শরীয়তপুরের নড়িয়ায় বৈদ্যতিক তারে জড়িয়ে শিশু শ্রমিকের মৃত্যু।


মোঃ জামাল উদ্দিন,শরীয়তপুর ব্যুরো: শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলায় বিদ্যুৎপিষ্ট হয়ে সাব্বির হোসেন নামে ১৬ বছরের এক শিশুশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।সাব্বির হোসেন একই উপজেলাধীন নড়িয়া পৌরসভার ০৩নং ওয়ার্ডের সোনারবাজার গ্রামের রফিক মাদবরের ছেলে এবং অভাবের দায়ে নির্মানশ্রমিকের কাজ করতো। সাব্বিরের মা বারবার মূর্ছা যায়, প্রলাপ বকে “সাব্বির ফোন অাইছে, ফোন ধইরোনা বাবা, কও তোমার শরির খারাপ, বাবা ও বাবা তুমি কই?” কোনভাবেই সে মানতে চায় না তার সাব্বির ঘরে নেই। বাড়ির রাস্তায় গড়িয়ে গড়িয়ে প্রলাপ করছে সাব্বিরের মা। এই ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহত সাব্বিরের স্বজনদের বরাতে জানতে পারি, পিতা রফিক মাদবর পেশায় রিক্সাচালক, পরিবারের অভাবের কারনেই সাব্বির হোসেন(১৬) কে পাশের গ্রামের রাজমিস্ত্রি কন্টাক্টার নান্নু মাঝীর সাথে নির্মান কাজে দেওয়া হয়েছিলো। সাব্বির প্রতিদিনের ন্যায় অাজ ০২ জুন শনিবার সকালে ফতেজঙ্গপুর ইউনিয়নের ০৭নং ওয়ার্ডের সাতপাড় গ্রামে রতন সৌদি প্রবাসী বেপারীর বাড়িতে বিল্ডিংয়ের কাজে যায়। কাজে পৌছানোর পরেই মুঠোফোনে খবর অাসে, নির্মানাধীন ভবনের পাশে অপর অারেক ভবনের ছাদের পাশে থাকা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে সাব্বিরের মৃত্যু হয়েছে। নড়িয়া পৌর মেয়র সহিদুল ইসলাম বাবু রাড়ী, স্থানীয় পৌর কমিশনার সাত্তার খলিফা, অালী কমিশনার সহ নড়িয়া থানাপুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং সাব্বিরের মৃতদেহ উদ্ধারর করে। পোষ্টমর্টেমের জন্য মৃতদেহ শরীয়তপুর জেলা সদর ডোমে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে নড়িয়া থানা পুলিশ সূত্র। দূর্ঘটনাস্থ ফতেজঙ্গপুর ইউনিয়নের সাতপাড় গ্রামের রতন বেপারীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি দুটি একতলা ভবন রয়েছে, ভবনের পাশেই প্রায় লাগানো অবস্থায় পল্লিবিদ্যুতের তার। তার মধ্যে একটি ভবন নির্মানাধীন। সৌদি প্রবাসী রতনের স্রী বিউটি বলেন, প্রথম ভবনটার মালিক তার দেবর, তবে এই ভবনে কেউ থাকেন না। অামার বাড়ির ভবনের কাজ এখনো শেষ হয়নি, সাব্বির অাজ সকালে সবার অাগেই এসেছিলো কাজে, বাড়ির ছাদ টপকে অামার দেবরের ছাদে উঠেছিলো, পাশে বিদ্যুতের তার, কিভাবে দূর্ঘটনা ঘটলো যানি না, যখন ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছে তখন সবাই শব্দশুনে ছুটে গিয়ে দেখি সাব্বির মাটিতে পড়ে অাছে, কোন নড়াচড়া করছে না। অামরা প্রথমে কন্ট্রাক্টার কে জানাই, পরে সকলকে জানিয়েছি।ঘটনাস্থলে উপস্থিত সকলেই বলেন,এই বিদ্যুতের তার পল্লিবিদ্যুতের লোকজন সরিয়ে নিবে বলেছিলো, বিল্ডিং বানানোর পরে যখন তার টানে এখান দিয়ে তখনই বলেছিলো, এখন অামরাও ভয়ে অাছি, বাড়িতে কতো পোলাপান অাছে, কখন অাবার কোন দূর্ঘটনা ঘটে যায় কে যানে?নড়িয়া পল্লিবিদ্যুতের এজিএম মিজানুর রহমানের কাছে মুঠোফোনে ঘনটা সম্পর্কে অবহিত করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফতেজঙ্গপুর ইউনিয়নের সাইট টা শরীয়তপুর সদর অফিস থেকে দেখা হয়, অামাদের অাওতায় না, তবে নির্দেশনা দেওয়া থাকে কোন লাইন টানতে গেলে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হয় যেনো জনসাধারন কোনরুপ দূর্ঘটনার স্বিকার না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে। অামি জানলাম, বিষয়টা অবশ্যই মর্মান্তিক, অামি সদর অফিসকে অবহিত করবো।একদিকে পেটের দায়ে শৈশবের দূরন্তপনাকে দাবিয়ে রেখে শিশুশ্রমে যেতে বাধ্য হলো সাব্বির, অপরদিকে পল্লীবিদ্যুতের তারটিও বসত ভবনের ছাদ ঘেসে, এটা কি দূর্ঘটনা? নাকি অবহেলার ফলাফল? নাকি কন্ট্রাকটারের নজরদারীত্বে গাফিলতী? শ্রমবিক্রি করতে অাসা শিশুটির দিকে নজরদারি রাখা কি উচিত ছিলোনা? জানতে চায় কতিপয় সমাজকর্মীরা।
শিশুশ্রম বন্ধ থাকলেও নড়িয়ায় শ্রমবিক্রি করা শিশুর পরিমান অনেকটাই বেড়ে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *