ঝিনাইদহ এফ এন এফ ফার্মাসিউটিক্যালস কর্মচারীদের কাকুতি মিনতি


সাহিদুল এনাম পল্লব, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি: বেশ কয়েক দিন আগে একটি অচেনা নম্বর থেকে কল এলো। মোবাইল কল রিসিপ করার সাথে সাথে অপর প্রান্ত থেকে একটি অচেনা কণ্ঠ স্বরে অনুনয় করে জিজ্ঞাসা করল আপনি সাংবাদিক পল্লব । প্রতি উত্তরে আমি সম্মতি জ্ঞাপন করার পর কান্না কান্না সুরে বলল আমি ঝিনাইদহের এফএনএফ এ চাকুরী করি আজ প্রায় ৬ মাস যাবত বেতন পাই না। ছেলে সন্তান নিয়ে খুব অসুবিধায় আছি, তাদের পড়ানো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ঘরে খাবার নেই, কোন দোকানদার এখন আর বাকি দেয় না। প্রায় ১২/১৪ বছর আছি কোম্পানির নিকট ১৪ মাসের বেতন পাব। ৫০০ টাকার জন্য ঠেঙ ভেঙ্গে দাঁড়ায়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারপরেও পাওয়া যায় না। এই নিয়ে বেশী কথা বললে কোন টাকা না দিয়ে কোম্পানি থেকে বের করে দেয়। কি করব এখন অন্য কোথায় যাওয়ার জাগা নেই। আমার কথা যদি আপনি গোপন না রাখেন তাহলে জানতে পারলে ঘাড় ধরে বের করে দেবে। এখন যাব কোথায় বউ বাচ্ছা কি খাবে ? তখন আত্মহত্যা ছাড়া উপায় থাকবে না। কথা গুলি বলার পর কিছুটা থামল । তখন তার নিকট থেকে জানলাম যে তাদের বেতন দেওয়া হয় হাতে হাতে। বেতনের খাতায় কোন স্বাক্ষর করা হয় না। নেই কোন ব্যংক হিসাব। ইচ্ছা করলেই প্রমান করতে পারবে না যে সে কত টাকা অফিস থেকে নিয়েছে। কত টাকা অফিসের কাছে পাওনা আছে ? ঘটনা জানার পর গত শনিবার আমার কয়েক জন দুপুর ১২ টার দিকে গেলাম এফএনএফ ঔষুধ কোম্পানিতে। প্রবেশ পথে পরিচয় দেওয়ার পর প্রবেশ বাধা পেলাম। গেটে দারোয়ান বলল অফিসে এখন তেমন কেউ নেই যে আপনি তার সাথে কথা বলতে পারবেন। আমারা বললাম যে আমরা একটু ওয়ার্কার দের সাথে কথা বলব তখন সে আমাদের গেটে দাড় করায়ে রেখে ভিতরে জানতে গেল। বেশ খানিক সময়ে গেটে দাঁড়িয়ে থেকে জানতে পারলাম যে ঝিনাইদহের এফ এন এফ ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির প্রায় ২০০ শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাদের সন্তানদের পড়ালেখা। কেউ কেউ চাকুরী ছুটির পরে অন্য কাজ করে কোনমতে তাদের দিনপাত করছে। জানা গেছে কোম্পানীটি ২০০০ সালে ঝিনাইদহের নগরবাতান এলাকায় প্রথম তাদের কার্যক্রম শুরু করে। প্রথম দিকে তারা গবাদি পশুর ঔষুধ উৎপাদন করলেও বর্তমানে তারা মানব রোগের ঔষুধ উৎপাদন শুরু করে কোম্পানীকে প্রসারীত করেছে। বর্থমানে কোম্পানিটি ৬০টির অধিক প্রডাক্ট উৎপাদন করছে। নতুন এ প্রজেক্ট চালুর কথা বলে মালিক পক্ষ শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতন দীর্ঘ ৬ মাস থেকে শুরু করে কারুর কারুর ক্ষেত্রে ১৪ মাস পর্যন্ত বকেয়া রেখেছে। যে সকল দোকানে তারা বাকিতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতো তারা আর তাদেরকে মালামাল দিচ্ছে না বরং তারা পাওনাদারদের কাছে হেনাস্তা হচ্ছে। বন্ধ হতে বসেছে সন্তানদের পড়ালেখা। এ প্রতিষ্ঠানে চাকরীতে কোন নিয়োগপত্র বা যোগদান পত্র দেওয়া হয় না। চাকরীর কোন নিশ্চয়তা না থাকায় তারা নিরবে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। বেতন ভাতা লেনদেনে কোন স্বাক্ষর বা রেভিনিউ ষ্ট্যাম ব্যবহারও করা হয় না। মাস শেষে সুপারভাইজারের কাছে নগদ অর্থ দিয়ে দেয় সে শ্রমিক- কর্মচারীদের মধ্যে বন্টন করে দেয়। আর্থিক লেনদেনের কোন প্রমানাদি শ্রমিক কর্মচারীদেরকে দেখানো হয়না। একজন শ্রমিকেরও লক্ষাধিক টাকা বকেয়া রয়েছে। একই কারনে এর পূর্বে একবার শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনাও ঘটেছিলো তখন মালিকপক্ষ কিছু বকেয়া বেতন পরিশোধ করে আন্দোলন সাময়িকভাবে বন্ধ করেছিলো। চাপা কান্না কিন্ত বাহিরে প্রকাশ করার মত নেই। প্রায় আধা ঘণ্টা পরে তরিকুল নামের একজন কর্মকর্তার সাথে কথা হলে সে কিছুই বলতে চাইল না। শুধু বলল যে এম ডি স্যার দেশের বাহিরে আসলে সকলের বেতন দিয়ে দেবে। তাছাড়া মাঝে মাঝে তো একটি পরিবারের মাঝেও সমস্যা হয়। আমারা হিউম্যান প্রডাকশনে যাওয়ার পর আমাদের একটু সাময়িক সমস্যা হয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে হলে দুই দিন পরে আসবেন। কারখানা থেকে বের হয়ে পাশের একটি চায়ের দোকানে বসলে দোকান দার বলল যে ঔষুধ কোম্পানি প্রায় কর্মচারীদের বেতন দেয় না। ওদের কোন মাল বাকি দিলে তা আর পাওয়া যায় না। কারখানার বাহিরে দেখা কয়েক জনের সাথে কথা বলে আরও জানা গেল যে রোজার মাসে ও ইদুল ফিতর তাদের পরিবার গুলি খুবই অসহায় অবস্থার মধ্যে দিয়ে ঈদ কাটিয়েছে। তবে বেতনের টাকা না দিলেও বোনাসের টাকা দিয়েছে।এই ভাবেই চলছে ঝিনাইদহ এফ এন এফ ফার্মাসিউটিক্যালস কর্মচারীদের ৬ মাস থেকে ১৪ মাস পর্যন্ত বেতন বকেয়া, মানবেতর জীবন যাপন করছে ২০০টি পরিবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *