৩০ মন পুশচিংড়ি ও ৭৩ কচ্ছপ আটক সুন্দরবনে ৮ আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ ও অপহৃত ৮ জেলে উদ্ধার
মনির হোসেন, মংলা (বাগেরহাট): বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনী পশ্চিম (মংলা) জোনের অপারেশন টিমের সদস্যরা চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকাসমূহে পৃথক অভিযান চালিয়ে ৮টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৬ রাউন্ড গুলির খোসা, ৩০ মন পুশ চিংড়ি, ৫৭ লাখ পিস রেনুপোনা ও ৭৩ টি কচ্ছপ ও দস্যুদের ব্যবহৃত একটি নৌকা উদ্ধার করেছে। এছাড়াও দস্যুবাহিনীর কাছে জিম্মি থাকা ৮ জেলেকে উদ্ধার করে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনী পশ্চিম জোনের অপারেশর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, গত ১৩ জুলাই শুক্রবার দুপুর ১ টায় খুলনার খান জাহান আলী সেতু এলাকায় একটি পিকআপ গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৫৭ লাখ পিস রেনুপোনা ও ৭৩টি জীবিত কচ্ছপ জব্দ করা হয়। তবে এ ঘটনায় কেউ আটক হয়নি।জব্দকৃত রেনুপোনা ও কচ্ছপ রুপসা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে নদীতে অবমুক্ত করা হয়। জব্দকৃত রেনুপোনা ও কচ্ছপের আনুমানিক বাজার মূল্য ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা বলে জানিয়েছে কোস্টগার্ড বাহিনী পশ্চিম জোন। এছাড়াও গত ১২ জুলাই পশ্চিম সুন্দরবনের মাটিভাঙ্গা এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দস্যুদের আস্তানায় অভিযান চালানোর সময় দস্যুরা কোস্টগার্ডকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে কোস্টগার্ড সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালায়। উভয়পক্ষের গুলিবিনিময়ের এক পর্যায়ে দস্যুরা বনের গহীনে পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থল থেকে ২ টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬ রাউন্ড গুলির খোসা ও দস্যুদের ব্যবহৃত নৌকা এবং দস্যুদের কাছে জিম্মি থাকা ৮ জেলেকে উদ্ধার করে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অন্যদিকে গত ১১ জুলাই সন্ধ্যায় খুলনার রুপসাঘাট এলাকায় দুটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ৩০ মন পুশকৃত চিংড়ি জব্দ করা হয়। জানা গেছে, রুপসাঘাটের সুমি ফিস হ্যাচারী ও অতুল এন্টার প্রাইজ নামের দুটি প্রতিষ্ঠানকে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করার অপরাধে যথাক্রমে ৫০ হাজার ও ৫ হাজার টাকা করে মোট ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দকৃত পুশচিংড়ি পরে রুপসা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
অপরদিকে গত ১০ জুলাই মঙ্গলবার রাতে সুন্দরবনের নলিয়ান বাসন্দিয়া গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ৪ টি আগ্নেয়াস্ত্র (দেশীয় একনলা বন্দুক) জব্দ করা হয়েছে। জানা যায়, ওই রাতে সুন্দরবনের বাসন্দিয়া গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় একদল দস্যু ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল এমন সংবাদের ভিত্তিতে ওই এলাকায় অভিযান শুরু করে কোস্টগার্ড বাহিনী। এ সময় কোস্টগার্ড সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে দস্যুরা বনের গহীনে পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থল থেকে ৪ টি আগ্নেয়াস্ত্র (দেশীয় একনলা বন্দক) জব্দ করা হয়। জব্দকৃত অস্ত্র পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দাকোপ থানায় হস্তান্তর করা হয়।একদিকে গত ৫ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে পশ্চিম সুন্দরবনের ফুলহাতা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় দস্যুদের আস্তানায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ২ টি আগ্নেয়াস্ত্র (দেশীয় একনলা বন্দুক) জব্দ করা হয়।জানা গেছে, ওই দিন দুপুরে ফুলহাতা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় একদল দস্যু ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে স্থানীয় লোক মারফত এমন সংবাদ জানার পর ওই এলাকায় অভিযান শুরু কোস্টগার্ড বাহিনীর সিজি কন্টিনজেন্ট শরনখোলা স্টেশনের অপারেশন টিমের সদস্যরা। এ সময় কোস্টগার্ড সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় দস্যুবাহিনীর সদস্যরা। সেখান থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র(দেশীয় একনলা বন্দুক) জব্দ করা হয়। জব্দকৃত আগ্নেয়াস্ত্র পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মোড়েলগন্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।কোস্টগার্ড বাহিনী পশ্চিম (মংলা) জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, কোস্টগার্ড বাহিনীর এখতিয়ারভুক্ত এলাকাসমূহে মৎস্য সম্পদ সংরক্ষনের অংশ হিসেবে পুশচিংড়ি, রেনুপোনা ও জীবিত কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, সুন্দরবনে দস্যুদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে কোস্টগার্ড বাহিনী পশ্চিম জোন নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছে। দস্যুদের কাছে মুক্তিপণের দাবিতে জিম্মি থাকা জেলেদের উদ্ধার করে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।