কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত


সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন সরকারের আশ্বাসের ভিত্তিতে আগামী ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে সচিবালয়ে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একথা জানিয়েছেন।কাদের বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা বিবেকের ভাষা প্রয়োগ করবে-এমন প্রত্যাশা করি। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করা হবে। তরুণদের দাবি যৌক্তিক হলে তা উপেক্ষা করা হবে না। আগামী মে মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত সরকার বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। এ পর্যন্ত তারা তাদের আন্দোলন স্থগিত রাখবে।’
এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সচিবালয়ে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। বৈঠক শেষে সেতুমন্ত্রী ব্রিফিং করে বলেন, ‘যারা আন্দোলন করছে; তরুণ সমাজ, তারা আমাদের রাজনীতিরও বিরাট অংশ। এবং এদের ব্যাপারে আমাদের একটা দুর্বলতা অবশ্যই আছে।’
কাদের আরও বলেন, ‘আমরা রজানীতিটা শুধু নির্বাচনের জন্য করি না। রাজনীতি করি নেক্সট জেনারেশনের (পরবর্তী প্রজন্ম) জন্যও। কাজেই তাদের সুবিধা-অসুবিধা চোখের ভাষা মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করি।’ ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে পাঠিয়েছেন তাদের সঙ্গে বসতে। তাদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি। বিদ্যমান যে কোটা পদ্ধতি এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ ব্যাপারে একটা সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে’-বলেন সেতুমন্ত্রী। ভিসির বাসভবনে তাণ্ডব প্রসঙ্গ তিনি বলেন, ‘রবিবার একটা সহিংসতা হয়ে গেছে। ভিসির বাড়িতে তাণ্ডব চলেছে। এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি পেতেই হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এমন কাজ করতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কোটা সংস্কারের সঙ্গে ভিসির কোনও সম্পর্ক নেই জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এর সঙ্গে ভিসির কি সম্পর্ক, শিক্ষার্থীদের এই প্রশ্ন করেছি। শাহবাগে সহিংসতার সময় যারা আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা করবো। কোনও কার্পণ্য থাকবে না।’আন্দোলন-অবরোধে জনদুর্ভোগের প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ কী দোষ করেছে? আন্দোলনকারীদের বলেছি- হাইওয়ে বন্ধ করে অবরোধ করলে হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়ে। তাদেরই স্বজন এরা।’ এদিকে কোটা সংস্কার নিয়ে চলমান আন্দোলন থমথমে থাকার পর সোমবার দুপুরের দিকে ফের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারী ক্যাম্পাস থেকে শাহবাগের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পরে আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে মিছিল করেন। এছাড়া রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা।দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে টিএসসিতে জড়ো হতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। দুপুর পৌনে ২টার দিকে টিএসসির সামনে থেকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের টিয়ার শেলের জবাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল মারতে শুরু করে। কোটা সংস্কার নিয়ে চলমান আন্দোলনে আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি না দিলে সারা দেশে দাবানল ছড়িয়ে পড়বে বলেও হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারী সংগঠনের নেতারা। এর আগে গতকাল রবিবার রাতে ৮টার দিকে শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে টিএসসি ও চারুকলার সামনে অবস্থান নিলে পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফায় তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহত অন্তত ৩৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া ১১ পুলিশসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী বিএসএমএমইউ এবং বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। উল্লেখ্য, সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ বিভিন্ন কোটার প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। আন্দোলকারীদের দাবি, ১০ শতাংশের বেশি কোটায় নিয়োগ দেয়া যাবে না। কোটা পদ্ধতির এই সংস্কারের দাবিতে গত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’।সবশেষ গত ১৪ মার্চ তারা ৫ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিতে সচিবালয় অভিমুখে যেতে চাইলে পুলিশি ধরপাকড় ও আটকের শিকার হন শিক্ষার্থীরা। তারপর নানা কর্মসূচি পালনের পর গতকাল রবিবার (৮ এপ্রিল) দুপুর থেকে সারা দেশে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শাহবাগে অবস্থান নিতে থাকে শিক্ষার্থীরা। রাত ৮টার পর পুরো শাহবাগ এলাকা পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *