ভুয়া কাজীর পাতানো ফাঁদে পা দিচ্ছে গাইবান্ধার গ্রামগঞ্জ থেকে পালিয়ে আসা অপ্রাপ্ত ছেলে ও মেয়ে
সরকার যখন বাল্য বিয়ে ঠেকাতে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বর-কনে ও তাদের অভিভাবক এমনকি নিকাহ্ রেজিস্টারদের সাজা দিচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে গাইবান্ধায় ভুয়া নিকাহ্ রেজিস্টারের (কাজী) দৌরাত্ন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ফের বাল্য বিয়ের প্রবণতা বাড়ছে।
এসব ভুয়া কাজীর পাতানো ফাঁদে পা দিচ্ছে বিভিন্ন গ্রামগঞ্জ থেকে পালিয়ে আসা অপ্রাপ্ত ছেলে ও মেয়ে। এসব কাজীর সাথে সখ্যতা রয়েছে বিভিন্ন এলাকার মেম্বর, চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক নেতাএবং নামধারী সাংবাদিক। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিয়ে রেজিস্ট্রির জন্য দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন এবং পৌরসভা ওর্য়াডে একজন করে নিকাহ্ রেজিস্টার নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আইনে ছেলের ক্ষেত্রে ২১ আর মেয়ের ক্ষেত্রে ১৮ বছরের কমে বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে বাধা রয়েছে। সরকারের এই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে প্রতিদিন আট থেকে দশটি বাল্য বিয়ে রেজিস্ট্রি করছেন এজাহান আলী খান মিঠু নামের এক ভুয়া কাজী।।তার বাড়ী গাইবান্ধা সোনালী ব্যাংকের পশ্চিম পাশ্বে (বাস টার্মিনাল সংলগ্ন) বনানী আবাসন এলাকায়।তিনি তার বাড়ীতে কাজী অফিস খুলে বসেছেন।প্রত্যেকটি বাল্য বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে পাঁচ থেকে ছয়হাজার টাকা পর্যন্ত নেন।গাইবান্ধা পৌরসভার ৩ নম্বর ওর্য়াডের বাসিন্দা তিনি।অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে গাইবান্ধা পৌরসভার ৩ নম্বর ওর্য়াডের নিকাহ রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলী পাঁচজনকে তার সহকারি হিসেবে (অলিখিত) নিয়োগ দিয়েছেন। তারা বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জে গিয়ে গোপনে বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। তারা হলেন,ইসমাইল হোসেন,মিলন মিয়া, এজাহান আলী খাঁন মিঠু, আবু বক্কর ও জামিল মিয়া।তাদের মধ্য জামিল মিয়াকে গাইবান্ধা ডিসি অফিসের সামনে থেকে গত ২৯ জুলাই নাবালিকার বিয়ে রেজিস্ট্রির অভিযোগে আটক করে পুলিশ। এর আগে একই অভিযোগে মিলন মিয়াকেও আটক করা হয়। সেসময় মিলন কাজীর কাছে থেকে কয়েকটি ভুয়া ভলিয়ম বই জব্দ করে পুলিশ। পরে এই পেশা বাদ দিয়ে অন্য পেশায় নিয়েজিত থাকবেন মর্মে মুচলেকা দিয়ে রক্ষা পান তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজন নিকাহ্ রেজিস্ট্রার বলেন, কাজী মোহাম্মদ আলী নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও তার রয়েছে বেশ কয়েকজন সহকারি। বগুড়া থেকে ছাপানো ভলিওম বই সহকারিদের কাছে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তিনি। প্রতিমাসে তার ১৫ থেকে ২০ টি বই বিক্রি হয়।এব্যপারে এজাহান আলী খাঁন মিঠু বাল্য বিয়ে রেজিস্ট্রি করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি দাবী করেন, ৩ নম্বর ওর্য়াডের নিকাহ্ রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলীর সহকারী হিসেবে আরও অনেকেই কাজ করছেন, আমিও করছি।নিকাহ্ রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার কোনও সহকারি নেই। শরীর খারাপ থাকলে মাঝে মধ্য মিলন মিয়াকে বিয়ে রেজিস্ট্রির জন্য পাঠাই। এজন্য তাকে পারিশ্রমিক দুই-তিনশ টাকা দেই। মিঠু,বক্কর, জামিল ও ইসমাইলকে আমি চিনি না।জানতে চাইলে জেলা রেজিস্ট্রার মো. আইয়ুব আলী বলেন, নিকাহ রেজিস্ট্রার সহকারি দিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে পারেন না।আইনে কোথাও সহকারি নিয়োগের কথা বলা হয়নি।বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।