয়া সার হওয়ায় বিপাকে ও প্রতারণার স্বীকার হচ্ছেন কৃষকরা। কৃষকরা আরোও বলেন যত প্রকারেরই সার হোক না কেন সরকারের বেঁধে দেয়া দাম তো একই। তাছাড়া সারে বিভিন্ন ভেজাল ও ডিএপি বাংলাদেশী সারের বস্তায় ৪/৫ কেজি ওজনে কম দিয়ে নিজস্ব সেলাই মেশিনে সেলাই করে প্রতি বস্তা ৫০ কেজি স্থলে ৪৫ কেজি বিক্রয় করে থাকে এমন অভিযোগও রয়েছে। খোদ ডিলাররা এ সব সারের বস্তা সরকারের বেঁধে দেয়া মূল্য ৮০০ টাকার ইউরিয়া সার ৮৩০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রয় করছে বলে স্থানীয় কৃষকরা জানান। বাজারে খোঁজ নিয়ে এর সত্যতাও মিলেছে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষকরা জানান, ইউরিয়া সার সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চাইতে অনেক বেশি দামে ডিলারদের নিকট থেকে সার নিয়ে এসে খুচরা ব্যবসায়ী আরো বেশি দামে বিক্রি করছে। তাছাড়া এসব জমাট বাঁধানো সার জমিতে প্রয়োগ করে কোন কাজ হচ্ছে না বলে তারা জানায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খুচরা ডিলার জানান, দেশী বস্তায় বিদেশী সার ভরে প্রতি বস্তায় কম দেয়া ও দামের হেরফের সব তুঘলকি কারবার হয়ে থাকে অনেক ডিলারের ঘর থেকে, আমাদের করার কিছু নেই। এতে আমরা ব্যসায়ীরাও মার খাচ্ছি। উপজেলার নসরতপুর বাজারের মেসার্স মঙ্গল সাহা ট্রেডার্সের স্বত্ত¡াধিকারী, মের্সাস নুরুল ইসলাম ট্রের্ডাসের স্বত্বাধীকারী ও মের্সাস রুমা কৃষি ভান্ডারের স্বত্বাধীকারী জানান, বিদেশী ইউরিয়ার বস্তা খারাপ হওয়ায় বস্তা পরিবর্তন করতে হয় অনেক সময়। তাছাড়া বস্তায় বাফার গুদাম থেকেই অনেক সময় সার কম দেয়া হয়। তাদের ঘরে বর্তমানে ভালো কোন সার নেই যা আছে সব জমাট বাঁধানো নষ্ট সার। কৃত্রিম সংকট ও দামের ব্যাপারে তাদের কে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান, চলতি ভরা মৌসুমে সার ঠিকমত পাওয়া যায় না তাই অনেক ডিলাররা একটু বেশি দাম নিয়ে থাকে। এতে কৃষকরা ক্ষতি গ্রস্থ হবেন না বলে তারা জানান। এ ব্যাপারে উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কামরুজ্জামান বেশি দামে সার বিক্রি ও জমাট বাঁধা সার বিক্রির কথা স্বীকার করে বলেন, উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে গোপনে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হচ্ছে। কোন ব্যবাসায়ীর বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে আমরা জেনেছি বাফার গুদাম থেকেই এ ধরনের জমাট বাঁধা সার দেওয়া হচ্ছে ডিলাদের মাঝে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *