এসবি অফিস থেকে বলছি, ভেরিফিকেশনের খরচের জন্য বিকাশে টাকা পাঠান।


‘আমি এসবি অফিস থেকে বলছি। আপনি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন। আপনার ফাইল আমার কাছে আছে। ভেরিফিকেশনের খরচের জন্য বিকাশে টাকা পাঠান।’ এভাবেই একটি প্রতারক চক্র আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের আশপাশের বিভিন্ন ফটোকপির দোকান ও দালালদের কাছ থেকে আবেদন ফরমের কপি সংগ্রহ করে সেখানে থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন করে এসবির অফিসার পরিচয়ে আবেদনকারীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) প্রতারক চক্রের প্রধান মো. রাকিব মিয়াসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আটক অন্য দুইজন হলেন- মো. কামাল হোসেন ও মো. সজীব। শুক্রবার (৩১ আগস্ট) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে পিবিআই।বৃহস্পতিবার বিকেলে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন একটি স্টুডিও ও ফটোকপির দোকানের সামনে থেকে তাদের আটক করে পিবিআই’র ঢাকা মেট্রোর একটি বিশেষ দল। পিবিআই জানায়, মোবাইল ফোনের কললিস্ট থেকে অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পেয়ে অভিযান চালানো হয়। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মুঠোফোন ও সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রতারণা করার কথা স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত রুবেল, মনির, ইউসুফসহ অজ্ঞাত আরও ৭ থেকে ৮ জনের বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। তবে তারা পলাতক রয়েছেন। তাদের আটকের জন্য অভিযান চলছে। চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে পিবিআইর এসআই এমদাদুল হক বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেছেন।পিবিআই ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, মো. মহসীন আলম মোল্লা নামের একজন ২০ আগস্ট আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে তার মা ও স্ত্রীর জন্য পাসপোর্টের আবেদন করেন। পাঁচ দিন পর এসবি পরিচয় দিয়ে ফোন করে বলা হয়, আমি এসবি অফিস থেকে ইন্সপেক্টর রফিক বলছি। আপনি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন। আপনার ফাইল আমার কাছে আছে। এরপর মহসীনের কাছে ওই ব্যক্তি তিন হাজার টাকা দাবি করেন। তিনি তত্ক্ষণাৎ দেড় হাজার টাকা বিকাশ করেন। ঠিক পরদিনই পাসপোর্টের তদন্তের জন্য মালিবাগ এসবি (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) অফিস থেকে তাকে ডাকা হলে তিনি বুঝতে পারেন, এর আগে পরিচায়দানকারী এসবির ভুয়া সদস্য ছিলেন। একই চক্রের ফাঁদে পড়েছিলেন একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকও। তার কাছেও পাসপোর্ট তদন্তের জন্য দুই হাজার টাকা দাবি করা হয়। তিনি এসবি পরিচয়দানকারী সদস্যকে টাকা পাঠিয়ে দেন। পরে এসবি অফিসে গিয়ে প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন।এ ছাড়া রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা জনৈক এক নারীও এ প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে এক হাজার টাকা খুইয়েছেন। তার কাছে পাসপোর্টের ভেরিফিকেশনের খরচ বাবদ এসবি অফিসের ইন্সপেক্টর পরিচয়ে দেড় হাজার টাকা দাবি করেন চক্রের এক সদস্য। একইভাবে তেজগাঁও এলাকার একজনের কাছ থেকে এক হাজার ও উত্তরা এলাকার একজনের কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা হাতিয়েছেন প্রতারক চক্রটি।বিজ্ঞপ্তিতে পিবিআই আরও জানায়, প্রতারক চক্রটি আগারগাঁও ঢাকার পাসপোর্ট অফিসের আশপাশের বিভিন্ন ফটোকপির দোকানদার ও দালালদের কাছ থেকে প্রতিটি আবেদন ফরমের কপি ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বিনিময়ে সংগ্রহ করেন। সেই ফরমে দেয়া মোবাইল নম্বরে ফোন করে এসবির অফিসার পরিচয়ে আবেদনকারীদের কাছে ভেরিফিকেশনের খরচ বাবদ টাকা হাতিয়ে নেন। প্রতিদিন তারা ৪০ থেকে ৫০ জন আবেদনকারীকে ফোন করে থাকেন। ফোন করার জন্য তারা নিরিবিলি স্থান হিসেবে শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠসহ বিভিন্ন স্থান বেছে নেন। আবেদনকারীকে তারা আবেদন করার দুই-তিন দিন পর অফিস খোলার দিন এবং অফিস সময়ই ফোন করেন।বেশিরভাগ সময় আবেদনকারীরা দেখা করতে চাইলে তারা বলেন, খরচের বিষয় আছে, আপনি আমার বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠিয়ে দেন। আমি রিপোর্ট যথাসময়েই পাঠিয়ে দেব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *